সিংগাইর উপজেলার সিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে মাত্র চার জন শিক্ষক দিয়ে। অথচ থাকার কথা সাত জন। প্রধান শিক্ষক নেই আট বছর ধরে। চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। দোতলা ভবন হলেও সীমানা প্রাচীর না থাকায় হাটের দিন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে গরু-ছাগল। লেখাপড়ার মান ও সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীর হারও কমছে। শিক্ষক চাওয়া হচ্ছে কিন্তু কেউ আসছেন না। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এখানে কেউ আসতে চান না। শিক্ষক কম এবং করোনার সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় মাদ্রাসার দিকে ঝুঁকে পড়েছে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী।
এমনটাই বললেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুর রহমান খান বাবু ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন। তারা আরো বলেন, এখানে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। সিরাজপুর বাজারে দুই দিন গরু-ছাগলের হাট বসে। হাটবাজার রাস্তার পাশে হওয়ায় এবং সীমানা প্রাচীর না থাকায় যানবাহন ও গরু-ছাগল ঢুকে পড়ে স্কুলে। শিশুশিক্ষার্থীরা ভয়ে তখন ছোটাছুটি করে। নেই শিক্ষার পরিবেশ।
চার দিকেই খোলা থাকায় রয়েছে চুরির ভয়। তারা আরো বলেন, ২০১৬ সালেও সাত জন শিক্ষক ছিলেন তখন শিক্ষার্থী বেশি ছিল। ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছে তিন জন। ২০১৮ সালে বৃত্তি পায় এক জন। প্রতি বছর পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় হতো ভালো ফল। আন্তঃউপজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়ও মেধা তালিকায় একাধিক শিক্ষার্থী প্রথম স্থান লাভ করে থাকে বিভিন্ন ইভেন্টে। মেধাবী ও খেলাধুলায় চৌকস শিক্ষার্থীরা অন্যত্র চলে যাওয়ায় পরীক্ষার ফল, খেলাধুলা এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতায়ও আশানুরূপ ফল হচ্ছে না। শিক্ষার্থী কমে গিয়ে বর্তমানে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০০ জনে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, শিক্ষক কম থাকায় ছুটিও নিতে পারছেন না দুই বছর ধরে।
এলাকাবাসী ও সুইজারল্যান্ড প্রবাসী হাবিবুর রহমান খান হাবিব বলেন, অবহেলিত এ গ্রামে এক সময় কোনো স্কুল ছিল না। উপজেলার শেষ সীমান্ত এ এলাকায় শিক্ষার হার ছিল একেবারেই কম। লেখাপড়া করার জন্য যেতে হতো অনেক দূরে। ছিল না হাটবাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এমন দুরবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয় মাথায় রেখেই তার দাদা সিরাজ উদ্দিন খান শেরু মিয়া ১৯৬৯ সালে এই বিদ্যালয়টি করার উদ্যোগ নেন।
তার চার সন্তান বাচ্চু মিঞা, বাদশা মিঞা, ফুতন মিঞা ও হামিদ মিঞা শিক্ষিত সমাজ গড়ার এমন ব্রত নিয়ে এই স্কুলের জন্য ৩৬ শতাংশ জমি দান করার মাধ্যমেই এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলটি সরকারীকরণ হয় ১৯৭৩ সালে। শুধু স্কুলই নয়, এর পাশেই তাদের দান করা জমিতেই রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাটবাজার। উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট শেরু মিয়ার হাট নামেই মানুষের কাছে পরিচিত।