জাতীয় শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখাকে খুবই ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা হবে আনন্দময়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবে না পরীক্ষাভীতি। যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ধাপে ধাপে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছানোর একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কোচিং ও গাইড বাণিজ্য বন্ধ হবে, মুখস্থনির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে প্রায়োগিক শিক্ষা গুরুত্ব পাবে। শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার্থী হয়ে গড়ে উঠবে। সোমাবার মোবাইল ফোনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের জন্য আমি শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেই। এ দুজনই খুবই গতিশীল। তারা ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কাজটি করেছেন। তাদের এ উদ্যোগের ফলে একটা সমন্বিত শিক্ষা পাঠ্যক্রম আমরা পেয়েছি। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার কারণে টিউশন বাণিজ্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই দুটি পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ছেলেমেয়েদের ওপর। এতে গাইড বই, নোট বই ও কোচিং বাণ্যিজের একটি বড় সিন্ডিকেট দাঁড়িয়ে যায়। আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা মানুষজনের কারণে সব সুন্দর পরিকল্পনা ভেস্তে যেত। বর্তমান মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বিষয়টি খুবই ভালো বুঝেছেন। এটা দুজন মিলে এই চক্র থেকে শিক্ষাকে বের করে নিয়ে আসছেন। আমি খুব আনন্দিত হয়েছি প্রধানমন্ত্রী এটার অনুমোদন দিলেন। এখন আর কোনো বাধা থাকল না।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও আনন্দময় পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বিষয় এবং পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমবে। মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখন অগ্রাধিকার পাবে। গুরুত্ব দেওয়া হবে গভীর শিখনের বিষয়ে। দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষা হবে জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সম্পকির্ত। যেখানে সনদপ্রাপ্তির চেয়ে পারদর্শিতা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হবে। এতে বাড়ির কাজের চাপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাস্তবায়নের দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীর মাঝে সমস্যা খোঁজার পরিবর্তে শিক্ষাব্যবস্থা এবং কাঠামোর প্রতিবন্ধকতাকে শনাক্ত ও দুরীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। এজন্য এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। এজন্য সবার শুরুতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। বাড়াতে হবে শিক্ষকদের বেতন। তাহলে ভালো শিক্ষক পাওয়া যাবে। এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভৌত ও আইটি অবকাঠামো যুগোপযোগী করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ক্ষমতায়ন ও অর্থায়নে মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষকের ক্ষমতায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, পাঠ্যক্রম যেটা তৈরি হয়েছে, এর পেছনে যারা কাজ করেছে তাদের প্রত্যেককে আমার অভিনন্দন ও ধন্যবাদ। আমাদের দেশের বাস্তবতায় তারা সুন্দর, সুসমন্বিত ও সুচিন্তিত একটি পাঠক্রম তৈরি করেছে। আমি বলছি না এটা দিয়ে আমরা আমেরিকার মতো হয়ে গেলাম বা এমন কিছু। কিন্তু যেই স্পিরিট আমি দেখছি, সেটা আমেরিকান স্পিরিট থেকে দূরে হবে না। আমার মনে হয়, আমরা এভাবে শুরু করছি, হয়তো প্রতিবছর এটা নিয়ে আবার চিন্তা হবে। ২০২৩ সালের পর পরীক্ষার পরিবর্তে আমরা কী করতে পারি, সেগুলোও আসবে। একটার পর একটা বাস্তবতা যখন দেখা দেবে, তখন এর সঙ্গে চিন্তা করেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে। সেভাবেই তৈরি হতে হবে।
সূত্র : ১৪ সেপ্টেম্বর, দৈনিক যুগান্তর