গুলশানের যে ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে ছয়টি ডায়েরি পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। মুনিয়ার ৬টি ডায়রিতে কী লেখা আছে-পুলিশ তা যাচাই করছে ।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের প্ররোচনায় এই তরুণী আত্মহত্যা করেছেন অভিযোগ করে তার পরিবার ইতোমধ্যে থানায় মামলা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন : দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
দৈনিক শিক্ষা পরিবারের নতুন সদস্য ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদিকদের বলেন, ওই তরুণীর মৃহদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধারের সাথে ৬টি ডায়েরি পাওয়া যায়। এসব ডায়েরিতে কী লেখা আছে, তা যাচাই করা হচ্ছে।
পরিবারের মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। আর ওই বাসায় আনভীরের যাতায়াত ছিল। তবে এসব বিষয়ে সায়েম সোবহানের কোনো বক্তব্য কোনো গণমাধ্যমই পায়নি।
কী ঝামেলায় পড়েছিল কলেজ ছাত্রী মোসারাত, নানা রহস্য
ছাত্রীর লাশ, বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ বলেন, ওই ফ্ল্যাটে তরুণী একা থাকার কথা বলা হলেও কে কে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকত, সে জন্য ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ডায়েরির সাথে সেগুলো যাচাই চলছে।
মুনিয়ার মৃত্যু কী আত্মহত্যা, তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।
উপকমিশনার সুদীপ বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য। আপাতত হ্যাংগিং মনে হলেও প্রতিবেদন থেকে জানা যাবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই তদন্তের গতি নির্ধারণ হবে। এখন আমরা এভিডেন্স কালেকশন করছি।
‘কলেজ ছাত্রী মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর মুনিয়ার লাশ কুমিল্লায় নিয়ে মঙ্গলবারই দাফন করেছেন স্বজনরা।
সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান-২ এর ১২০ নম্বর রোডের ওই ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাত দেড়টার দিকে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান।
লাখ টাকার ভাড়া ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন সেই ছাত্রী
কুমিল্লায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় মুনিয়া
মুনিয়া ঢাকার একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লায়; পরিবার সেখানেই থাকে। তিনি ঢাকায় একাই থাকতেন গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে।
উপ-কমিশনার সুদীপ বলেন, গত ১ মার্চ মুনিয়া ওই ফ্ল্যাটে উঠে। সব মিলে ১ লাখ ১১ হাজার টাকার ভাড়ার চুক্তি হয়েছিল বাড়িওয়ালার সঙ্গে। মুনিয়ার বোন এবং ভগ্নিপতি ব্যাংকার হওয়ায় বাড়িওয়ালী ভাড়া দিতে রাজি হয়েছিলেন।
‘আসামি সায়েমকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই’
ফেসবুকে ছবি আপলোড করাই কাল হয়েছে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার
পুলিশের আবেদনে ইতোমধ্যে সায়েম সোবহানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। তবে তিনি আদৌ দেশে আছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
নিহতের বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ জানান, দীর্ঘদিন নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলেও মুনিয়া আত্মহত্যা করতে পারে এটা মনে হয় না। ঘটনাটি রহস্যজনক বলেই মনে হয়।
মুনিয়ার জানাজা শেষে স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, মুনিয়ার বাবা প্রয়াত মো. শফিকুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা। দীর্ঘদিন ভাই আশিকুর রহমান সবুজের সাথে মুনিয়া ও তানিয়ার পারিবারিক বিরোধ চলছিল, যে কারণে কুমিল্লায় নিজ বাসায় তাদের যাতায়াত কম ছিল।
এর আগে সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ভাড়া বাসা থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। গতমাসে ওই বাসা ভাড়া নেন তিনি। তার ওই বাসায় এক শিল্পপতি প্রায়ই যাতায়াত করতেন। পরে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গভীর রাতে শিল্পপতিকে আসামি করে মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন।