প্রাথমিক শিক্ষা সকল শিক্ষার ভিত। শিক্ষক সংকটে বিপর্যস্ত শিশু শিক্ষা। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময়ক্ষেপণে বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদশূন্য থাকে। যার ফলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাতো দূরে থাক, যেনতেনো শিক্ষা থেকেও শিশুরা বঞ্চিত হয়। তখন যত দোষ ঘাড়ে এসে পড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর। এ শিক্ষক সংকটে পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করে কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো। পাড়া, মহল্লায়, অলি, গলিতে গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়। তবে, দীর্ঘসময় থেকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দূর্নীতিমুক্ত।
সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমলে উপজেলা পরিষদে নিয়োগ প্রক্রিয়া থাকায় ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছিল। বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপিকা জাহানার বেগম বাংলা মোটর এলাকায় ঘুষ বাণিজ্যের দোকান খুলেছিলেন। দুর্নীতি ব্যাপকতায় বাধ্য হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। আমার জানামতে প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষায় দুর্নীতি রোধের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ঢাকা বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বে উপপরিচালক মো. ইফতেখার হোসেন ভূইঁয়া দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষায় সব ধরনের দূর্নীতি বন্ধের জন্য তিনিও কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রাথমিক শিক্ষকদের বর্হিগমন, পাসপোর্ট, জিপি ফান্ড উত্তোলন, এনওসিতে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধান করে থাকেন। দুর্নীতিমুক্ত থেকে তিনি সকল কাজ খুব দ্রুত সমাধান করে যাচ্ছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব প্যানেল নিয়োগে টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এ কর্মতৎপরতা একজন সৎ, নীতিবান কর্মকর্তা হিসেবে দূর্নীতি রোধের আন্তরিক প্রয়াস।
প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট জন্ম থেকে চলে আসছে যা অনেকটা পেট্রোলের মত। একদিকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। অপরদিকে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতার ফলে আবার শিক্ষকের একই সংকট দেখা যায়। যা “নদীর একুল ভাঙ্গে, ও কুল গড়ে এইতো নদীর খেলা” গানের লাইনের মতো। প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবী শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। প্যানেলে মাধ্যমে মেধাবী যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেয়া হলে, শিক্ষক সংকট শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিনিয়র সচিব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষক সংকট অব্যাহত থাকলে এ উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখামুখি হয়ে পড়বে। একটি প্যানেল শেষ হওয়ার কমপক্ষে ২ বছর পূর্বে আরেকটি প্যানেলের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া করা হলে প্রাথমিকের শিশুদের শিক্ষকের অভাবে পাঠদান বিঘ্নিত হবেনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো অনেকের স্বপ্ন, প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়া। নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা ২-৪ বছর হওয়ায় অনেকের বয়স হারিয়ে ফেলেছে। তাদের স্বপ্নপূরণ, সংশ্লিষ্টদের দায়ভার লাঘবের জন্য বয়স প্রমার্জনা করে পরবর্তী প্রাথমিক নিয়োগে আসন্ন পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার মানবিক প্রত্যাশা কামনা করছি। মেধায় সাফল্য অর্জন করলে ২০১৪-২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিতদের শিক্ষকতা পেশায় আসার সুযোগ হবে। শিক্ষক সংকট দূরীকরণে প্যানেল ব্যবস্থা চালু করা আজকের দিনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় স্বার্থে জরুরি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতায় যারা শিক্ষকতা করা স্বপ্নে বিভোর, তাদের বর্তমান নিয়োগবিধি মোতাবেক (লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিতদের) পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়ার সবিনয় নিবেদন জানাচ্ছি।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।