১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রিট করে আপিল বিভাগ রায়ের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন ২ হাজারের বেশি প্রার্থী। এ নিবন্ধনে উত্তীর্ণ মোট ১৭ হাজার প্রার্থীর ২ হাজার ২০৭ জন নিয়োগ সুপারিশ করায় বাকিরাও নিয়োগ সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবি আদায়ে আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবেন প্রার্থীরা।
জানা গেছে, ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রিট করে আপিল বিভাগ থেকে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়ার রায় পেয়েছিলেন ২ হাজার ২০৭ জন প্রার্থী। যদিও আপিল বিভাগের রায় চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ করেছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবুও বিচারাধীন এসব পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে প্রার্থীদের। বিচারাধীন পদে নিয়োগ সুপারিশ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এনটিআরসিএর একজন সদ্য সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ছিল নানা অভিযোগ। কিন্তু কিছুই আমলে নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন। রিভিউয়েরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই এ দুই হাজারের বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও এ শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে ১৭ হাজার ২৫৪ প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। রিট করে ২ হাজার প্রার্থী নিয়োগ পাওয়ায় এ নিবন্ধনে উত্তীর্ণ বাকিরাও নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
ননরিটকারী প্রার্থীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা মানববন্ধন করে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়ার দাবি জানাবেন। তাদের দাবি, ‘একই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিছু প্রার্থীকে একক নিয়োগ দিতে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন, তার অর্থ ১৩তম উত্তীর্ণরা সবাই একক নিয়োগের যোগ্য। কিন্তু ননরিটকারীদের নিয়োগের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা এনটিআরসিএ।’ ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ননরিটকারী প্রায় চার হাজার বেকার প্রার্থী শিক্ষক পদে নিয়োগের দাবি জানাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রার্থীরা। তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে আরও বলেন, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) গঠিত হয়। তখন এনটিআরসিএর দায়িত্ব ছিল শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রত্যয়ন (সার্টিফিকেশন) করা। প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেওয়া। এই সনদ মানে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা। তখন নিবন্ধন সনদধারীরাই শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারতেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির নেওয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতেন। কিন্তু ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর এক গেজেটের মাধ্যমে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক পদের নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতা এনটিআরসিএর হাতে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তৎকালীন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরে জারি হওয়া সে গেজেটে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষমতা দেওয়া হয় এনটিআরসিএকে। বলা ছিল, এনটিআরসিএ শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করবে ও নিয়োগ সুপারিশ করবে। পরে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলাভিত্তিক মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ সুপারিশের ফলাফল প্রকাশ করবে। সে প্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার সময় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের নিয়োগ পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিন ধাপে তথা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় অংশ নিয়ে চূড়ান্তভাবে ১৭ হাজার ২৫৪ প্রার্থী এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উত্তীর্ণদের নিয়োগ সুপারিশের আশ্বাস দেওয়া হলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পরে তারা আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে এতেও ফল না পেয়ে ২ হাজার ২৭০ জন প্রার্থী রিট দায়ের করেন।
প্রার্থীরা জানান, দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগ ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ রিটকারী প্রার্থীদের সেই রিটের রায় দেন। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদের বেঞ্চ ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের গেজেট ও পরিপত্র অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে নিয়োগ সুপারিশের নির্দেশনা দেন। এনটিআরসিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আশফাক হুসেন সে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেন। রায় চেম্বারকোর্টে স্টে করা হলে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় (হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনা অনুসারে)। কিন্তু পরে চেম্বারকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার উঠিয়ে দেওয়া হয়। এনটিআরসিএ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। কয়েক দফা শুনানি শেষে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ আপিল বিভাগ ১৩ তমদের নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখার আদেশ দেন। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সে রায় প্রকাশ পায়। রায় প্রকাশের পর এনটিআরসিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন তা রিভিউ আবেদন করেন। সে রিভিউ আবেদন শুনানি না হতেই এনটিআরসিএ রিটকারীদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ননরিটকারী বাকি প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ননরিটকারী প্রার্থী সাইফুল্লাহ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা যখন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিলাম তখন আমাদের নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রিট করিনি। কিন্তু সুপারিশও পেলাম না। সরকার ১৩তম নিবন্ধন পরীক্ষার সময় প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের আশ্বাস দিয়েছিল। আমাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমাদের থেকে কম নম্বর পেয়েও নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন রিট করা প্রার্থীরা।