শিক্ষকদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে সবাই এককাট্টা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে সবাই এককাট্টা

আমিরুল আলম খান |

তাঁর ক্ষমতা অনেক, বলতে গেলে অসীম ক্ষমতা। অন্তত তিনি তা–ই ভাবেন। কারও সঙ্গে কথাও বলতে তাঁর ভীষণ অনীহা। কারণ, তাঁর কাছে যাঁদের যেতে হয়, তাঁরা পেশায় সরকারি শিক্ষক। শিক্ষকদের সঙ্গেই না ক্ষমতার দাপট দেখানো যায়!

সেই অসীম ক্ষমতার কাছে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের আদেশও কোনো কাজে লাগে।  ভুক্তভোগী শিক্ষকের সংখ্যা ৫৬৩ জন। এর মধ্যে অন্তত ১৫ জন ইতিমধ্যেই ধরাধাম ত্যাগ করেছেন। একজন শিক্ষকের পাওনা কয়েক লাখ টাকা। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন এসব শিক্ষকের পাওনা পরিশোধ করতে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় বাজেট ন্যস্ত করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করেছে। কিন্তু প্রবীণ এই ৫৬৩ জন শিক্ষক তাঁদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছেন না। 

শিক্ষকদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে এ দেশে সবাই তিন পায়ে খাড়া থাকেন। তারই ফলে এ বিপত্তির উদ্ভব। শুরুও প্রায় তিন দশক আগে। তখন যাঁরা সহকারী অধ্যাপক ছিলেন, তাঁরা অধ্যাপক হয়ে অবসরে তো গেছেনই। অনেকে আর এই পৃথিবীতে নেই। তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। বঞ্চিত করা হয়েছিল আইন মোতাবেক টাইম স্কেল না দিয়ে। 

অনেক দেনদরবার করেছেন তাঁরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে। কোনো কাজে আসেনি। তাঁরা যখন অধ্যাপক, তখন তাঁরা কেউ কেউ বেতন পেতেন তাঁরই অধীনস্থ সহযোগী অধ্যাপকের চেয়েও কম। বিষয়টা শেষমেশ আদালতে গড়ায়। হাইকোর্টে রিট হয়। রিট নিষ্পত্তি হয় বঞ্চিত শিক্ষকদের পাওনা পরিশোধের হুকুম দিয়ে। তা–ই নিয়ে আপিল। আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন পুরানা পল্টনের অফিস টালবাহানা শুরু করে। শিক্ষকদের কোনো আবেদন–নিবেদনেই কোনো কাজ হয়নি। এমনকি জমা দেওয়া আবেদনগুলোর ভিত্তিতে ফিক্সেশন পর্যন্ত করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই প্রধান হিসাবরক্ষণ অফিস।

বাংলাদেশে এমন ক্ষমতাধর অফিস আছে। সেখানে বসেন আদালতের চেয়ে লম্বা হাতওয়ালা কর্মকর্তারা। তাঁরা সুযোগ পেলেই শিক্ষকদের ওপর এমন ছড়ি ঘোরান। আইনি-বেআইনি কাগজ চান। তাঁদের খাই মেটায়, এমন সাধ্য অন্তত শিক্ষকদের নেই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষকেরা প্রতিদিন এ অফিসে ধরনা দেন। এ টেবিল–ও টেবিলে, এর কাছে ওর কাছে দৌড়ান। কিন্তু কাজ কিছুই হয় না। নিরীহ শিক্ষকদের পাওনা পরিশোধে তাঁদের বাহানার অন্ত থাকে না।

হায় বাংলাদেশ! একটি স্বাধীন দেশে শিক্ষকদের এমন অবমাননা সর্বত্র। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গেলেই তা খানিক বোঝা যায়। প্রতিদিন সেখানে কোনো না কোনো বঞ্চিত শিক্ষকদের কোনো না কোনো গ্রুপ আন্দোলন করছে। মানববন্ধন, অনশন লেগেই আছে। কিন্তু বধির রাষ্ট্রের কানে সে আর্তনাদ পৌঁছে না। অথচ হক না-হক সুবিধা দিয়ে বশে রাখার কৌশল জারি আছে একশ্রেণির আমলাদের জন্য। কিন্তু শিক্ষকদের জন্য খাজাঞ্চিতে বড় টান পড়ে। লাখ লাখ শিক্ষক নামের শ্রমদাস আছেন এ দেশে। তাঁরা কেউ ২৫, কেউ ৩০ বছর ‘মাস্টারি’ করছেন। কোনো মজুরি পান না। তাঁদের শ্রম শোষণ করে চার কোটি পড়ুয়ার বড়াই দেশে-বিদেশে। এমপিও হয় না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরও নিচে থাকে ‘মাস্টারের মজুরি’। এ এক অদ্ভুত দেশ। কেউ টাকা রাখার জায়গা পান না, কেউ বেঁচে থাকার মতো মজুরি পান না। এ রাষ্ট্রে ক্ষমতাবানরাই উইনার। আর উইনার টেকস অল। এভাবেই চলছে। বছরের পর বছর। সরকার আসে, সরকার যায়, মাস্টারের কপাল খোলে না।

বঞ্চিত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস বরাবর ২ অক্টোবর অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা। সে অভিযোগের না হয়েছে কোনো তদন্ত, না কোনো সুরাহা। তারা নাকি জবাব তৈরি করছে। কবে সেটা পাওয়া যাবে তা আল্লাহ মাবুদ জানেন। 

মনে হয়, এসব বঞ্চিত শিক্ষক ইহজগতে থাকতে পাওনার টাকার মুখ দেখবেন না।
এ দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা কী করতে হবে, তা ঠিক করতে পারেন না। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া বোধ করি তিন দশকের এ পুরোনো পাওনা পরিশোধ করার লোক অ্যাকাউন্টস অফিসে জন্মাবেন না।

লেখক : আমিরুল আলম খান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান। 

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065329074859619