শাহেদুল খবিরের নিয়োগবাণিজ্য: তদন্ত থেকে সরে আসলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - দৈনিকশিক্ষা

শাহেদুল খবিরের নিয়োগবাণিজ্য: তদন্ত থেকে সরে আসলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দুর্নীতির দূর্গখ্যাত  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অধীন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে চার হাজার কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দ্বিতীয় শ্রেণির পদে শুধু এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন) পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) বাদ দিয়ে খাতা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে। অথচ নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বোর্ড চত্বরেই থাকেন।

সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে ২৮টি পদে চার হাজার ৩২ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় মাউশি অধিদপ্তর। এতে আবেদন করেন আট লাখ ৯৭ হাজার ৪৯ জন। এরই মধ্যে বেশির ভাগ পদের এমসিকিউ টাইপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন তাঁরা মৌখিক পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন।

এই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী এবং সদস্যসচিব ছিলেন উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. রুহুল মোমিন। সম্প্রতি নানা অনিয়মের অভিযোগে রুহুল মোমিনকে বদলি করা হয়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনিও আগের ধারাবাহিকতায় নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

সম্প্রতি নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৭ ডিসেম্বর থেকে তাদের কাজ শুরু করে। তবে তদন্তকাজ চলার পর গত ৮ ডিসেম্বর তদন্তকাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশটি প্রত্যাহার করেছে। এ জন্য আমাদের তদন্তকাজ বন্ধ আছে।’

গত ২৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ জমা হয়। অভিযোগ বলা হয়, সরকারি কলেজে বিভিন্ন বিষয়ের প্রদর্শকরা পরে পদোন্নতি পেয়ে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত প্রভাষক হন। এমনকি তাঁদের অধ্যাপক হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। অথচ এ ধরনের পদে ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগ কমিটির অনেকেই এ ব্যাপারে একমত না হলেও নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।

সূত্র জানায়, সরকারি কলেজে ১০টি বিষয়ের প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী, সহকারী গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগার, ল্যাবরেটরি সহকারীর পদগুলো দশম গ্রেডের। এ ধরনের ৬১০টি পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, দশম থেকে দ্বাদশ গ্রেড পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদ। মাউশির নিয়োগবিধিতে এই পদগুলোকে তৃতীয় শ্রেণির দেখিয়ে শুধু এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য পদের মধ্যে ২০তম গ্রেডের অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, মালি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ১৬তম গ্রেডের অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, গাড়িচালকসহ আরো কিছু পদের সবারই এই এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরেও বড় নিয়োগ চলছে। তারা বুয়েটকে দিয়ে তাদের খাতা মূল্যায়ন করাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও তাদের নিয়োগ পরীক্ষার মূল্যায়নের দায়িত্ব দেয় বুয়েটকে। মাউশিও প্রথমে বুয়েটকে দিয়ে খাতা মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে এই দায়িত্ব দেয়।

নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী দীর্ঘদিন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত ছিলেন। প্রথমে তিনি বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ছিলেন। এরপর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অধ্যাপকের জ্যেষ্ঠতার তালিকায় অনেক পেছনে থাকলেও বর্তমান সরকারের মেয়াদের শুরুতে শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) হন।

শাহেদুল খবির তিন বছর আগে ঢাকা বোর্ড ছেড়ে এসেছেন, কিন্তু এখনো তিনি বোর্ডের বাসায় থাকেন। ওই কম্পাউন্ডে তাঁর বাসভবনের পাশের ভবনে নিয়োগ পরীক্ষার খাতা দেখা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ঢাকা বোর্ডে চাকরি করায় এবং এখনো ওই চত্বরে থাকায় বোর্ডের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে।

এর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটির পাঁচ সদস্যের একজন ছিলেন অধ্যাপক শাহেদুল খবির। সে সময় অকৃতকার্য হওয়া এক প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে কমিটি। তখন প্রায় ৪০ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। পরে সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়। এমনকি নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ভবিষ্যতে কোনো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটির সদস্য না করার জন্য আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ চার হাজার ৩২টি পদে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সেই শাহেদুল খবিরকেই।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে একাধিকবার অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি। নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসও এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র তিন মাস হলো এই পদে এসেছি।’

তবে, বিপুলের বিরুদ্ধে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে। 

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.02366304397583