কঠোর নীতিমালা না থাকায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা লিয়েনের (পদাধিকারে ছুটি) অপব্যবহার করছেন। মাঠ প্রশাসনে দুই বছর কাজ করে চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর বহু কর্মকর্তা বিদেশি সংস্থায় চাকরির জন্য লিয়েন নিচ্ছেন। বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দুইশ কর্মকর্তা লিয়েনে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। নবাগত থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা লিয়েনের অপব্যবহার করেছেন। ফলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সেকশন থেকে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে পদ শূন্য থাকছে। এতে মাঠ প্রশাসনেও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, সর্বোচ্চ পাঁচ বছর লিয়েনে থাকার কথা থাকলেও অনেকে ১০ বছরও থাকছেন। এসব বিষয় সামনে রেখে কঠোর হলো সরকার। লিয়েনের বিধিমালায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে কেউ পাঁচ বছরের বেশি লিয়েনে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তিনি চাকরি হারাবেন।
নতুন এ বিধান যুক্ত করে 'সরকারি কর্মচারী লিয়েন বিধিমালা-২০২১' চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কঠোর শর্ত জুড়ে দিতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে বিশেষ কমিটি একাধিক সভা করে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়- যে কোনো কর্মকর্তাকে মাঠ পর্যায়ে পাঁচ বছর কাজ করতে হবে। তা না হলে লিয়েনের ছুটি পাওয়া যাবে না। তবে ছুটি একনাগাড়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর নিতে পারবেন। ছুটি শেষে কর্মস্থলে অবশ্যই যোগ দিতে হবে। সেটি না করলে ছুটিপূর্তির দিন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাকে চাকরি হারাতে হবে।
পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সুপারিশ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে। পরে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মোট লিয়েনকাল যদি একাদিক্রমে পাঁচ বছর অতিক্রম করে, তবে অতিক্রম করার তারিখ থেকে সরকার বিশেষ বিবেচনায় অন্যরূপ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে, সরকারি কর্মচারীর চাকরির অবসান হবে। একইসঙ্গে চাকরির সঙ্গে তার সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, প্রশাসনে যোগদানের পর পরই অনেকে দেশে বা বিদেশে লিয়েনে চলে যান। এ-সংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা না করায় অনেকেই বছরের পর বছর লিয়েনে দেশের বাইরে থাকছেন। এজন্য সুনির্দিষ্টভাবে নীতিমালা করা হয়েছে। লিয়েনে যেতে হলে চাকরিতে প্রবেশের পর মাঠ প্রশাসনে কমপক্ষে পাঁচ বছর কাজ করতে হবে। নিয়ম অমান্য করলে ওই কর্মকর্তাকে শাস্তি পেতে হবে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, লিয়েন নিতে হলে তা পেশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। লিয়েন নিয়ে দেশি-বিদেশি সংস্থায় কাজ করলে ওই কর্মকর্তা জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, যা প্রশাসনিক কাজে সহায়ক হবে। কিন্তু পেশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে লিয়েন নেওয়া উচিত নয়। মাঠ প্রশাসনে মাত্র দুই-তিন বছর কাজ করার পর লিয়েন নেওয়া ঠিক নয়। আরও দক্ষ হয়ে লিয়েন নিলে ওই কর্মকর্তার জন্য ভালো হবে।