নীরব ঘাতক শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানাতে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে তা অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দিনে দিনে শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ছে। আর এখন তা ভয়ংকর অবস্থায় চলে গেছে। তাই ছোটবেলা থেকেই মানুষকে সচেতন করতে হবে। আর সচেতন হতে হলে শিখতে হবে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস-২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনলাইন কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’ এ কর্মশালার আয়োজন করে। বক্তারা শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং এসংক্রান্ত আইনের সঠিক প্রয়োগে ট্রাফিক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তারা বলেন, আবাসিক এলাকায় যানবাহনে অযাচিত হর্নের ব্যবহার, নির্মাণকাজে সৃষ্ট শব্দ, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক বা সাউন্ডবক্সের মাধ্যমে সৃষ্ট শব্দ দ্বারা প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ হচ্ছে, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত মহাপরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য প্রফেসর প্রাণ গোপাল দত্ত। আরো বক্ত্য রাখেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার, ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’-এর জিয়াউর রহমান লিটু, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ)-এর সভাপতি কাওসার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রমুখ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘শব্দদূষণের উচ্চমাত্রা যে কোনো বয়সের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই শব্দদূষণ কীভাবে হয়, এর ক্ষতিকর দিক এবং করণীয় সম্পর্কে স্কুলের পাঠ্যবইতে অধ্যায় সংযোজন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। তিনি বলেন, আমরা এখনো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম কার্যকর করতে পারিনি। এটা কার্যকর করতে হবে।’
অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘মোবাইল ডিভাইস আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। এখন কানের সমস্যা নিয়ে যত রোগী পাচ্ছি, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তা ছিল না। আর এই রোগীদের বেশির ভাগই অল্প বয়সের। এ অবস্থায় রাত ১২টার পর আমরা মোবাইল চালাতে পারব কি না, কিংবা পারলে কীভাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। তিনি শিশুদের শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে তাদের পাঠ্যবইয়ে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তের জন্য দাবি জানান।’
কর্মশালায় বক্তারা শব্দদূষণ রোধে ট্রাফিক পুলিশকে জরিমানা করার ক্ষমতা দেওয়া, ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইনে শব্দদূষণকে অন্তর্ভুক্ত করা, হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রি ও আমদানি বন্ধ করা, ‘নো হর্ন’ নীতি গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান।