শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের ভোগান্তি, যোগাদান কবে কেউ জানেন না - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের ভোগান্তি, যোগাদান কবে কেউ জানেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত ৩৮ হাজারের বেশি প্রার্থীর যোগদানের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। সুপারিশ পাওয়ার দুই মাসের মাথায় প্রার্থীদের কাছে নতুন ভোগান্তির নাম ‘পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণ’। পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে শিক্ষক পদের যোগদানের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও এ ফরম পূরণ নিয়ে বেশিরভাগ প্রার্থীই বিভ্রান্ত। আর প্রার্থীদের বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি দূর করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না। তাই সুপারিশপ্রাপ্তরা ভেরিফিকেশন নিয়ে বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি দূর করার ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। 

আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮০ হাজারের বেশি পদ শূন্য আছে। প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতিতেই এ পদগুলো শূন্য থাকছে। যদিও স্কুল কলেজ খুললে যেহেতু চলতি ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হবে, তাই এ মুহুর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তেমন সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তবে পুরোদমে ক্লাস শুরু হলে শিক্ষার্থীদের সব ক্লাস নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে মনে করছেন তারা। তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও নতুন শিক্ষকদের দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন ।

দীর্ঘ দুই বছর পর গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৮ হাজার প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়। দীর্ঘ অপেক্ষা, আন্দোলন ও নানা ঝক্কি পেরিয়ে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি ও সুপারিশ পেয়েছেন নিবন্ধিত প্রার্থীরা। সরকার যোগদানের আগে শিক্ষক হতে নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য যোগদানে কিছুটা বিলম্বিত হলেও প্রার্থীরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। যদিও পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণে প্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর কবে যোগদান করতে পারবেন সে বিষয়েও সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। শিক্ষক পদে সুপারিশ পেলেও তাই এসব প্রার্থীর হতাশা কটেনি। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণে ভোগান্তি। ফরম পূরণের জন্য চারিত্রিক সনদ সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রার্থীদের। ৩৫ বছরের বেশি বয়সি সুপারিশপ্রাপ্তরা এ সনদ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছেন।

জানা গেছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণ করে ডাকযোগে এনটিআরসিএতে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণের নির্দেশনা দিলেও কিভাবে ফরম পূরণ করতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আর চারিত্রিক সনদ সংগ্রহ করতে প্রার্থীদের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।  

প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ প্রার্থীই বুঝতে পারছেন না পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণের বিষয়ে। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে চারিত্রিক সনদ সংগ্রহে। প্রার্থীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেছেন, এবারের নিয়োগ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার আলোকে ৩৫ বছরের বেশি বয়সি প্রার্থীরা সুপারিশ পেয়েছেন। পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরমের সঙ্গে সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নসহ চারিত্রিক সনদ পাঠাতে বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক প্রার্থী বিশেষ করে ৩৫ বছরের বেশি বয়সি সুপারিশপ্রাপ্তরা এ সনদ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছেন। বেশ কয়েক বছর আগে শিক্ষাজীবন শেষ করা এসব প্রার্থীর প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-অধ্যক্ষ পদে পরিবর্তন এসেছে। আবার অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনও হয়েছে। তাই কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আসা সাবেক শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক সনদ দিতে চাচ্ছেন না প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। 

তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও সুপারিশপ্রাপ্ত এক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা এখন চারিত্রিক সনদ আনতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আপনাদের তথ্য সব আমরা তিতুমীর কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের চিনতে পারছেন না। তারা আমাদের চারিত্রিক সনদ দিতে চাচ্ছেন না। 

এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করে শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থী এবারের নিয়োগে সুপারিশ পেয়েছেন। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক সনদ দিতে চাচ্ছে না। তারা প্রশংসাপত্র দিতে চাচ্ছে।  

এদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণে প্রার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তিও আছে। প্রার্থীরা বলছেন, ফরমের অনেক কিছুই আমরা বুঝতে পারছি না। এনটিআরসিএও এ বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি। কোনো হেল্পলাইনও দেওয়া হয়নি যোগাযোগের। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই বুঝতে পারছে না কিভাবে ফরম পূরণ করতে হবে। 

নিবন্ধিত প্রার্থীদের নেতা ও শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত শান্ত আলী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, হবু শিক্ষকদের ভোগান্তি নিয়ে এনটিআরসিএর চিন্তা নেই। তারা বিজ্ঞপ্তি ও ফরম দিয়েই খালাস। অনেক প্রার্থী বুঝতে পারছেন না কিভাবে ফরম পূরণ করতে হবে। এ দিকে ৩৫ বছরের বেশি বয়সি যারা সুপারিশ পেয়েছেন তাদের ভোগান্তি অনেক বেশি। তারা অনেকেই ৬-৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন। তাদের চারিত্রিক সনদ দিতে চাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এ পরিস্থিতিতে তারা অনেকেই পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম জমা দিতে পারেনি। 

তিনি আরও বলেন, কবে নাগাদ যোগদান হবে তা বুঝতে পারছি না। এনটিআরসিএর উচিত ছিল প্রার্থীদের সাধারণ একটি নির্দেশনা দেওয়া কিভাবে ফরম পূরণ করতে হবে। কিন্তু তা না করে তারা শুধু নোটিশে জানিয়ে ফরম পূরণ করতে। প্রার্থীদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে এনটিআরসিএকে অনুরোধ করব। 

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বেকার থেকে প্রার্থীদের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না। তারা বেশ কিছু টাকা খরচ করে আবেদন করেছেন। এখন কবে যোগাদন করতে পারবেন কবে, এমপিও পাবেন তা জানেন না কেউ। 

নিবন্ধিত প্রার্থীদের নেতা ও শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হাবিবুল্লাহ রাজু দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ৩৫ বছরের বেশি বয়সি প্রার্থীরা সুপারিশ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের কেউ তাদের চিনতে পারছেন না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদেরও চারিত্রিক সনদ দেওয়া হচ্ছে না। আমরা চাই আমাদের দ্রুত যোগাদানের ব্যবস্থা করা হোক। শিক্ষক পদে যোগদানে ৩৮ হাজার নিবন্ধিত বেকারের অপেক্ষার পালা দ্রুত শেষ করতে সরকারের উচ্চপর্যায়কে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করছি। প্রার্থীরা চাচ্ছেন দ্রুত যোগদান ও এমপিওভুক্ত হয়ে বেকারত্বের গ্লানি কাটাতে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা প্রার্থীদের যে ফরম দিয়েছি তা মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে চারিত্রিক সনদের জটিলতা নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। 

তিনি আরও বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমে সাধারণ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনেকে তা পূরণ করে ডাকযোগে পাঠাচ্ছেন। করোনার কারণে আমরা হাতে হাতে কোন ফরম জাম নিচ্ছি না। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফরম পূরণ করে ডাকযোগে পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রার্থীদের কিভাবে ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে সে বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনা এনটিআরসিএর নেই বলেও জানান তিনি। 

কবে নাগাদ প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। পূরণ করা পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম আমরা পূরণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে পুলিশকে পাঠিয়ে ভেরিফিকেশন করতে বলা হবে। ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট পাওয়ার পরে যোগদান করতে পারবেন প্রার্থীরা। 

এদিকে দ্রুত যোগদান ও নিয়োগ সুপারিশপত্র প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন নিবন্ধিত প্রার্থীরা। তারা বলছেন, আমরা দীর্ঘ অপেক্ষার পর গণবিজ্ঞপ্তি পেয়েছি। তারপর ফল পেতে অপেক্ষা। এবার যোগদান করতে আবারও অপেক্ষা। আমরা চাই দ্রুত সুপারিশ প্রক্রিয়া শেষ হোক।

তারা আরও বলেন, আমরা বেকাররা সবসময় আর্থসামাজিকভাবে চাপে আছি। আমরা দ্রুত যোগদান করতে চাই। সরকারের কাছে আকুতি, দ্রুত পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে যোগদানের ব্যবস্থা করুন। সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের অনেকে দুশ্চিন্তায় আছেন। 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047500133514404