রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলে এডিস মশার লার্ভা - দৈনিকশিক্ষা

রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলে এডিস মশার লার্ভা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলে এডিস মশার লার্ভা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত মাসে একটি সার্ভে করে, যেখানে রাজধানীর কোন এলাকায় এডিস মশার বিস্তার কেমন, স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে কী করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়। কিন্তু এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

এডিসের লার্ভার মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে চালু করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে রাজধানীর সাতটি স্কুলের রুম, ছাদ, টয়লেট ও আশপাশে এডিস মশার লার্ভার পাশাপাশি আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্নতার চিত্র দেখতে পান। স্কুলের সামনের মাঠে পানি ও ময়লা ছিল। নির্মাণাধীন স্থানেও পানি জমাট বাঁধা রয়েছে। ঐ সব স্কুলের নাম প্রকাশ না করতে কর্তৃপক্ষ এই প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, দেড় বছর স্কুল বন্ধ ছিল। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ এখনো চলছে। দ্রুতই এ কাজ সম্পন্ন হবে।

এমতাবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলেন, এ বছর এমনিতেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে শিশুরা সর্বাধিক। এর ওপর যদি এডিসের লার্ভা ও ময়লা-অপরিষ্কার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয়, তাহলে ব্যাপক হারে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। এডিসের সবচেয়ে দুর্বল ধাপ হলো লার্ভা, এটাকেই ধ্বংস করতে হবে। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

ক্লাসরুম, টয়লেট, খেলার মাঠ, ছাদসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশে জমে থাকা পানিতে বিস্তার ঘটছে এডিস মশার। এসব স্থান থেকেও এডিস মশা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েছে। দুই সিটিতে সহস্রাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ডেঙ্গুর এই সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এমন অবস্থায় স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় ডেঙ্গু রোগী আরো বাড়তে পারে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশন এসব স্থানে এডিস মশা নিধনে অভিযান চালাতে পারেনি।

চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশনের কাজে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, টিভিতে শুধু ছবি দেখালে হবে না, এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় এডিস মশার বিস্তার কমছে না। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন ঐ অঞ্চলের স্কুলে লার্ভা ও এডিস মশার বংশবিস্তার ধ্বংসের কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এটা নিয়মিত না করার কারণে উত্তর সিটি এলাকার স্কুলগুলোতেও ডেঙ্গুর বংশবিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী বাসায় থাকার কারণে ডেঙ্গুতে তেমন একটা আক্রান্ত হয়নি। তবে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রুম, ছাদ, টয়লেট ও আশপাশ পরিষ্কার করা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো মৌসুম নেই। সারা বছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরাও। স্কুলে ময়লা-আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঝুঁকি বাড়ছে। তাই শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা শার্ট, ফুল প্যান্ট ও মোজা পরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, স্কুল খোলার আগে ডেঙ্গুর একটি সার্ভে করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্কুল খুলতে হলে কী করণীয়, কোন কোন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি—সবকিছুই সেই সার্ভেতে উঠে আসে। এই সার্ভে রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ১০ জন শিশু মারা গেছে। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০ শিশু আইসিইউতে আছে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আছে ৬৭ জন রোগী। এত শিশু ডেঙ্গু রোগী অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুরাই সর্বাধিক আক্রান্ত। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এডিস মশার উত্স ধ্বংস করতে হবে। এদিকে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৩৪ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮২ জন রাজধানীতে এবং বাইরের হাসপাতালে ৫২ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৭। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ১ হাজার ৪৭ ও বাইরের বিভিন্ন বিভাগে ২০০ জন ভর্তি রয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়:

প্রচণ্ড জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, বমি, শরীরে লাল রং, মাংসপেশিতে ব্যথা এবং চোখের পেছনে ব্যথা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় হলো—মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা, ঘর ও আশপাশের যেকোনো পাত্রে বা জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারকেলের মালা, কনটেইনার, মটকা, ব্যাটারির সেল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা; যাতে এডিস মশা বিস্তার না করতে পারে। রাতে বা দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ স্থাপন করা, মশা নিধনের ওষুধ, স্প্রে কিংবা কয়েল ব্যবহার করা। জানালায় মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করা।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061440467834473