মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই হওয়া উচিত - দৈনিকশিক্ষা

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই হওয়া উচিত

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নাকি পুরো সিলেবাসে- তা নিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা এক ধরণের দ্বিধান্বিত অবস্থায় আছেন। এ পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে তাদের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে । সম্প্রতি বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল প্রণীত ‘মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২২’ এর ধারা ৩.৩ অনুসারে ‘এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী’ এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হলেও স্পষ্টভাবে সংক্ষিপ্ত বা পুরো সিলেবাসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তাই, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা চরম বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

করোনা মহামারির কারণে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নীতিমালার ওই ধারা অনুযায়ী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই হওয়া উচিত। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর মতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীরা যে সিলেবাসে বোর্ড পরীক্ষা দিয়েছে (অর্থাৎ শর্ট সিলেবাস) সেই সিলেবাসেই হওয়া উচিত। বোর্ড পরীক্ষা শেষে এবং ফল প্রকাশিত হওয়ার পর মন্ত্রী একাধিকবার এ বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সব ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ (চুয়েট,কুয়েট ও রুয়েট), জিএসটি গুচ্ছ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়), এমআইএসটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১ এপ্রিল। সব ভর্তি পরীক্ষার আগে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অথচ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতেও কোন সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তা পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়নি।

বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল থেকে গণমাধ্যমে বিভিন্ন বক্তব্য প্রচারিত হলেও এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পাননি ভর্তিচ্ছুরা। অপরদিকে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে এক প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ ও হতাশা কাজ করছে। অপরদিকে পুরো সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা হলে, স্বল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পুরো প্রস্তুতি নেয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হবে। একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষাথীদের বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার (ইঞ্জিনিয়ারিং,মেডিকেল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়) সিলেবাসের মধ্যেও সমন্বয় থাকা উচিত। কারণ ভর্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীই একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। তাই, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আর মেডিকেল যদি পুরো সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেয় তাহলে ভিন্ন সিলেবাসের মধ্যে সমন্বয় রাখতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটবে এবং তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। ফলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে ‘২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষা হয়নি তারপরও  মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ফুল সিলেবাসে হয়েছে। আর এবছর যেহেতু বোর্ড পরীক্ষা হয়েছে তাই ফুল সিলেবাসে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হবে।’

২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বোর্ড পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল। সে বছর ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরে, মহামারির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা প্রায় এক বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় পেয়েছিলেন। আর সেখানে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি উত্তীর্ণরা সময় পাচ্ছেন মাত্র তিন মাস। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আয়োজনের কথা পরীক্ষার বেশ আগেই ঘোষণা করেছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই তখন থেকেই কলেজগুলোতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী অনলাইন ক্লাস চালায় এবং এসময় শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অধ্যায়গুলোর ওপর দেয়া অ্যাসাইনমেন্ট করেছে। শিক্ষার্থীরা সশরীরে তেমন কোনো ক্লাসই করতে পারেনি , যতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছে তাও অনলাইনে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সর্বমোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা , রসায়নবিদ্যা ও জীববিজ্ঞান থেকে যথাক্রমে ২০,২৫ ও ৩০ নম্বরের প্রশ্ন এসে থাকে। অবশিষ্ট প্রশ্নগুলো ইংরেজি (১৫) ও সাধারণ জ্ঞান (১০) থেকে করা হয়। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ প্রশ্নই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো থেকে করা হয় যেগুলো পাঠ্যপুস্তক হতে বুঝে পড়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এবং শিক্ষকদের সহায়তার প্রয়োজন হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। সেখানে ভর্তি পরীক্ষা যদি এমন সিলেবাসে হয় যার বেশকিছু অংশ একজন শিক্ষার্থীকে কোনোদিন পড়ানোই হয়নি তাহলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি বৈষম্য তৈরি হবে। বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য প্রতীয়মান। তারা সিলেবাস সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে মূলত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ওপরই নির্ভর করে থাকে। বিগত বছরগুলোতে দেখা যায় এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এ ধরণের কোনো প্রকার বৈষম্য ছাড়াই পদার্থবিদ্যা , রসায়নবিদ্যা ও জীববিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অধ্যায়গুলো থেকেই কিন্তু পর্যাপ্তসংখ্যক মানসম্মত প্রশ্ন প্রণয়নের মাধ্যমে যোগ্যদের বাছাই করে আনা সম্ভব।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৪ হাজার ৩৫০ টি আসনের বিপরীতে এক লাখের বেশি পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেকেন্ড টাইমাররাও (পূর্ববর্তী এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা) অংশগ্রহণ করে থাকে। তাই ফুল সিলেবাসে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পুরো সিলেবাসে প্রস্তুতি নেয়া সেকেন্ড টাইমার ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রস্তুতি নেয়া ফার্স্ট টাইমারদের মধ্যেও এক ধরনের দৃশ্যমান বৈষম্য তৈরি হবে। কারণ সেকেন্ড টাইমাররা দীর্ঘদিন ধরে ফুল সিলেবাসে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতার কারণে বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থায় এবং সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে । এ পরিস্থিতিতে আমাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই এই মুহুর্তে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়, যাতে করে সামগ্রিকভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নের সম্মুখীন হয় এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হয়। প্রকৃত মেধাবি শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবেই পরিস্থিতির স্বীকার না হয় বরং সঠিক এবং যথোপযুক্ত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে তাদের উচ্চ শিক্ষাজীবনের সূচনা করতে পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032229423522949