শিক্ষক হয়রানির অভিযোগ শিক্ষা অফিসের কর্মচারীর বিরুদ্ধে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক হয়রানির অভিযোগ শিক্ষা অফিসের কর্মচারীর বিরুদ্ধে

বরগুনা প্রতিনিধি |

বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী দুলাল কৃষ্ণ মালাকারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, ঘুষ বাণিজ্য, কাঙ্ক্ষিত উৎকোচ না পেলে শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক অফিসার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের ৪৭ জন শিক্ষক। আগেও তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য এবং প্রতারণার অভিযোগে উঠেছিলো। তবে বহাল তবিয়তে একইস্থানে ২৮ বছর চাকরি করে যাচ্ছেন দুলাল কৃষ্ণ।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাপ্য ১৩তম গ্রেডের বকেয়া বিল (২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুন পর্যন্ত) দেয়ার জন্য সদর উপজেলার প্রায় ৬০০ সহকারী শিক্ষকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে অন্তত ছয়লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন দুলাল। 

শিক্ষকদের দাবি, দুলাল কৃষ্ণের দায়িত্বে অবহেলা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব টাকার কাঙ্ক্ষিত উৎকোচ না পাওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকে চেক জমা করেননি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, দুলাল কৃষ্ণ মালাকার দীর্ঘদিন একইস্থানে চাকরি করার সুবাদে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে গেছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়রানির পাশাপাশি যখন যে শিক্ষা কর্মকর্তা আসেন, তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয়। অন্যথায় ওই কর্মকর্তা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেন না। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে দায়িত্বরত আছেন। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং দুর্নীতির অভিযোগের কারণে অন্য স্থানে বদলি করে দেয় শিক্ষা বিভাগ। তবে দুই বছর পর ফিরে এসে আবার আগের পদে বহাল আছেন।

দুলাল কৃষ্ণের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে অবসর প্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মজিদের স্বাক্ষর জাল এবং একই স্বারক ব্যবহার করে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের আদেশ দেন। বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের ২০১৭ খ্রিষ্টব্দের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে একটি অফিস আদেশে ৪৩ জন শিক্ষককে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার গাজী মাহমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা খালেদা আক্তার রিনা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সম্ভবত ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আমার স্থায়ীকরণের কাগজপত্র অফিসে জমা দিয়েছি। তারপর কিভাবে কোন তারিখে অফিস আমার চাকরি স্থায়ীকরণ করেছে তা সঠিক জানানেই। এছাড়াও তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ২২৮টি স্কুলের মধ্যে ৪৮টি স্কুলে কোভিড-১৯ এর সময় বিভিন্ন মালামাল কেনার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ব্যাংক হিসেবের অনুকূলে (জনতা ব্যাংক, বরগুনা শাখা) বরাদ্দ দেয়া হলেও ওই টাকা কর্তৃপক্ষকে দিতে গরিমসি করছেন।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলার কড়ইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, কয়েকজন শিক্ষকের সহযোগিতায় অফিস সহকারী দুলাল বাবুর বেপরোয়া আচরণ, ঘুষ বাণিজ্য এবং শিক্ষক হয়রানি কোন ভাবেই থামছে না। তাকে উৎকোচ না দিয়ে ওই অফিসে কোন কাজ করা সম্ভব হয়না। যদি কোন শিক্ষক তার চাহিদামত উৎকোচ দিতে না পারে, তাহলেই তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দুলাল কৃষ্ণ মালাকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ভুলবশত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই) চেকগুলো জমা হয়নি। এগুলো আবারও পাওয়ার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

 উৎকোচ না দেয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে চেকগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে দুলাল কৃষ্ণ বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৩ বছর সময় লাগে বলে জানান দুলাল কৃষ্ণ। 
 
তবে দু’বছরের আগে কিছু শিক্ষকের চাকরি কিভাবে স্থায়ীকরণের আদেশ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় আছি বরগুনা এসে আপনার সঙ্গে কথা বলবো।

বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. নাছির উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অফিসের উচ্চমান সহকারীর ভুলের কারণে নির্ধারিত সময়ে ৩৯টি চেক ব্যাংকে জমা হয়নি। দু লাল কৃষ্ণের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে সঠিক তথ্য নেই।

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম এম মিজানুর রহমান বলেন, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৯টি চেক জমা দেননি। ভুলবশত নির্ধারিত সময়ে চেক জমা করেননি বলে আমাকে জানানো হয়েছে। তবে এটি দায়িত্বের অবহেলা, তাই এ ব্যাপারে জবাব চেয়ে চিঠি দেয়া হবে।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043549537658691