পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বলেছে, নীতি বহির্ভূতভাবে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে এখন ক্রমশ যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা সমগ্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের একটি চক্রান্তের অংশ।
গতকাল শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার শাবিপ্রবির পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম জুমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উপস্থিত ছিলেন। এতে শাবিপ্রবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও তারা মতবিনিময় করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সভায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী মহিলা হলের একজন প্রাধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রশাসনের অনভিপ্রেত ঘটনার প্রেক্ষাপটে ছাত্র-ছাত্রী, পুলিশ ও শিক্ষকদের যারা আহত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমরা সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলে একজন নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হলেও উপাচার্যসহ তার পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখার মাধ্যমে বর্তমানে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তা আমাদের কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যকার সম্পর্কটি শ্রদ্ধা, স্নেহের ও পারস্পরিক সম্মানবোধের। সেটি যেন অক্ষুন্ন থাকে তা আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে এবং যেকোনো সমস্যা, তা যত বড়ই হোক না কেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই সমাধান করা সম্ভব বলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ মনে করে।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গত বুধবার উপাচার্যের বাসার সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। অনশনকারীদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫ জন। রোববার বিকেলে আরও চারজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দিয়েছেন। ১২ জন শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় উপাচার্য বাস ভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের এই আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এরপর ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।