যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসার নামে মানবপাচার চলছে। এ ছাড়া এখানে শিক্ষার্থীরা এসে আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছেন বলেও সম্প্রতি এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গ্যাংমাস্টারস অ্যান্ড লেবার অ্যাবিউজ অথরিটির (জিএলএএ) একটি প্রতিবেদনে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। সম্প্রতি এমন গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানবপাচারের বিরুদ্ধে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি গ্রিনউইচ, চেস্টার এবং টিসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ছাত্ররা যুক্তরাজ্যে আসার পরপরই ক্যাম্পাসে আসা বন্ধ করে দেন। এ ছাত্রদের পরবর্তীতে ওয়েলসের কেয়ার সেক্টরে পাওয়া যায়। সেখানে তারা তিন শয্যার একটি ফ্ল্যাটে ১২ জন লোকের সাথে অসহায় অবস্থায় বসবাস করছিলেন। তাদের সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা পর্যন্ত, কখনো কখনো ডাবল শিফটে কাজ করতে হয়। তাদের মজুরিও সর্বনিম্ন।
পর্যবেক্ষকের তদন্তে ব্রিটেনজুড়ে কেয়ার হোমে ব্যাপক শ্রম শোষণের বিষয়টি উন্মোচন হওয়ার পর জানা গেছে- ভারত, ফিলিপাইন এবং আফ্রিকার দেশগুলোর শ্রমিকদের কাছ থেকে অবৈধ নিয়োগ ফি হিসেবে ১৮ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত চার্জ করা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে তাদের শর্তে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনকি পাওনা টাকা শোধ করার জন্য ঋণ-বন্ধনের মতো তাদের মজুরি আটকানো এবং পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক ভুক্তভোগী তাদের পরিস্থিতি নিয়ে হোম অফিসে যোগাযোগ করেছে।
এদিকে সংস্থাটি আরও জানায়, ব্রিটেনে আগত এ শ্রমিকদের মাত্র ১৬ ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের অপরাধমূলক ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়নি। এর ফলে বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী বাসিন্দাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এমনকি কেয়ার হোমগুলো তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু জানত না। এজেন্টরা তাদের ভুয়া তথ্য দিয়েছিল।
এই শ্রম শোষণের ওপর গবেষণা ব্যবস্থাপক মেরি আহ্লবার্গ বলেন, শ্রমের ঘাটতির কারণে ব্রিটেনে ছাত্র ভিসায় লোকদের অপব্যবহার একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ। এই অবস্থায় ছাত্র ভিসার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংস্থাটি বলছে, আধুনিক দাসত্বের লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে শিক্ষার্থীদের আবেদন, উপস্থিতি এবং ফি প্রদানের নিরীক্ষণ করতে হবে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আধুনিক দাসত্ব গবেষকদের দল ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম রাইটস ল্যাব বলছে, বর্ধিত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ব্রিটেনের মাত্র ৭.৭ পারসেন্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।