শত শত পরীক্ষা স্থগিত, বাড়বে সেশনজট - দৈনিকশিক্ষা

শত শত পরীক্ষা স্থগিত, বাড়বে সেশনজট

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আগামী তিন মাসে আটকে যাবে শত শত পরীক্ষা। এতে নতুন করে আরো ছয় মাসের সেশনজটে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। এমনকি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সৃষ্টি হবে সেশনজট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের পরীক্ষাও আটকে গেল।   

হল খোলার দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত সোমবার ঘোষণা দিয়েছে সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে আগামী ২৪ মে থেকে। এই সময়ের মধ্যে অনলাইনে বা সরাসরি সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এই ঘোষণার পর রাত থেকেই একে একে সব বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিতে থাকে। অথচ কিছুদিন আগেও পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

নাম প্রকাশ না করে একজন সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব সময় তাদের স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে। বিশেষ করে বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এই স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে সব সময়ই পৃথক থাকার চেষ্টা করে। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছিল। অথচ তারাই আবার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কিছুটা হলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ’

এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘খুবই অবাক হলাম, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক কাউন্সিল করে পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছে। তারা যদি দু-চার দিন পরও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করত, তাহলে তো মন্ত্রণালয় বুঝত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত আরো ভেবেচিন্তে নেওয়াটা উচিত ছিল। তবে মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার যে ঘোষণা এসেছে, সেটা ঠিক আছে। বর্তমান মহামারিতে সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু পরীক্ষাও নিতে পারবে না এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে না দিলেও পারত।’  

জানা যায়, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর এপ্রিল থেকেই অনলাইনে ক্লাস শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর মে মাস থেকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণেরও অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এমনকি আরো কিছুদিন পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ব্যাবহারিক পরীক্ষা গ্রহণেরও অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন তাদের আর কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকল না। তিন মাস পরীক্ষা নিতে না পারলে তাদেরও প্রথমবারের মতো সেশনজটে পড়তে হবে।

এ ছাড়া গত জুন মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলতি বছরের শুরু থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সেশনজট কমিয়ে আনার একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। তবে হল খোলার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফের পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা আসায় বড় সংকটে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আগামী ২৪ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। আমি শিক্ষার্থীদের বলব, তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর দ্রুততার সঙ্গে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, পরীক্ষা শুরুর পরপরই শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার আন্দোলন শুরু হয়। কারণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে। আর তাঁদের বেশির ভাগেরই থাকার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল। ফলে হল খোলার আন্দোলন জোরালো হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী জোর করে হলে উঠে পড়ছেন। এতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই পরীক্ষা বন্ধ করলে শিক্ষার্থীরা আর হলে উঠতে চাইবেন না।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণার সঙ্গে পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত আসাটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাটাই পরীক্ষানির্ভর। আর পরীক্ষার সঙ্গে চাকরিসহ নানা বিষয় জড়িত। তাই অনলাইনে ক্লাসের সঙ্গে পরীক্ষা চলমান থাকলে সেশনজট অনেকাংশেই কমে আসত। এখন তিন মাস পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা আসায় পুরনো সেশনজটের সঙ্গে নতুন করে আরো ছয় মাসের সেশনজট যুক্ত হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে একাধিক পরীক্ষা চলমান ছিল। আগামী মার্চ থেকেও আরো একাধিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল, যা ফের আটকে গেল। এর মধ্যে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ, অনার্স চতুর্থ বর্ষ, বিভিন্ন প্রফেশনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই বছরে প্রায় ৪০০ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর সবটাই প্রায় আটকা পড়ে গেল।

জানা যায়, রাজধানীর সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যা চলছে। তবে সমস্যা কাটাতে সম্প্রতি কলেজগুলোতে পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু তাদের পরীক্ষাও ফের আটকে গেল। এতে দীর্ঘ সেশনজটে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এসব পরীক্ষা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, এর আগে আগামী ১৩ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে একাধিক পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘১৩ মার্চকে কেন্দ্র করে যে পরীক্ষাগুলোর ঘোষণা ছিল, এগুলো স্থগিত করা হলো। একাডেমিক কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এখন বড় কোনো পরীক্ষা নেব না। বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়া হবে।’

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010745048522949