যোগ‌্যতার ভিত্তিতে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন - দৈনিকশিক্ষা

যোগ‌্যতার ভিত্তিতে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন

হুমায়ুন কবির |

‘নতুন ভোর, নতুন দিন, প্রথম আলো রঙিন আকাশের সীমানায়/ ডানা মেলে পাখি ওড়ে তার আঁখির ভাবনায়।’ ঠিক তেমনি কিছু মানুষের ইচ্ছাকুসুম ফুটে ওঠে সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা অবধি। তারাই হলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক।প্রত্যাশার ঝুলি নিয়ে স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ান, নিঃস্বার্থভাবে ছাত্রদের কথা ভাবার পাশাপাশি পরম স্নেহে এ শিক্ষাদেন যে, ‘স্বপ্নের সীমানাটা কিভাবে বড় করতে হয়!’ এখানেই তাদের পরিচিতি সীমাবদ্ধ নয়। পাশাপাশি সরকারের বহুমাত্রিক কর্ম সম্পাদনে নিজেদেরকে ছড়িয়ে দেন প্রকৃতির মতোন আমাদের সামাজিকতার বহুমাত্রিক অঙ্গে আর অঙ্গনে! চূড়ান্ত ব্যস্ততার ভিড়ে ও তারা যেন সৃজনের কারক ও ধারক, এটাই তাদের কর্মের ধর্ম।

যে কোনো পর্যায়ের শিক্ষকতার চেয়ে প্রাথমিকে শিক্ষকতা কঠিন। স্পর্শকাতর ও কোমলমতি শিশুদের বুঝে শেখাতে হয়। সর্বোচ্চ যত্ন ও সতর্কতায় তাদের মনন, মানস ও মস্তিষ্কে বীজ বপনের ফসল হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগরণ ঘটে। বিধায় সময়ের পরিক্রমায় তারাই হয়ে ওঠেন সভ্যতার কর্ণধার।

জাতির পিতা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, ভবনের নিচের পিলার যত মজবুত করা যায়-ছাদের উচ্চতা তত বৃদ্ধি পায়। তাই তার সুচিন্তিত ভাবনায় প্রাথমিকের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের বেতন ছিলো একই গ্রেডে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার জ্বালানো প্রদীপ শিখার আলোকে আলোকিত হয়ে দেশ বিনির্মাণের প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা।

জন্মলগ্নে এদেশের অবস্থা দারিদ্র্যসীমার অনেক নীচে থাকলেও সে অবস্থা আজ অতীতের স্মৃতিমাত্র। গত দুই দশকে বঙ্গবন্ধুর ভাবাদর্শের প্রত্যাবর্তন এবং সার্বিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের যে রূপ ধারণ করেছে-তাকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে মূলত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সময়ের দাবি। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ আর্থার শুলজের মতে, ‘প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করা সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে ২০ শতাংশ আর উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ।’ উচ্চ বেতন, পেশার স্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদার কারণে উন্নত বিশ্বে প্রাথমিকে শিক্ষকতায় মেধাবীরা আকৃষ্ট। কিন্তু এদেশের প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা যুগ যুগ ধরে দরিদ্র আর বঞ্চনার শিকার। তাদের ভরণ-পোষণের যে ব্যবস্থা, তা যৎসামান্য। এতে কষ্টে- ক্লিষ্টে সংসার চললেও, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগানো দায় হয়ে পড়ে। দুশ্চিন্তা আর দুর্বিষহ জীবন তাদের নিত্য সঙ্গী।

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায় সমযোগ্যতা (স্নাতক),  কারিকুলাম, সিলেবাস ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১০ম (দ্বিতীয় শ্রেণি) আর প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩ তম (তৃতীয় শ্রেণি)। সহকারী শিক্ষকদের ভাবনার কুপিতে তেল পড়েছে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বৈষম্য নিরসন কমিটিতে যখন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বৈষম্যের সন্তোষজনক সমাধান হলেও, প্রাথমিক সহকারীদের আবেদন আলোর মুখ দেখেনি। অষ্টম শ্রেণি পাস ড্রাইভারদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করায় এখন শুধু তাতে আগুন জ্বলল। সে আগুনের আলোয় সহকারীদের ভবিষ্যতের পথটা দৃশ্যমান। অনিশ্চিত, বন্ধুর এবং হতাশার ডালপালায় আচ্ছন্ন সেই পথ।

স্নাতক যোগ্যতায় অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে এখন ১০ম গ্রেড বিদ্যমান। যেমন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, প্রদর্শক-কলেজ, সহকারী গ্রন্থাগারিক বা ক্যাটালগার, পুলিশের এস আই, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইত্যাদি।

এইচএসসি পরবর্তী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং যোগ্যতায় ১০ম গ্রেডে রয়েছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স বা স্টাফ নার্সরা।
এছাড়াও এসএসসি পরবর্তী কৃষি ডিপ্লোমা যোগ্যতায় ১০ম গ্রেডে রয়েছেন উপসহকারী (কৃষি কর্মকর্তা, উদ্যান কর্মকর্তা, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রশিক্ষক, সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা)।

কেন জানি মনে হয়, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষককে বাদ দেওয়া হয়েছে মেরুদণ্ড গড়ার কাজ থেকে। সরকারি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে তো কখনও দাবি আদায়ে শহীদ মিনারে যেতে দেখি না। প্রচলিত ভাষ্য অনুযায়ী-- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা সংখ্যার বিচারে বেশি। কিন্তু অলক্ষ্যে থেকে যায়, তাদের সেবার পরিমাণও যে বেশি। সরকারি স্টাফ পরিচয়ে, সংখ্যার আয়তনে, কেউ বেশি, কেউ কম হতে পারেন, তাই বলে তাদের প্রতি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সুনজরের অভাবে বৈষম্যে রাখা অসঙ্গত। আর্থিক অক্ষমতার দোহাই নয় বরং জাতি গঠনের এই আঁতুড়ঘরগুলোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা অপরিহার্য। শিক্ষকদের শিক্ষাবান্ধব তথা শিক্ষাসহায়ক পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ ও সুফল বয়ে আনবে না। ভারতের সঙ্গে এদেশের জিডিপির পার্থক্য আকাশচুম্বী না হলেও শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পার্থক্য এভারেস্ট সমান।

শিক্ষার স্বার্থে শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে শিক্ষকদের পাশাপাশি মিডিয়া, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত। সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক তথা জনমনের দাবিসমূহেরই সার্বিক প্রত্যাশা।


লেখক : সহকারী শিক্ষক, কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, ময়মনসিংহ

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033509731292725