যৌতুক প্রথা টেকসই সমাজ বিনির্মাণে বাধা - দৈনিকশিক্ষা

যৌতুক প্রথা টেকসই সমাজ বিনির্মাণে বাধা

অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন |

যৌতুক আদান প্রদানের বিষয়টি আমাদের সমাজে এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে, কন্যা দায়গ্রস্ত অনেক বাবাই আজ যৌতুক দিয়ে তার কন্যার দায় থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা করছেন। দরিদ্র ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে যৌতুকের ভয়াবহ থাবা তাদের অসহায়ত্বকে আরও প্রকট করছে কারণ আইন সর্ম্পকে অজ্ঞতা, অসচেতনতা, সংসার ভেঙে যাবার আশঙ্কা ইত্যাদি। বিয়ের সময়, আগে বা পরে কন্যাপক্ষ কর্তৃক যে সকল অর্থ, সম্পদ, অলংকার, আসবাবপত্র, বিনোদনমূলক সামগ্রী, চাকুরি, বিদেশে প্রেরণ ইত্যাদি বরপক্ষকে দিয়ে থাকেন তাকেই যৌতুক বলা হয়। আইনের ভাষায় যৌতুক বলতে বিয়ের শর্ত হিসেবে বর বা কনেপক্ষের দাবি-দাওয়াকেই বুঝায়।

বর্তমান সমাজে মেয়ের বাবা অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের সুখের জন্য নিজের সবকিছু বিক্রি করে বরের দাবি পূরণ করছেন। অথচ তিনি জানেন না যে, যৌতুক দিয়ে তিনিও সমান অপরাধ করছেন। সংক্রামক ব্যাধির মতোই যৌতুক রোগ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে গোটা সমাজব্যবস্থাকে ভয়ংকর বিভীষিকার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাত্রকে চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে কিংবা বিদেশে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কন্যাকে পাত্রস্থ করা হয়। বাস্তবিক পক্ষে সেটাও যৌতুক হিসেবে গণ্য হয়। কখনো বা মেয়ের বাবা জামাইকে শ্বশুরবাড়ি যাতায়াতের জন্য গাড়ি কিনে দেন অথবা মেয়ের সুখশান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য বাড়ি বানিয়ে দেন। সেটাও একরকম যৌতুক হিসেবে ধরা হয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রভৃতি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বা সামাজিক বিধানের আওতায় যৌতুক কিংবা মূল্যবান সম্পদ আদান প্রদানের প্রথা থাকলেও প্রচলিত যৌতুক নিরোধ আইনে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের যৌতুক নিরোধ আইনের ৮ নং ধারায় অপরাধটি আপোসযোগ্য ছিল না। সময়ের এই প্রয়োজনে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ নং আইনের দ্বারা অপরাধটি আপোসযোগ্য করা হয় যাতে পক্ষদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক থাকে। 

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

আইনের চোখে নারী-পুরুষ সমান মর্যদার অধিকারী হলেও নারীকে নিম্ন মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত করায় সমাজে যৌতুকপ্রথার বিস্তার ঘটেছে; কন্যাসন্তানের প্রতি পিতা-মাতার অত্যধিক স্নেহের কারণে মেয়ের সুখের জন্য জামাইকে অর্থসম্পদ প্রদান করে যৌতুক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে; কন্যার চেয়ে বর বেশি উপযুক্ত হলে মেয়ের অভিভাবক মোটা অঙ্কের যৌতুক প্রদান করে মেয়েকে পাত্রস্থ করে। গ্রামীণ সমাজে মানুষের ধারণা মেয়েদের বিয়েতে যৌতুকসামগ্রী দিলে স্বামীর বাড়িতে সম্মান নিয়ে সংসার করতে পারেন। পক্ষান্তরে ছেলের বাবা মনে করেন, ছেলেসন্তানকে বড় করে তুলতে অনেক টাকা খরচ হয়। তাই যৌতুক তাদের অধিকার। তাছাড়া যৌতুকের টাকায় সংসারের কিছুটা অভাব ঘুচে যায়। যে কারণে গ্রামীণ সমাজে প্রায় শতভাগ বিয়ে যৌতুকপ্রথা মেনেই সম্পন্ন হয়! এদিকে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, সামাজিক সংগঠনগুলো মনে করছেন, যৌতুক নিলে বা দিলে আত্মসম্মান বাড়ে না, বরং ক্ষুণ্ন হয়। 

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

হিন্দুসমাজে নারীরা পুরুষদের মতো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতো না। তাই অনেক আগে থেকেই হিন্দুসমাজে নারীদেরকে বিয়ের সময়ে যৌতুক দেবার প্রচলন ছিল। কালক্রমে তা বিয়ের পণ হিসাবে আবির্ভূত হয়, যা একসময় কনেপক্ষের জন্য এক কষ্টকর রীতি হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সমাজে যৌতুকের জন্য নারীর প্রতি অসম্মান ও অত্যাচারের অনেক ঘটনা ঘটে। এমনকি যৌতুকের দাবিতে স্বামী বা তার আত্মীয় স্বজনদের দ্বারা অত্যাচারের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। 

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাচীন হিন্দুসমাজে এটি ছিল কন্যাপণ অর্থাৎ বরপক্ষ কনেপক্ষকে দিত। কনেপক্ষ বিয়ের মাধ্যমে তাদের একজন সদস্য হারাচ্ছে, এর ক্ষতিপূরণের জন্য কনের পরিবারকে বরপক্ষ কর্তৃক বিভিন ধরনের সম্পদ দিত। কালক্রমে এটি বরপণে রূপ ধারণ করে। উল্লেখ্য, হিন্দুদের এই কন্যাপণের সাথে ইসলামের মোহরের কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, কন্যাপণ দেয়া হতো ক্ষতিপূরণের জন্য কন্যার পরিবারকে, কন্যাকে নয়। আর মোহর দেয়া হয় কন্যার সম্মানি হিসাবে স্বয়ং কন্যাকে, কন্যার পরিবারকে নয়। 

হিন্দুসমাজের কন্যাপণ কালক্রমে বরপণে রূপান্তরিত হওয়ার পিছনে যেসব কারণ রয়েছে তা হলো : প্রাচীনকালে অনার্যরা সমাজে মর্যাদা পাওয়ার আশায় আর্যদের নিকট তাদের কন্যা সম্পাদন করত, বিনিময়ে মোটা অঙ্কের সম্পদ দিত। তখন থেকেই যৌতুক প্রথা কালক্রমে একটি সামাজিক রূপ নেয়। হিন্দু সমাজের এই শ্রেণিবৈষম্য বা কুলিনত্বের কারণে হিন্দুসমাজে আজো যৌতুক প্রথা বিরাজমান। বিশেষ করে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মাঝে এর প্রচলন বেশি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দেখা যায়, উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণরা প্রচুর যৌতুক পাওয়ার আশায় শতাধিক বিবাহ করত। এসব স্ত্রী তাদের পিতৃগৃহেই থাকত। স্বামীরা বছরে একবার দেখা করতে আসত এবং প্রচুর আতিথ্য গ্রহণ করে যাওয়ার সময় অনেক যৌতুক নিয়ে যেত। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও কুলিনত্বের মর্যাদা লাভ করে। তখন হিন্দুসমাজে একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্ম হয়। তারা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে ডিগ্রি অর্জন করে। এতে চাকুরির বাজারে তাদের দাম বেড়ে যায় এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তখন কন্যাপক্ষ বিভিন্ন উপহার-উপঢৌকন দিয়ে বরপক্ষকে আকর্ষণের চেষ্টা করত। তাদের উপহারের মান ও পরিমাণের উপর নির্ভর করত পাত্রের পিতা-মাতার সন্তুষ্টি। এককথায় এটি দাবি করে নেয়ার পর্যায়ে চলে যায়। 

হিন্দু-আইনের মিতাক্ষরা ও দায়ভাগ উভয় মতবাদের আলোকেই সাধারণত কন্যা তার পিতার সম্পত্তি পায় না। বিশেষ করে দায়ভাগ মতবাদ অনুযায়ী সম্পত্তিতে বিবাহিতা কন্যার অংশিদারিত্ব অনেকটাই অনিশ্চিত। হিন্দুআইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, বা বিধবা থাকতে কন্যা পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ লাভ করতে পারে না এবং অবিবাহিতা কন্যা বিবাহিতা কন্যার উপর প্রাধান্য পায়। কন্যা কখনো এই সম্পত্তি পেলে তা শুধু ভোগের অধিকার থাকে। তাতে স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। হিন্দুআইনে এ সম্পত্তিকে স্ত্রীধন বলা হয় না। নারীর স্ত্রীধন বলতে যে সম্পদে তার স্বত্বও প্রতিষ্ঠিত হয়, আর তা হলো পিতামাতা, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য আত্মীয়ের দান বা যৌতুক। হিন্দুসমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দিক থেকে নির্যাতিত। উত্তরাধিকারের বিষয়েও তারা চরমভাবে বঞ্চিত। বৌদ্ধায়নের শাস্ত্রে লেখা আছে, স্ত্রীলোকেরা বুদ্ধিহীন, তাদের কোনো বিচারশক্তি নেই, তারা উত্তরাধিকার লাভের অযোগ্য। তাই বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়ার নামে তাদের স্ত্রীধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটিই পরবর্তীতে বর্তমান সর্বগ্রাসী যৌতুকের রূপ লাভ করেছে। 

হিন্দুআইনে স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবার অংশগ্রহণ প্রায় অনিশ্চিত। কারণ পুত্র, পৌত্র অথবা প্রপৌত্রের মধ্যে কেউ জীবিত থাকলে বিধবা তার স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির কিছুই পায় না। বিধবার মৃত্যুর পর স্বামী থেকে প্রাপ্ত সম্পদে তার পরবর্তী ওয়ারিশরা উত্তরাধিকার না হয়ে মৃত স্বামীর ওয়ারিশরা উত্তরাধিকার হয়। বিধবার একমাত্র স্ত্রীধন হচ্ছে বিভিন্ন দান ও বিয়ের সময় প্রাপ্ত যৌতুক। ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বিষয়টি এভাবেই বলা হয়েছে। মোট কথা, হিন্দুসমাজের বিভিন্ন রীতিই বর্তমান ভয়াবহ যৌতুক প্রথার উৎপত্তির কারণ। 

১৯ শতক থেকে ২০ শতকের মধ্যে ইউরোপেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু প্রাচীন মুসলিম সামজে যৌতুকের কোনো অস্তিত্ব ছিল বলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না। বিংশ শতকের শুরুতে হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজকে যখন যৌতুকপ্রথা অস্থির করে তুলেছিল তখন মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজ নিশ্চিন্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত ছিল। শুধু তাই নয়, মুসলিম সমাজের মেয়েদের কদরও ছিল অনেক বেশি। দীর্ঘদিন যাবৎ হিন্দুসমাজ ও মুসলিম সমাজ একত্রে বসবাসের কারণে সাম্প্রতিককালে আরো বিভিন্ন কুপ্রথার মতো এই যৌতুকপ্রথাটিও মুসলিম সমাজে সংক্রমিত হয়।

যৌতুকপ্রথার উৎপত্তি হিসাবে ‘কন্যাদান’ অথবা ‘স্ত্রীদান’ নামক বৈদিক যুগের একটি ধর্মীয় রীতিকে গণ্য করা হয়। হিন্দুধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী বিয়ের পর থেকে কন্যার দায়-দায়িত্ব আর পিতার থাকে না, যা কন্যার স্বামীর উপরে বর্তায়। এজন্য বিয়ের সময় পিতা কন্যাদান রীতির মাধ্যমে কন্যার স্বামীকে খুশি হয়ে কিছু উপহার দেন। আবার পিতার উপহার ছাড়া কন্যাদান তথা বিবাহ ধর্মীয়ভাবে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বৈদিক সময়ের সামর্থ্যানুযায়ী দেয়া উপহারই কালানুক্রমে বর্তমানে বাধ্যতামূলক ও সাধ্যাতিরিক্ত যৌতুকে বিবর্তিত হয়েছে। শুরুর দিকে কন্যাদান উচ্চবর্ণের হিন্দু তথা ব্রাহ্মণ সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও তা অনুসরণ করা শুরু করে।


