মুজিব দর্শন ও শিক্ষা সরকারিকরণ - দৈনিকশিক্ষা

মুজিব দর্শন ও শিক্ষা সরকারিকরণ

এম. আরিফুজ্জামান |

‘মুজিব’ শুধুমাত্র একটি শব্দ কিংবা একটি নাম নয়, মুজিব একটি দর্শন। এই দর্শন চর্চার বিষয়, চিন্তায় ও মননে প্রোথিত রাখার বিষয়। এই দর্শন ধারণ করে দল-মত নির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেকের দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করার বিষয়।

তিনি আমাদের মাঝে নেই, আছে তার কর্ম। মাত্র ৫৫ বছরের ছোট্ট জীবনে ১১ বছরেরও বেশি সময় বন্দি জীবনে থাকা বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এ মহান ব্যক্তিটি, আগেভাগেই ঠিক করে রেখেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হলে শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি কী করবেন। তার প্রমাণ মেলে পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই শিক্ষাক্ষেত্রে তার বিভিন্ন উদ্যোগের সমারোহে।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করা যাবে না; টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্যই ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনী বক্তৃতায় তিনি শিক্ষায় বিনিয়োগকে সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সংবিধান প্রণয়নের পরই বঙ্গবন্ধু হাত দিয়েছিলেন শিক্ষার মূলে; প্রাথমিক শিক্ষার সংস্কার আর উন্নয়নে। তিনি বুঝেছিলেন, তখনকার সময়ে আশি ভাগ নিরক্ষর মানুষ, শিক্ষাবঞ্চিত অর্ধেকের বেশি শিশুকে নিয়ে এ দেশের উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। তাই তো তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণ করেছিলেন।

৩৭ হাজার প্রাথমিক স্কুল হল সরকারি স্কুল, সব শিক্ষক হলেন সরকারি শিক্ষক। এ দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত তিনিই প্রথম বাড়িয়েছিলেন। একইসঙ্গে স্থাপন করেছিলেন এগারো হাজার নতুন প্রাথমিক স্কুল। ফলে সব শ্রেণির মানুষের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর গণমুখী উদ্যোগে।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের আলোকে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে গঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা কমিশন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং তারই চিন্তাচেতনায় গঠিত কুদরত এ খুদা কমিশন জাতিকে উপহার দিয়েছিল এমন একটি প্রতিবেদন, যার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল এ জাতির প্রত্যাশা আর বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাভাবনা।

সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এ জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে শিক্ষিত করে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন অনেক বেশি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যদি না ঘটত আর পঁচাত্তর-পরবর্তী অগণতান্ত্রিক সামরিক সরকার যদি বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে গঠিত খুদা কমিশন বাতিল করে না দিতো এবং দেশটাকে পাকিস্তানের ভাবাদর্শের জিঞ্জিরে নিক্ষিপ্ত করার অপপ্রয়াস না নিতো, তাহলে বাংলাদেশকে কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হতো না।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধুর সেই দর্শনকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে সম্মুখ পানে। সততা, নৈতিকতা আর সামাজিক মূল্যবোধের আলোকমণ্ডিত শিক্ষায় দেশের সব নাগরিককে আলোকিত করে তুলতে পারলেই আদর্শ জাতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

দারিদ্র্যের বৃত্ত থেকে বের হয়ে দেশের সকল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা- এসবই ছিলো জাতির পিতার শিক্ষা দর্শন। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে আমরা শিক্ষার উন্নয়নের যে সুফল ভোগ করছি, তার ভিত্তিটা কিন্তু সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন, ভিশনারি নেতৃত্ব গুণে মঞ্জুরিত দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। পিতার মতোই সাহসী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গুণে তার হাত ধরেই ইতোমধ্যে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় একসাথে সরকারিকরণ হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের ব্যাপারেও তিনি ইতোমধ্যে চিন্তা ভাবনা করেছেন। মুজিব বর্ষেই এ ঘোষণার মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকুক দেশের ইতিহাসের পাতায়।

শোকাহত এই আগস্টে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই স্বপ্নদ্রষ্টাকে। প্রত্যাশা করছি, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা ও শিক্ষা দর্শনের আলোকে গড়ে উঠুক এক উন্নত সোনার বাংলা।

লেখক : এম. আরিফুজ্জামান, সহকারী শিক্ষক, ইন্দুরকানী মেহেউদ্দিন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.023177146911621