শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দাবি রিট না করা ১৩তম নিবন্ধন উত্তীর্ণদের - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দাবি রিট না করা ১৩তম নিবন্ধন উত্তীর্ণদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রিট করে আপিল বিভাগ রায়ের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন ২ হাজারের বেশি প্রার্থী। এ নিবন্ধনে উত্তীর্ণ মোট ১৭ হাজার  প্রার্থীর ২ হাজার ২০৭ জন নিয়োগ সুপারিশ করায় বাকিরাও নিয়োগ সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবি আদায়ে রোববার (২১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন প্রার্থীরা। মানববন্ধন শেষে তারা এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানান।

জানা গেছে, ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রিট করে আপিল বিভাগ থেকে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়ার রায় পেয়েছিলেন ২ হাজার ২০৭ জন প্রার্থী। যদিও আপিল বিভাগের রায় চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ করেছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবুও বিচারাধীন এসব পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে প্রার্থীদের। যদিও এ শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে ১৭ হাজার ২৫৪ প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। রিট করে ২ হাজার প্রার্থী নিয়োগ পাওয়ায় এ নিবন্ধনে উত্তীর্ণ বাকিরাও নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

মানববন্ধনে ননরিটকারী প্রার্থীরা বলেন,‘একই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিছু প্রার্থীকে একক নিয়োগ দিতে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন, তার অর্থ ১৩তম উত্তীর্ণরা সবাই একক নিয়োগের যোগ্য। কিন্তু ননরিটকারীদের নিয়োগের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা এনটিআরসিএ।’ 

১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ননরিটকারী প্রায় চার হাজার বেকার প্রার্থী শিক্ষক পদে নিয়োগের দাবি জানাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রার্থীরা। তারা বলেন, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) গঠিত হয়। তখন এনটিআরসিএর দায়িত্ব ছিল শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রত্যয়ন (সার্টিফিকেশন) করা। প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেওয়া। এই সনদ মানে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা। তখন নিবন্ধন সনদধারীরাই শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারতেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির নেওয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতেন। কিন্তু ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর এক গেজেটের মাধ্যমে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক পদের নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতা এনটিআরসিএর হাতে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তৎকালীন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরে জারি হওয়া সে গেজেটে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষমতা দেওয়া হয় এনটিআরসিএকে।

বলা ছিল, এনটিআরসিএ শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করবে ও নিয়োগ সুপারিশ করবে। পরে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলাভিত্তিক মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ সুপারিশের ফল প্রকাশ করবে। সে প্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার সময় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের নিয়োগ পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিন ধাপে তথা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় অংশ নিয়ে চূড়ান্তভাবে ১৭ হাজার ২৫৪ প্রার্থী এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উত্তীর্ণদের নিয়োগ সুপারিশের আশ্বাস দেওয়া হলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পরে তারা আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে এতেও ফল না পেয়ে ২ হাজারের বেশি প্রার্থী রিট দায়ের করেন।

প্রার্থীরা জানান, পরে হাইকোর্টের রায় ও আপিল বিভাগের রায়ের প্রেক্ষিতে ২ হাজার ২০৭ জন প্রার্থীকে এনটিআরসিএ নিয়োগ সুপারিশ করেছে। কিন্তু আমরা ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থী ১৭ হাজার। প্রার্থীরা দাবি করেন, ‘আপিল বিভাগ ২ হাজারকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে তার অর্থ আমরা ১৩তম উত্তীর্ণরা নিয়োগের যোগ্য। কিন্তু এনটিআরসিএ শুধু রিট করা কিছু প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে বাকিদের নিয়োগ বঞ্চিত করেছে। কিন্তু আপিল বিভাগ যেহেতু রায় দিয়েছে ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণরা নিয়োগের যোগ্য এবং এনটিআরসিএও একাংশকে নিয়োগ দিয়েছে, তাই আমরা সবাই নিয়োগ সুপারিশ পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ 

প্রার্থীরা আরও জানান, মানববন্ধন শেষে আমরা নিয়োগ সুপারিশের দাবি জানিয়ে এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেবো। 

দুপুরে এনটিআরসিএর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার পর ননরিটকারী ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ ননরিটকারী প্রার্থীরা জানান, আমরা দেখা করে কর্মকর্তাদের স্মারকলিপি দিয়েছি। তাদের কথা বার্তায় মনে হচ্ছে তারা আমাদের রিট করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন কেন আমাদের আবার রিট করে রায় আনতে হবে। আপিল বিভাগের রায় অনুসারেই ১৩তম উত্তীর্ণ সবাইকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি আমরা জানিয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগ ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ রিটকারী ২ হাজার ২০৭ প্রার্থীদের করা রিট আবেদনের রায় দেন। ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের গেজেট ও পরিপত্র অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে নিয়োগ সুপারিশের নির্দেশনা দেন আদালত। এনটিআরসিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আশফাক হুসেন সে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেন। রায় চেম্বারকোর্টে স্টে করা হলে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় (হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনা অনুসারে)। কিন্তু পরে চেম্বারকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার উঠিয়ে দেওয়া হয়। এনটিআরসিএ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। কয়েক দফা শুনানি শেষে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ আপিল বিভাগ ১৩ তমদের নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখার আদেশ দেন। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সে রায় প্রকাশ পায়। রায় প্রকাশের পর এনটিআরসিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন তা রিভিউ আবেদন করেন। সে রিভিউ আবেদন শুনানি না হতেই এনটিআরসিএ রিটকারীদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ননরিটকারী বাকি প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিচারাধীন পদে এ নিয়োগ সুপারিশ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এনটিআরসিএর একজন সদ্য সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ছিল নানা অভিযোগ। কিন্তু কিছুই আমলে নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন। রিভিউয়েরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই এ দুই হাজারের বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে। 

এদিকে প্রার্থীদের এ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আদালতের রায় আমাদের মানতেই হবে। তাই আগের প্রার্থীরা নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন। কিন্তু বাকিদের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা নেই। তাই তাদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়নি।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043189525604248