গত ২৭ অক্টোবর প্রথমবারের মত রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হলো শিক্ষক দিবস। কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলো এদেশের শিক্ষক সমাজ। বাবা-মার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। শিক্ষকেরা জাতি গড়ার কারিগর ও নতুন প্রজন্মের পথ প্রদর্শক। সরকারিভাবে এ দিবসটি উদযাপনে শিক্ষক সমাজের মাঝে রাষ্ট্রের ভালবাসার ছোঁয়া তাঁদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। নানা বৈষম্য ও অপ্রাপ্তির মাঝেও বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার তাঁদের অতি আপনজন হিসেবে শিক্ষক দিবসকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষকসহ কর্মকর্তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষক দিবস উৎযাপন করেছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৬ অক্টোবর দায়সারাভাবে দেয়া দিবসটি উদযাপনের নির্দেশনা প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি তাদের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সে নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষার তৃণমূল জেলা, উপজেলা-থানা পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ নিছক দায়সারা কার্যক্রম প্রাথমিক শিক্ষক সমাজকে ব্যথিত করেছে। অথচ মন্ত্রণালয়টিতে সব মন্ত্রণালয়ের চেয়ে সর্বাধিক জনবল কর্মরত আছে। অথচ কাজকর্মে অনেকটা প্রায় ‘মরি মরি’ ভাব।
এর অন্যতম কারণ মন্ত্রণালয়টি অন্য মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত। প্রাথমিক শিক্ষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তার সংকট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা হওয়ার পর ক্যাডার সার্ভিসের পদগুলো বিলুপ্ত হয়ে আছে। প্রাথমিকে ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ। এ অবস্থায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বারবার হোঁচট খাচ্ছে। ঢাকায় জাতীয়ভাবে শিক্ষক দিবস উৎযাপন অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেয়ার কথা ছিলো। নির্দেশকা জারি না করায় জাতীয় অনুষ্ঠানে ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ অংশ নেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়া সারাদেশেও প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ স্বতঃস্ফুতভাবে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।
শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষকদের অংশগ্রহণ করানোর প্রধান দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। পরবর্তী বছরগুলোতে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষক দিবস উদযাপন করার নির্দেশনা প্রত্যাশা করছি।
এ দিবসটি শিক্ষকদের মাঝে বছরে একবার ঘুরে ফিরে আসবে। দিবসটি শিক্ষকদের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা স্মৃতির মাঝে অনেকটা সারা বছরের ক্লান্তি অবসাদ ভুলে জীবনের রঙিন স্বপ্ন দেখার দিন। আর যেন শিক্ষকের যেন দিবসটি আনন্দ ম্লান না হয়। সেদিকে রাষ্ট্র ও মন্ত্রণালয় সদয় দৃষ্টি দেবেন। জয় বাংলা।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষক গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম