ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের দক্ষতা (টোয়িক) শীর্ষক পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে যুক্তরাজ্য ২০১৪ সালে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী ও অন্য অভিবাসীদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের ইস্যুটি নতুন করে সামনে এনেছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। গত মঙ্গলবার পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমপি) এ ইস্যুতে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্তের দাবি তুলেছেন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি ২০১৪ সালের প্রথম দিকে টিওইআইসি (টেস্ট অফ ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন) পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এ প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমের এমন প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পরবর্তী দুই বছরে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৮ হাজারের বেশি ভিসা প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করে। এ অভিযোগের জেরে চার হাজার ৬০০ জনের বেশি অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখনো অনেক অভিবাসী এ অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। টিওইআইসি জালিয়াতির অভিযোগের জেরে হাজার হাজার অভিবাসীর ভোগান্তির বিষয়টি গত মঙ্গলবার নতুন করে তুলে ধরেন ব্রিটিশ এমপিরা।
লেবার দলীয় এমপি ওয়েস স্ট্রিটিং এদিন পার্লামেন্টে বিতর্কের সময় টিওইআইসি জালিয়াতির ইস্যুকে ‘ব্রিটেনের বিস্মৃত অভিবাসন কলঙ্ক’ অভিহিত করেন। তাঁর অভিযোগ, যাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের ফের টিওইআইসি পরীক্ষা দেওয়া, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করা কিংবা যুক্তরাজ্যের ভেতরে থেকে অভিযোগের বিরুদ্ধে আবেদন করা—এ রকম কোনো সুযোগ না দিয়েই ব্রিটিশ সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের এ পদক্ষেপ বেআইনি বলে দাবি করেন এমপি স্ট্রিটিং। তিনি আরো বলেন, সরকারের এ পদক্ষেপ ‘বিশ্বজুড়ে আমাদের দেশকে লজ্জায়’ ফেলে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ব্রিটেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। ২০১৪ সালের ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ওই তিনটি দেশের অনেক রয়েছে।
লেবার নেতা স্ট্রিটিংসহ অন্য এমপিদের অভিযোগের জবাবে অভিবাসনমন্ত্রী ক্যারোলাইন নোকস জানান, বিবিসির প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার ‘ত্বরিত ও দৃঢ়’ পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং গৃহীত সব পদক্ষেপ ছিল ‘সঠিক ও যুক্তিসংগত’। জালিয়াতির অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা অব্যাহতি পেয়েছে, তাদের কোনো রকম ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার প্রসঙ্গে নোকস দায় সারেন এই বলে, ‘ব্যাপক জালিয়াতির মধ্যে যেসব নিরপরাধ প্রার্থী ক্ষতির শিকার হয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’
অভিবাসনমন্ত্রীর এসব জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এমপিরা। অসন্তুষ্ট এমপিদের মধ্যে লেবার নেতা লিন ব্রাউন দাবি তোলেন, যেসব অভিবাসীর বিরুদ্ধে ভুল করে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন ক্ষমা চায় এবং এ ‘অন্যায় ও অবিচারের’ কথা যেন স্বীকার করে নেয়। সূত্র : সিএনএন।