উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ একটু বেশি। তাদের প্রারম্ভিক বেতনস্কেল ২২ হাজার টাকা। ১০ বছর পর প্রথম উচ্চতর গ্রেড পেয়ে তাদের বেতনস্কেল ২৩ হাজার টাকা হয়। এই দুটি স্কেলের ব্যবধান মাত্র ১ হাজার টাকা। ১০ বছরে একজন প্রভাষকের বেতন মাত্র ১ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ বছরের হিসেবে ১০০ টাকা করে ১০ বছরে ১ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। স্কুল-মাদরাসারও অনেক শিক্ষক আছেন, যাদের প্রারম্ভিক বেতন ১৬ হাজার টাকা। তারা প্রথম উচ্চতর গ্রেড লাভ করে ২২ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড পেয়ে ২৩ হাজার টাকা স্কেলে উন্নীত হবেন। এ ক্ষেত্রে প্রথম ১০ বছরে তাদের বেতন ৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেলেও পরের ৬ বছরে মাত্র ১ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। এর মানে তারা ৬ বছর পর অতিরিক্ত মাত্র ১ হাজার টাকা প্রাপ্য হন। তাই এ বিষয়টি নিয়ে স্কুল, মাদরাসা ও কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই অসন্তোষটি একান্ত যৌক্তিক একটি বিষয়। জাতীয় বেতনস্কেল প্রণয়নের সময় কেবল বেসরকারি শিক্ষকদের ঠকাবার জন্য এই দুটি ধাপের মধ্যে ন্যূনতম ব্যবধান রাখা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। উচ্চতর গ্রেড চালু হতে না হতেই এ বিষয়টি সবার নজরে এসেছে এবং এর ফলে সৃষ্ট অসন্তোষের বিষয়টি একান্তই যৌক্তিক বলে যে কারো কাছে মনে হবে। তাই অবিলম্বে এর সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।
আরেকটি বিষয় এই যে, উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জন্য এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে ১০ বছর পর প্রাপ্য হবার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়টিতে প্রশ্ন উঠা একান্ত স্বাভাবিক। নানা কারণে একজন শিক্ষক বা কর্মচারীর এমপিওভুক্তিতে বিলম্ব হতেই পারে। অনেক সময় অহেতুক কারণ দেখিয়ে তাদের বিলম্বে এমপিও দেয়া হয়। বেসরকারি অনেক শিক্ষক-কর্মচারী আছেন, যারা ৪-৫ মাস তো বটে, কেউ কেউ ৪-৫ বছর পরও এমপিও পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো বকেয়া বেতন পাননি। যে মাসে এমপিও ধরে দেয়, কেবল সে মাস থেকেই তারা বেতন প্রাপ্য হন। কত বড় অন্যায়ের শিকার তারা? আজ উচ্চতর গ্রেড দিতে গিয়ে তাদের চাকরিকাল যদি এমপিওভুক্তি থেকে গণনা করা হয়, তবে তারা দ্বিতীয়বার আরেকটি বড় অন্যায়ের শিকার হবেন। একজন শিক্ষক এভাবে কতবার অন্যায়ের শিকার হবেন? সুতরাং অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণে যোগদানের তারিখ থেকে হিসেব করে শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর গ্রেড প্রদান করা উচিত। তা না হলে আইসিটি শিক্ষক, শাখা শিক্ষক যারা ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ নভেম্বরের কয়েক বছর পরে এমপিওভুক্ত হয়েছেন, তারা নিঃসন্দেহে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। মাদরাসার আইসিটি শিক্ষকরাতো আরও বহু পরে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই, যোগদানের তারিখ থেকে ১০ বছর ও ১৬ বছর হিসেব করা সমীচীন হবে। এ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ করা গেছে। আইসিটি শিক্ষকরা এ বিষয়ে একত্রিত হচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লক্ষ করা গেছে। করোনাকাল না হলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনই সোচ্চার হয়ে উঠতেন।
উচ্চতর গ্রেড পাবার জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হবে কেন? শিক্ষক-কর্মচারীদের যোগদান কিংবা এমপিওভুক্তির তারিখ অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কি জানা নেই? একান্ত আবেদন করতে হলে এক গাদা কাগজের প্রয়োজন হবে কেন? এটি শিক্ষক-কর্মচারীদের অযথা হয়রানি ছাড়া কিছু নয়। প্রতিষ্ঠান থেকে উপযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য নিয়ে সেটি অটোমেটিক দেয়া যেতে পারে।
উচ্চতর গ্রেড সব শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য উন্মুক্ত করা দরকার। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানরা উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না কেন? যে কোনো স্কেল বা গ্রেডে ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্ণ হলেই যে কোনো শিক্ষক-কর্মচারী যাতে উচ্চতর স্কেল বা গ্রেড প্রাপ্য হন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে বহু শিক্ষক উচ্চতর গ্রেডের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এর সুবিধা সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া অপরিহার্য।
আরেকটি বিষয়ে সামান্য একটু আলোকপাত করে আজকের লেখাটি এখানেই শেষ করতে চাই। যাদের স্কেল বা গ্রেড পরিবর্তন হবে, তাদের পরিবর্তিত স্কেল বা গ্রেডের সাথে অর্জিত ইনক্রিমেন্ট যেন সংযুক্ত করা হয়। উন্নীত স্কেল বা গ্রেড থেকে অর্জিত ইনক্রিমেন্ট বাদ দেবার অবকাশ নেই। এটি যে কোনো শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যক্তিগত অর্জন। এটি কেটে রাখার অধিকার কারো নেই। ইদানিং পরিবর্তিত স্কেলে বিগত বছরগুলোর অর্জিত ইনক্রিমেন্ট যোগ করে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেসরকারি শিক্ষকদের অনেক কষ্টের সাথে এটি আরেকটি দুঃখের বিষয়।
লেখক : মুজম্মিল আলী, অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।