শুধু চাহিদা নিরূপণ করে শিক্ষকদের তিন বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তির প্রত্যাশা পূরণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক নেতারা। তাদের মতে, নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীদের চেয়ে বছরে ২ দিন কম ছুটি ভোগ করলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের ভ্যাকেশন কর্মচারী হিসেবে গণ্য করায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। শুধু চাহিদা নিরুপন করে নয়, প্রাথমিক শিক্ষকদের নন-ভ্যাকেশনাল সরকারি কর্মচারী ঘোষণা করলেই শ্রান্তি বিনোদন ভাতা জটিলতা নিরসন হবে বলে দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষক নেতারা।
দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতিসহ শিক্ষক সংগঠনগুলো ও সাধারণ শিক্ষকরা তিন বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি করছিলেন। তাই তিন বছর পর পর প্রাথমিক শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর মনে করে, সঠিকভাবে চাহিদা না পাঠানো এবং বরাদ্দ ঘাটতিজনিত কারণে শিক্ষকদের শান্তি বিনোদন ভাতা পেতে ৪-৫ বছর লেগে যায়। তাই গতকাল ৫ মে শান্তি বিনোদন ভাতার চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপণ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
এ নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি এবং দৈনিক শিক্ষাডটকমের সম্পাদকীয় উপদেষ্টা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিড়ম্বনার শেষ নেই । সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতি তিন বছর পরপর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়ার কথা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভ্যাকেশনাল কর্মচারী হওয়ায় প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য চাকরিজীবীদের মতো বছরের যে কোন সময় এ ছুটি ভোগ করতে পারেন না। নন ভ্যাকেশনাল কর্মচারী না হওয়ায় ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদন ছুটির অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় রমজানের ছুটি পর্যন্ত। ফলে দেখা যায়, ৩ বছর পূর্ণ হলেও অনেক সময় রমজানের ছুটি না থাকায় এক বছরের ছুটি পরবর্তী বছরে গিয়ে মঞ্জুর হয়। এক্ষেত্রে ৩ বছর পর যে ছুটিটা পাওয়ার কথা প্রাথমিক শিক্ষকরা সেটা ৪ বছর পর প্রাপ্য হয়।
'চাহিদা নিরূপণ করে নয়, শিক্ষকদের নন ভ্যাকেশন কর্মচারী ঘোষণা করলে নির্ধারিত সময়ে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব' যোগ করেন তিনি।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রমজানের ছুটির পরিবর্তে গ্রীস্মের ছুটি বা যেকোনো সময় অবকাশের ১৫ দিন ছুটি রাখা হলে শিক্ষকরা নিয়মিত তিন বছর পরপর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাবে।
এদিকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাসেম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নন-ভ্যাকেশনাল কর্মচারীদের চেয়ে বছরে ২ দিন কম ছুটি ভোগ করলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের ভ্যাকেশনাল কর্মচারী হিসেবে গণ্য করায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, রমজান ছাড়া শিক্ষকদের ১৫ দিনের কোন ছুটি নাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে গ্রীষ্মের ছুটির তালিকা ১৫ দিন ছুটি রাখতে পারে। যা ইতোপূর্বে দুইবার করা হয়েছিল। তখন শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নিয়ে শিক্ষকদের জটিলতা অনেকটাই কমে এসেছিল।
সাধারণ শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আগে ভ্যাকেশনাল আর নন-ভ্যাকেশনাল সকল সরকারি কর্মচারীর জন্য সাপ্তাহিক ছুটি ছিল ১ দিন (শুক্রবার)। প্রাথমিক শিক্ষকদের সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ৭৫ দিন ছুটি থাকত। এরমধ্যে জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষকরা বাধ্যতামূলকভাবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও ঐ দিনগুলো ছুটি দেখানো হয়েছে। জাতীয় দিবসগুলো (৫দিন) বাদ দিলে তখন প্রাথমিক শিক্ষকরা সাপ্তাহিক ছুটি বাদে বছরে ৭০ দিন ছুটি ভোগ করতেন। সর্বমোট বছরে তখন শিক্ষকরা ১২২ দিন ছুটি পেতেন। অন্যদিকে নন-ভ্যাকেশনাল কর্মচারীরা সাপ্তাহিক ছুটি ১ দিন ছাড়াও বার্ষিক সরকারি ছুটিগুলো ভোগ করতেন। বাছরে সরকারি ছুটি গড়ে ২০দিন ধরলেও নন-ভ্যাকেশনাল কর্মচারীরা মোট ছুটি পেতেন বছরে ৭২ দিন। প্রাথমিক শিক্ষকরা তখন নন-ভ্যাকেশনাল কর্মচারীদের চেয়ে ৫০ দিন ছুটি বেশি ভোগ করতেন। তাই শিক্ষকদের তখন ভ্যাকেশনাল কর্মচারী হিসেবে রাখা যৌক্তিক ছিল।
মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে আরও বলেন, বর্তমানে নন-ভ্যাকেশনাল কর্মচারীদের জন্য সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষকদের সাপ্তাহিক ছুটি আগের মতোই ১ দিন রয়েছে। তাই বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকরা আগের মতোই ১২২ দিন বাত্সরিক ছুটি ভোগ করলেও নন-ভ্যাকেশনাল কর্মচারীরা বছরে ছুটি ভোগ করছেন ১২৪ দিন। দুঃখজনক বিষয় যে এখন নন-ভ্যাকেশনাল কর্মচারীদের চেয়ে বছরে ২ দিন কম ছুটি ভোগ করলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের ভ্যাকেশনাল কর্মচারী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এতেই শান্তি বিনোদন ভাতা পেতে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।