এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এককালীন অবসর ভাতাখাতে আরো এক হাজার কোটি দিতে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদীর লেখা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে এ টাকা দিতে গত ২৮ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। চিঠির কপি অর্থ ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিবকে দেয়া হয়েছে।
এ খাতে মোট ১ হাজার তিনশ কোটি টাকা অনুদান ও বরাদ্দ দিতে গত জানুয়ারি মাসে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
প্রতিবছর অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এককালীন ভাতা দিতে ফি বছর ৩০০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে। শিক্ষকদের অবসরভাতা দিতে বছরে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা বাবদ প্রতিমাসে এমপিওর ৬ শতাংশ করে কেটে রেখে বছরে পাওয়া যায় ৭৮০ কোট টাকা। বাকি ৩০০ কোটি টাকা পেতে জাতীয় বাজেটে টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে গত দুই বছর ছয় মাসে অবসর সুবিধার জন্য আবেদন করা শিক্ষক কর্মচারীদের ভাতার টাকা দিতে ১ হাজার কোটি টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের মতো পেনশন সুবিধা পান না। এর পরিবর্তে তারা এককালীন কয়েক লাখ টাকা অবসর সুবিধা বাবদ পান। এই টাকা পেতে তাদের এমপিও পদে চাকরিকালীন প্রতিমাসে মূল বেতনের ছয় শতাংশ হারে চাঁদাও দিতে হয়। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের ফান্ডে জমা থাকা টাকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দরকার হয়। বিশাল ঘাটতি পোষাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান ও বাজেট বরাদ্দের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।
জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত ত্রিশ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধার টাকার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এসব শিক্ষকের টাকা দিতে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
জানা গেছে, ঘটতি টাকা মেটাতে বছরে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে জানুয়ারি মাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দেন।
চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান তহবিলে জমা আছে ৭৮০ কোটি টাকা। প্রতিবছর অবসরভাতা দিতে প্রয়োজন ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা, ফলে ঘাটতি থাকে ৩০০ কোটি টাকা।
মন্ত্রী চিঠিতে আরও বলেন, মুজিববর্ষের শেষ প্রান্তে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় প্রায় আড়াই বছর ধরে অপেক্ষমান ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর অবসরভাতা দিতে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা অনুদান এককালীন দেয়া হলে ভাতা পেতে শিক্ষকদের অপেক্ষা অনেকটা কমবে।
অবসর সুবিধা বোর্ডের বিদায়ী সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ অনুদান পাওয়া গেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভাতা পাওয়ার দুর্বিষহ যন্ত্রণা আর থাকবে না। অবসর বোর্ড এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল। একজন শিক্ষক তার স্মার্ট ফোন দিয়ে অবসর সুবিধার আবেদন করতে পারছেন। ‘অবসর’ নামে একটি অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো হয়রানি থাকবে না । কাউকে দালালের খপ্পড়ে পড়তে হবে না।'