শাবিতে ৩ জনকে অবৈধ পন্থায় নিয়োগে তড়িঘড়ি - দৈনিকশিক্ষা

শাবিতে ৩ জনকে অবৈধ পন্থায় নিয়োগে তড়িঘড়ি

শাবি প্রতিনিধি |

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ছাত্রলীগের এক নেতাকে অবৈধ পন্থায় তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দিতে চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। মৃন্ময় দাশ ঝুটন নামে এ নেতা শাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী।

উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নিয়মবহির্ভূতভাবে আবেদনের সুযোগ পাওয়ার পর এখন তাকে ‘অবৈধ পন্থা’য় ভাইভা কার্ডও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আবেদনের সময় মৃন্ময় দাশ ঝুটনের সনদপত্র না থাকা নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে, সেজন্য একই প্রক্রিয়ায় লক্ষণ চন্দ্র বর্মণ নামে আরেক প্রার্থীকে প্রাথমিক আবেদনে বাছাই করা হয়েছে।

আর উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ এক দপ্তর প্রধানের নিকটাত্মীয় আবুল খায়ের মোজতবার আবেদনপত্রে সমস্যা থাকার পরও প্রাথমিকভাবে তাকে বাছাই করা হয়। মোজতবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পাশের সাল একই এবং তা দিয়ে আবেদন করে ভাইভা কার্ডও পেয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষাসংক্রান্ত নিয়ম অনুযায়ী একই বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করা সম্ভব নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চের ১০ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দপ্তরের অফিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসারের দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে প্রার্থীকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের সনদপত্রের সত্যায়িত কপি দিয়ে ৩১ মার্চের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা ঝুটন ২০১৫ সালে স্নাতক সম্পন্ন করলেও নির্ধারিত সময়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেনি। তার স্নাতকোত্তরের সর্বশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ফল প্রকাশিত হয় ৮ জুন (মঙ্গলবার)। সে হিসাবে আবেদনের সময় স্নাতকোত্তরের সনদপত্রের কপি জমা দিতে পারেননি তিনি।

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সনদপত্র ছাড়া আবেদনের সুযোগ না থাকলেও, ছাত্রলীগের এ নেতা ‘অ্যাপিয়ার্ড’ দিয়ে আবেদন করেছেন। যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা।

জানা যায়, ৫৩ জন প্রার্থী ওই পদে আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে সনদপত্রে গরমিল এবং অন্যান্য সমস্যা থাকার কারণে ১৯ প্রার্থীকে প্রাথমিক আবেদনের সময় বাদ দেওয়া হয়। তবে ছাত্রলীগ নেতা মৃন্ময় দাশ ঝুটনের সনদপত্র না থাকার পরও তাকে প্রাথমিকভাবে বাছাইয়ে রাখা হয়। রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভাইভার জন্য তাকে কার্ডও দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, স্নাতকোত্তরের ফল প্রকাশ না হলে মৃন্ময় দাশ ঝুটন ভাইভায় সনদপত্র দেখাতে পারবেন না। তাই স্নাতকোত্তরের ফল দ্রুত প্রকাশ করার জন্য ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক আহমেদ চৌধুরীকে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ১৬৫তম সভায় তাগাদাও দেন উপাচার্য।

মৃন্ময় দাশ ঝুটনের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ৮ জুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের আগে সাধারণত সনদপত্র পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে হিসাবে ভাইভায় তিনি সনদপত্র দেখাতে পারবেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রত্যক্ষ প্রভাবে তিনি দুই কার্যদিবসের মধ্যে সনদপত্র পেয়ে যান বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের একাধিক সূত্র।

মেয়াদের শেষ সময়ে এসে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ‘অবৈধ পন্থা’য় নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মৃন্ময় দাশ ঝুটন ও লক্ষণকে সনদপত্র ছাড়া এবং আবেদনে সমস্যা থাকার পরও মোজতবার অবৈধ পন্থায় আবেদনের সুযোগ দেওয়া এবং ভাইভা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

এ ব্যাপারে মৃন্ময় দাস ঝুটন বলেন, ডিপার্টমেন্ট থেকে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ নিয়ে চাকরির আবেদন করেছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ইনফরমালি যেদিন ফল প্রকাশিত হয়েছে সেদিন সনদপত্রের জন্য আবেদন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখব ‘অ্যাপিয়ার্ড’ দিয়ে হয় কিনা। না হলে খোঁজ নেব সনদপত্রের জন্য করা আবেদনের। প্রয়োজনে আবার আবেদন করব।

একই কথা বলেন লক্ষণ চন্দ্র বর্মণও। তিনি বলেন, ডিপার্টমেন্ট থেকে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ নিয়ে চাকরির আবেদন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে কর্তৃপক্ষ তথা ভিসি স্যার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তারা যেটা ভালো মনে করেন, তাই হবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

আর আবুল খায়ের মোজতবা বলেন, ২০১৮ সালের শেষে দিকে বিবিএ শেষ করেছি। ২০১৯ সালে ফল পেয়ে এমবিএতে ভর্তি হয়েছি। আর কিছু তিনি বলতে চাননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা নিয়ে কোনো কথা বলব না। কারণ এখনো ইন্টারভিউ নেওয়া হয়নি। কিছুই হয়নি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যত নিয়োগ হয়েছে, সব একশ ভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে হয়েছে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.025834083557129