হিন্দুসমাজে ব্রাহ্মণরা পুরোহিত বা পোপের মতো ভূমিকা পালন করে। কন্যার পিতারা ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলেদের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলে সামাজিকভাবে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করতেন। এ সুযোগে উচ্চবর্ণের হিন্দু পরিবারের ছেলেরা ‘কন্যাদান’ মোড়কে উচ্চহারে যৌতুক আদায় করত। এভাবে একসাথে কয়েকটি বিয়ে করে বিরাট সম্পদশালী হওয়ার প্রবণতা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে যৌতুকপ্রথা সমাজে একটি ব্যাধি হিসেবে বিস্তার লাভ করে। অনেক সময় অর্থের লালসায় ছেলের পরিবার ছেলেকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে থাকে। এছাড়াও আমাদের দেশে দারিদ্র্য বা আর্থিক দুরবস্থাও যৌতুকপ্রথা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়াও অশিক্ষা, সামাজিক প্রতিপত্তি ও প্রতিষ্ঠা লাভের মোহ, উচ্চবিলাসী জীবনযাপনের বাসনা ইত্যাদি যৌতুকপ্রথার অন্যতম কারণ।

ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ও বিংশ শতকের শুরুর দিকে বর্ণ-ভিত্তিক যৌতুক প্রথা শিক্ষা-ভিত্তিক যৌতুক প্রথায় রূপ নেয়। সমাজে প্রভাব ও সুখ্যাতি অর্জনে মেয়ের বাবারা জামাইকে বিলেতে পড়ার খরচ বহন করতেন। এভাবে মুসলিম সমাজের ধনী পরিবারে যৌতুক প্রবেশ করে। ধনী সমাজে যৌতুকের সামাজিক চাপ বুঝাতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যৌতুকের বিরুদ্ধে লেখালেখি করা সত্ত্বেও দু’মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। রেনুকা ও মীরার স্বামীদের বিলেতে পড়াশুনার খরচ তাকেই বহন করতে  হয়েছিল।

সমাজ বিজ্ঞানীর মতে হিন্দুসংস্কৃতির প্রভাব বাংলাদেশে যৌতুকপ্রথার বিস্তৃতি ঘটাতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে মুসলিম বিবাহসংক্রান্ত আইন-কানুন পরিবর্তন ও বাকিতে মোহরানা এবং কন্যার বৈবাহিক জীবনের নিশ্চয়তার লক্ষে ‘সিকিউরিটি মানি’ হিসেবে যৌতুক দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। হিন্দুসংস্কৃতি থেকে যৌতুক নামক কনসেপ্ট মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। এখানে কত ভাগ হিন্দু ছিল তা মুখ্য নয়। যৌতুকপ্রথা প্রাতিষ্ঠানিকরণে হিন্দুসমাজের পুরোহিতদের ভূমিকাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। যৌতুক একটি সামাজিক ক্যান্সার। এর বিষক্রিয়ায় আমাদের গোটা সমাজ আক্রান্ত। বর্তমানে যৌতুকপ্রথার ভয়াবহতা বাড়লেও এর প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই। নারীজীবনে এ প্রথা অভিশাপস্বরূপ। যৌতুকের কারণে প্রতিনিয়ত অসংখ্য নারী অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হচ্ছে, অসংখ্য নারীর সুখের সংসার ভেঙে যাচ্ছে, নারীর সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা লাঞ্ছিত হচ্ছে। যৌতুকপ্রথা কেবল নারীকে মর্যাদাহীনই করে না, বরং নারীজাতিকে সম্মানহানির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। 

প্রাচীন যুগের রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন পৌরাণিক চরিত্রের বিয়েতে যৌতুক আদান-প্রদানের ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজা বল্লাল সেনের সময় প্রচলিত কৌলীণ্যপ্রথার ফলে কন্যার পিতাকে বিপুল পরিমাণ অর্থদানের চুক্তিতে কন্যা অরক্ষণীয়া হওয়ার আগেই কুলীন পাত্রে পাত্রস্থ করতে হতো। এছাড়া একটু নিচু বংশের মেয়েকে উঁচু বংশে বিয়ে দিতে হলে পাত্রপক্ষকে প্রচুর অর্থসম্পদ দেয়াটা ছিল তখনকার দিনের নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। এছাড়াও মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্যসহ অন্যান্য কাব্যে যৌতুকপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। তদানীন্তন হিন্দুসমাজে কন্যাকে ১০-১২ বছরের মধ্যে পাত্রস্থ করতে না পারলে পিতা নরকবাসী হবেন বলে ভয় দেখানো হতো। এমনকি সমাজচ্যুত করার বিধিও ছিল। যৌতুকের সূচনা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সূত্রপাত হলেও মুসলিম সমাজের শিরায় শিরায় আজ যৌতুকপ্রথা স্থায়ী আসন দখল করেছে। আমাদের দেশে এ যাবৎ যে সকল কুমারী নারী ও গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে তার শতকরা নব্বই ভাগ কারণ হচ্ছে যৌতুক। ইসলাম ধর্মে যৌতুক আদানপ্রদান একটি গর্হিত কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

জগদীশচন্দ্র গুপ্ত তাঁর ‘পয়োমুখম’ নামক ছোটগল্পটিতে তৎকালীন হিন্দুসমাজে যৌতুকপ্রথার নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। এক সময়, হিন্দুআইনে পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার স্বীকৃত ছিল না। ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে আইন করে পিতার সম্পত্তিতে কন্যার উত্তরাধিকার নিশ্চিত করবার পরও দেখা গেল, যৌতুকপ্রথা লোপ পায়নি। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তো খোদ ভারতেই যৌতুককে ‘বেআইনি’ ঘোষণা করা হয়। মুসলিম সমাজে পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার তো ইসলামি আইনে বরাবরই স্বীকৃত। তাছাড়া, ইসলামে কন্যাপক্ষের কাছ থেকে বরপক্ষের যৌতুক নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষেধ। ইসলামি আইন অনুসারে বিয়ের সময় বরই বরং কনেকে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য। ইসলামি আইন অনুসারে, স্ত্রীর সম্পত্তি বা আয়ের ওপর স্বামীর কোনো অধিকারও নেই। স্ত্রী খুশিমনে স্বামীকে নিজের আয় ভোগ করতে দিলে অবশ্য ভিন্ন কথা। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত যৌতুককে কেন্দ্র করে নারী-নির্যাতনের যে-সব ঘটনা ঘটে সেগুলো ঘটায় মুসলমানরাই। যৌতুককে কেন্দ্র করে নারী-হত্যার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিন।

যৌতুক নিয়ে বিয়ে হওয়ায় অনেক সময়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হয় না। যৌতুকের অর্থের পরিমাণ সামান্য কম হলেই শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মেয়ের উপর নানারকম অসহনীয় অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। প্রতিনিয়ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আবদার মেটাতে গিয়ে অনেক দরিদ্র মেয়ের বাবাই নিঃস্ব হয়। যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পেরে অনেক নারীকেই স্বামীগৃহ ত্যাগ করতে হয়। এছাড়া শারীরিকভাবে অমানবিক নির্যাতনের দ্বারা হত্যা ক’রে আত্মহত্যা বলে দাবি করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, এসিড মারা, কখনো পুড়িয়ে বা বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা, শ্বাসরোধ করে বা গলায় দড়ি আটকিয়ে মেরে ফেলা প্রভৃতি নৃশংসতা লক্ষ করা যায়। অনেক নারীই প্রতিনিয়ত অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এ প্রথা শুধুমাত্র নারী ও পুরুষের মধ্যে অসমতাই সৃষ্টি করে না, বরং সামাজিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে। এটি অত্যন্ত জঘন্য ও আমানবিক সামাজিক রীতি ও প্রথা, যা নারীর মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। অনেক পিতা-মাতাই যৌতুকের অভিশাপে কন্যাসন্তানকে সানন্দে গ্রহণ করে না। বাংলাদেশে যৌতুকের প্রচলন শুরুর পর থেকে অসংখ্য নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ মারা গেছেন, কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কেউ আশ্রয়হারা হয়েছেন, কাউকে বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তি বেছে নিতে হয়েছে এবং অসংখ্য নারী আমাদের চোখের আড়ালে প্রতিনিয়ত যৌতুকের কারণে এখনো নির্যাতনের শিকার হয়েই চলেছেন।


ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম হেনরি তার বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে কনেপক্ষের কাছে দাবি করেছিলেন বিপুল পরিমাণ অর্থ ও ফ্রান্সের দুটি ভূ-খন্ড Aquitaine and Normandy। ফ্রান্সের রাজা ষষ্ঠ চার্লস-এর কন্যা ক্যাথেরিন ছিলেন বিয়ের কনে। কনেপক্ষ ওই যৌতুকের দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করলে ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা পঞ্চম হেনরি ফ্রান্স আক্রমণ করেন এবং ১৪২০ খ্রিষ্টাব্দের জুনে, দাবিকৃত যৌতুকসহ, অনেকটা জোর করেই রাজকুমারী ক্যাথেরিনকে বিয়ে করেন। পরবর্তীকালে ক্যাথেরিনের গর্ভেই জন্ম নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ হেনরি। সবাই জানেন, ইংরেজরা এই উপমহাদেশ জোর করে শাসন করেছিল প্রায় দু’শ বছর। তবে কি বিয়েতে যৌতুক নেয়ার কুপ্রথা ইংরেজদের কাছ থেকেই আমাদের পূর্ব-পুরুষরা শিখেছিলেন! ইংরেজদের আগমনের আগে এ অঞ্চলে যৌতুকপ্রথা ছিল কি না তা জানা যায় নাই। যৌতুক-প্রথা আমাদের সমাজকে পূর্বেও কুরে কুরে খেয়েছে, এখনো খাচ্ছে। ইংরেজরা চলে গেছে। ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান এবং পরবর্তীকালে পাকিস্তান ভাগ হয়ে বাংলাদেশ হয়েছে, কিন্তু যৌতুকের করালগ্রাস থেকে মুক্তি মেলেনি এদেশের নারীসমাজের।

যৌতুক দিয়ে পুরুষ কেনার চর্চা মুসলিম সমাজেও ছিল, মিশরের এক খলিফা তার ছোট মেয়ের বিয়েতে যে পরিমাণ উপঢৌকন এবং যৌতুক দিয়েছিলেন তা দিয়ে এখনকার যেকোনো রাষ্ট্র কিনে ফেলা সম্ভব। মিশরে প্রাগৈতিহাসিক কালে ব্রাইডপ্রাইস প্রথা পরিবর্তিত হয়ে যৌতুকে রূপ নিয়েছিল। সেটা সম্ভবত ঘটেছিল যখন গ্রিক ও রোমানরা মিশর দখল করে। মুসলিম সমাজের কারণে খ্রিষ্টানরাও ব্রাইডপ্রাইস দেয়। কিন্তু মিশরসহ আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশেতে ব্রাইডপ্রাইস আগে থেকেই চালু ছিল। ইসলাম আসার পরে তা মুসলিম সমাজে মোহরানাতে রূপ নেয়। 

মধ্যপ্রাচ্যেও একধরনের যৌতুকসমস্যা আছে। ওখানে যৌতুক নেন কনের বাবা। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাবেই তাদের মধ্যে ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হচ্ছে না, অজ্ঞতা, কুশিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবই এর জন্য দায়ী। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলবার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যখন তারা সচেতন হবে তখন অন্যসব নিষিদ্ধ কাজের সঙ্গে যৌতুক আদান-প্রদানের মতো হারাম কাজটিও করা থেকে বিরত থাকবে। যৌতুকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার মতো এধরনের প্রতিষ্ঠান সমাজে যত বাড়বে ততই মঙ্গল। ব্যক্তিগত পর্যায়েও আমাদের সকলের উচিত যৌতুক তথা নারী-নির্যাতনের সবগুলো হাতিয়ারের বিরুদ্ধে নিজ নিজ গণ্ডির মধ্যে থেকে হলেও সোচ্চার হওয়া। যথাযথ আইন, আইনের প্রয়োগ ও পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল যৌতুক নামক বিষবৃক্ষের কবল থেকে আমাদের সমাজ রেহাই পেতে পারে।

ইসলামে যৌতুককে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নারী মায়ের জাতি, অসামান্য সম্মানের দাবিদার। বিয়ে মানুষের নীতি ও নৈতিকতার উন্নয়ন সাধন করে এবং এর মাধ্যমে সন্তান জন্ম লাভ করে। যদি এর সূচনা হয় লোভ, অশুচি ও অনৈতিকতার মাধ্যমে, অন্যায় উপার্জনের মধ্যমে, বিয়ের কোনো এক পক্ষ বিশেষ করে কনেপক্ষকে বরপক্ষ দ্বারা শোষণের মাধ্যমে, তাহলে এই ধরনের বিয়ের মধ্যে পবিত্রতা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহানুভূতি ও ভালোবাসা থাকে না। যৌতুকের বিয়েতে পবিত্রতা ও বিশ্বস্ততা থাকে না। 

নারী-পুরুষ একে অন্যের আবরণস্বরূপ। পোশাক-পরিচ্ছেদ মানুষের জীবনধারণের জন্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি নারী-পুরুষ পরস্পরের জন্য অতীব জরুরি। একজন ছাড়া আরেকজন চলতে পারে না। বিপদাপদ, জরা-মৃত্যু ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকে একজন আরেকজনের সহায়ক ও রক্ষাকারী। একজন আরেকজনের প্রেরণাদানকারী। পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়তাকারী। সন্তান লালন-পালনে সহযোগী। দুঃখ-কষ্ট একসঙ্গে ভোগকারী। কার্য সম্পাদনে সাহায্যকারী। একজন থেকে আরেকজনকে পৃথক করে কিংবা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বরং পারিবারিক স্নেহ-মমতা, আদর-আপ্যায়ন, শান্তি-শৃঙ্খলা সন্তান গর্ভে ধারণ ও লালন-পালন ইত্যাদির দিক দিয়ে যদি বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে এসব বিষয়ে স্ত্রীর অবদান স্বামীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ইসলাম ধর্মে বিয়ের বন্ধনকে অত্যন্ত উঁচু মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। বিয়ের সময় হতে আজীবন স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর এবং বিয়ের সময়ে স্ত্রীকে দেনমোহর দেয়ার দায়িত্বও স্বামীর উপর। ইসলামি শরিয়তে বিয়ের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্ত্রীর খরচপাতির জন্য স্বামীর সামর্থ্য থাকা। অন্যথায় স্বামীর জন্য বিয়ের পরিবর্তে রোজা রাখার বিধান রয়েছে ইসলামে। যৌতুক চাওয়া আর ভিক্ষা চাওয়ার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। যৌতুক চাওয়া মানে নিজের অক্ষমতার নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ। 

বর্তমান বাংলাদেশে যৌতুক একটি সামাজিক মহামারী। নারীনির্যাতনকারী ঘৃণ্য প্রথা যৌতুক থেকে নারীদের রক্ষা পেতে হলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও সচ্ছল হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের গার্হস্থ্য কাজকর্ম এবং সন্তান জন্ম, লালন-পালনেরও যে আর্থিক মূল্য আছে তা তুলে ধরতে হবে। কারণ নারীদের বাদ দিয়ে মূলত সুখ শান্তি তো নয়ই, কোনো কল্যাণও সম্ভব নয়। কেননা, নারীরা হলো, বিধাতার শ্রেষ্ঠ দান। নারী হচ্ছে স্বামীর জীবনসঙ্গী কিংবা সহধর্মিণী। গ্রামবাংলার প্রেক্ষাপট থেকে দেখা যায় অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার কারণে অনেকে যৌতুকের শিকার হচ্ছে। ‘সিস্টেম অফ ডাওরি ইন বাংলাদেশ’-শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ৫০ শতাংশ বিবাহিত নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।

