জামালপুর সদরের দিগপাইত শামছুল হক ডিগ্রি কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রায় কোটি টাকার ঘুষের বিনিময়ে জালিয়াতি করে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় তদন্ত চলাকালে ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করারও পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, দিগপাইত শামছুল হক ডিগ্রি কলেজে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয় ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে। শুরুতে সাতজন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও তখন শুধু পাঠদানের অনুমোদন ছিল। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সরকারি আদেশে এই কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে চলে যান। শাখা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর অধিপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মহির উদ্দিন তালুকদার আগে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাদ দেন। আগের নিয়োগের দালিলিক কাগজপত্র ও ব্যবস্থাপনা কমিটির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নতুন করে কয়েকজনকে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠান। কিন্তু এখনো তাঁদের এমপিওভুক্তির আদেশ আসেনি।
কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় চাকরিপ্রত্যাশী নূরে হুদা মোহাম্মদ আলী নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। একই সঙ্গে তিনি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
চাকরিবঞ্চিত নূরে হুদা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ জুলহাস তাঁর কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চান। আমি সাত লাখ টাকা দিতে রাজি ছিলাম। যোগ্যতা থাকার পরও আমাকে নিয়োগ দেননি।’ তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার ঘুষ নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় ৯০ লাখ টাকার ঘুষ নেওয়া ও জাল-জালিয়াতির সব প্রক্রিয়ার হোতা ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মো. আহসান উল্লাহ জুলহাস। নিয়োগ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন চলমান। কারিগরি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মো. আহসান উল্লাহ জুলহাস বলেন, কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হয়নি। নিয়োগ দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সাও নেওয়া হয়নি। নূরে হুদা মোহাম্মদ আলী চাকরি না পেয়ে কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য আদালতে মামলা ও বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করাসহ নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মহির উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘নিয়োগ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন নূরে হুদা মোহাম্মদ আলী। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে এখনই আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’ তবে নিয়োগ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকা এবং অধিদপ্তরে অভিযোগ দাখিলের পরও এমপিওভুক্তির জন্য ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর তালিকা তৈরি করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানোর বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ভোকেশনাল শাখার সহকারী পরিচালক বিমল কুমার মিশ্রকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি গত বৃহস্পতিবার কলেজে তদন্ত করে গেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিমল কুমার মিশ্র বলেন, মহাপরিচালকের আদেশবলে এই কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখার শিক্ষক নিয়োগের অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার কলেজে গিয়ে নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষ, নিয়োগপ্রাপ্ত সব শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিযোগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মামলা আদালতে ফায়সালা হবে।
তিনি জানান, নিয়োগসংক্রান্ত অনিয়মের তদন্তের বাইরেও তাঁরা কৃষি ডিপ্লোমা শাখার অস্তিত্ব সরেজমিন পরিদর্শন করে এই শাখার আলাদা কোনো অবকাঠামো পাননি। এই শাখা চালুর করার পর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কৃষিভিত্তিক আধুনিক তো দূরের কথা, কোনো ল্যাবই স্থাপন করা হয়নি। অনেকটা কাগজে-কলমে চালু আছে বলে মনে হয়েছে।