আবাসিক হল বন্ধ রেখে বেশির ভাগ বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভর্তি, ফরম পূরণ ও মেস ঠিক করা নিয়ে সারা দিনই দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে তাঁদের। আবার ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সেখানে উপেক্ষিত থাকছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়ে শতভাগ সচেতন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার এই ছুটির মধ্যেই সম্প্রতি প্রায় ৩০টি বিভাগ চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে। পরীক্ষা শুরু আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে। অথচ সরকার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর থেকে। হঠাৎ করেই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী রাজশাহীতে চলে এসেছেন। হল বন্ধ থাকায় তাঁদের মেসে উঠতে হচ্ছে। এই সুযোগে কিছু মেস মালিক মেসের সিট ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন অনেক শিক্ষার্থী। সিট না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মেসে উঠছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মেস মালিক সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্লা জানান, কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে কি না সে বিষয়ে অবগত নন তাঁরা। কেউ অভিযোগ দিলে তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার এই সময়ে অনেক বিভাগেই প্রায় কাছাকাছি সময়ে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংকটির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি। সেখানে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি।
ফরম পূরণের জন্য লাইনে অপেক্ষারত সোহেল আরমান জানান, হল বন্ধ রেখে একই সঙ্গে সব বিভাগের ফরম পূরণ ও পরীক্ষা নেওয়া খুবই অবিবেচনাপ্রসূত কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা ভেবে দ্রুত হল খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। অথচ শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট ও নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখনো কোনো পদক্ষেপ নেই।’
মেসের চেয়ে হলই শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি নিরাপদ উল্লেখ করে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম কনক বলেন, ‘হল খোলার মধ্যে আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। বরং মেসেই বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি। শিক্ষার্থীরা হলেই বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে। আবার এটা অনেক অভিভাবকের জন্যই বাড়তি আর্থিক চাপের বিষয়। তাই আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন হল খুলে দিতে পারে।’
কবে নাগাদ হল খুলতে পারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমরা যে শিক্ষার্থীদের কথা ভাবছি না, তা নয়। দীর্ঘদিন ধরে হল বন্ধ থাকায় সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করারও একটা ব্যাপার আছে। তা ছাড়া সরকার কভিড পরিস্থিতিতে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে ভাবছে। তাদের ভাবনার সঙ্গে আমাদের ভাবনারও সামঞ্জস্য রাখা দরকার। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত হল খোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে।’