যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হওয়ায় কমলা হ্যারিস হলেন দেশটির প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট। একই পরিচয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন পেয়েও ইতিহাসে নাম লেখান কমলা। অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হওয়ায় তার রানিংমেট মাইক পেন্স ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলেন না। টানা দ্বিতীয় দফায় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে জয়ী হতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। খবর বিবিসি, এএফপি ও সিএনএনের
নির্বাচিত হওয়ার খবর নিশ্চিতের পর এক টুইট বার্তায় কমলা হ্যারিস বলেন, এই নির্বাচন আমার বা জো বাইডেনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আত্মা ও আমাদের লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের সামনে অনেক কাজ পড়ে আছে। চলুন, আমরা শুরু করি। কমলার স্বামী আইনজীবী ডগলাস এমহফ স্ত্রীর জয়ের প্রতিক্রিয়ায় দু'জনের ছবিযুক্ত টুইট করে বলেন, 'কমলা, তোমার জন্য আমি গর্বিত।'
এর আগে কমলা হ্যারিস নিজেই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম দিকের বিতর্কগুলোয় ভালো করার পর তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রথম কাতারেও চলে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবৈষম্যের ব্যাপারে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের টিভি বিতর্কে জো বাইডেনকেও তিনি প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে ছাড়েননি। তবে গত বছরের শেষদিকে এসে মনোনয়ন পাওয়ার যুদ্ধ কমলাকে হতাশ করেছিল, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনই এগিয়ে যান। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কমলা প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, অভিজ্ঞ ও কড়া মনোভাবের জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রথম দিন থেকেই ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাতে প্রস্তুত।
৫৪ বছর বয়সী কমলা হ্যারিসের বাবা ডোনাল্ড জে হ্যারিস একজন জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক। মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্যামলা গোপালন ক্যান্সার গবেষক ও নাগরিক অধিকারকর্মী। কমলার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওকল্যান্ডে।
কমলার মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি ও তার বোন মায়াকে লালনপালন করেন প্রধানত শ্যামলা গোপালন একাই। কমলা ভারতীয় হিন্দু ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েই বড় হন, মায়ের সঙ্গে ভারতে বেড়াতেও যান তিনি। কমলা হ্যারিস বলেন, তার মা ওকল্যান্ডের কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছিলেন এবং তার মধ্যেই তার দুই মেয়েকে বেড়ে উঠতে দিয়েছেন।
কমলা হ্যারিস তার আত্মজীবনী 'দ্য ট্রুথস উই হোল্ড'-এ লিখেছেন: আমার মা খুব ভালো করেই বুঝেছিলেন যে তিনি দুটি কৃষ্ণাঙ্গ কন্যাসন্তানকে বড় করছেন। তিনি জানতেন, যে দেশকে তিনি স্বদেশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেখানে মায়া এবং আমাকে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে হিসেবেই দেখা হবে। আর তাই আমরা যেন আত্মবিশ্বাসী ও গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বেড়ে উঠি, তা তিনি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। গোপালন কিছুকাল কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে কমলা ও মায়া পাঁচ বছর মন্ট্রিয়লেও ছিলেন এবং সেখানকার স্কুলে পড়েছেন।
কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিকভাবেই কৃষ্ণাঙ্গদের প্রধান কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম ছিল। তিনি আইনের ডিগ্রি নেন হেস্টিংসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এবং কাজ শুরু করেন আইনজীবী হিসেবে। পরে তিনি প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হন এবং দু'বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালে বিয়ে করেন আইনজীবী ডগলাস এমহফকে এবং এখন তিনি দুটি সন্তানের বিমাতা। কমলা ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র সিনেটর নির্বাচিত হন। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন কড়া সমালোচক। কমলা হ্যারিস প্রায়ই বলেন, তার আত্মপরিচয়ই তাকে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত করে তুলেছে। তিনি মনে করেন, নারীরা যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য, এটা স্পষ্ট করার জন্য এখনও অনেক কাজ করতে হবে।
এ বছর নির্বাচনে ট্রাম্প লড়েছিলেন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য। আগেরবারের মতো এবারও তার রানিংমেট হন মাইক পেন্স। বলা হয়, ইন্ডিয়ানা রাজ্যের কলম্বাস শহরে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম নেওয়া পেন্স গত চার বছরে হোয়াইট হাউসে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।