যৌতুকপ্রথা নির্মূলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ; যৌতুকবিরোধী আইনের প্রয়োগ; প্রয়োজনে নতুন আইন পাস ও বাস্তবায়ন; শিক্ষিত যুবসমাজকে এগিয়ে নেয়া; পত্রপত্রিকায় যৌতুকবিরোধী প্রতিবেদন উপস্থাপন; পাঠ্যপুস্তকে যৌতুক বিষয়ক প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা; মাদরাসা, মসজিদ তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইমামদের মাধ্যমে যৌতুকের কুফল তুলে ধরা; যৌতুক দেয়া-নেয়া যে সামাজিক অপরাধ সেটা জনগণকে অবহিত করা; যৌতুকপ্রথা বন্ধের জন্যে সভা-সেমিনার আয়োজন, মানবিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা; নারীশিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা; মিডিয়া ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব সচেতনতা বাড়ানো; সকলের সাহায্য-সহযোগিতা আর ঐক্যের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা। নারীদেরকে ভোগ্য পণ্য না ভেবে অর্ধাঙ্গিণী ভাবা, নারীপুরুষ সমমর্যদার অধিকারী মনে করা এবং যৌতুক দেব না যৌতুক নেব না-এই মন-মানসিকতা বাস্তবে রূপান্তর করা; লেখক, কবি-সাহিত্যকদের যৌতুকবিরোধী লেখা প্রকাশ করা ইত্যাদি উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তভুক্ত করার মাধ্যমে সচেতনতার বিষয়টি সর্বপর্যায়ে নিয়ে আসা দরকার। দেশে লাখ লাখ মসজিদ-মাদরাসা রয়েছে এবং এতে রয়েছেন অসংখ্য আলেম। এসব আলেম, ইমাম ও কাজি সাহেব যদি মসজিদে নামাজের আগে যৌতুক থেকে বিরত থাকার তাগিদ দিতে থাকেন, তাহলে যৌতুকের অভিশপ্ত প্রথা দেশ থেকে বিলুপ্ত হতে পারে। সর্বোপরি সচেতনতা এবং মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন যৌতুক নির্মূল করতে পারে। মানুষের পারিপার্শ্বিকতাই মানুষকে সুস্থ করে গড়ে তোলে। আর সুস্থ পরিবেশের প্রথম ধাপই হচ্ছে সংসারজীবন।

সমাজে যৌতুক প্রথার প্রচলন নারীর প্রতি একটি অভিশাপ। যৌতুকের জন্য যেমন বহু নারীর বিয়ে হয় না, তেমনি বিয়ে হলেও এই যৌতুকের কারণেই সংসার সুখের হয় না। আমি মনে করি, যৌতুকপ্রথা কেবল নারীকে মর্যাদাহীনই করে না, বরং গোটা নারীজাতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে সমগ্র দেশের উন্নয়নের গতিকে মন্থর করছে। যৌতুক বন্ধে আইনগত প্রতিরোধের চেয়েও সামাজিক প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। যৌতুকবিরোধী আইনে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা সত্ত্বেও তাতে যৌতুকলোভীদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। পরিবার ও সমাজে যৌতুকের অভিশাপ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। বুঝাতে হবে, যে পরিবারের সদস্যরা অন্য পরিবারের একটি মেয়েকে যৌতুকের কারণে নির্যাতন করছে, তাদের পরিবারের মেয়েকেও অন্য পরিবারে একই রকম নির্যাতনের শিকার হতে পারে। নারীজাতির উন্নয়নের জন্য যৌতুক নামক বিষবৃক্ষের শিকড় নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসে সমাজ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। সমাজের সকলকে উপলব্ধি করতে হবে নারীরা আমাদেরই মা, বোন ও সন্তান। তাহলেই সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রে নারীদের সঠিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মর্যাদাশীল, একটি উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব।

লেখক: প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, মহাপরিচালক, নায়েম

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031869411468506