রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে ছিল জাতীয়করণ করা প্রাথমিক শিক্ষকদের ভীর।
রায় ঘোষণা শুরু হওয়ার পর থেকে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। এরপর উঁকিঝুঁকি দিয়ে রায় শুনছিলেন শিক্ষকরা। তারা ভেবেই নিয়েছিলেন হাইকোর্টের রায় তাদের পক্ষে আসবে। আর মামলায় জেতার ভাবনা থেকেই আইনজীবীকে দেবেন বলে অনেকগুলো ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছিলেন তারা। কিন্তু বিধিবাম।
হাইকোর্ট বিভাগে ৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকের টাইম স্কেল ফেরত দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র নিয়ে জারি করা রিট খারিজ করে দিলেন।
একইসঙ্গে আদালত অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে রিটকারীদের মামলা করতে বলেছেন।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের এ রায়ের পর শিক্ষকরা মন খারাপ করে অশ্রু ভেজা চোখে আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন তারা।
আইনজীবীদের জন্য নিয়ে আসা ফুলের তোড়াগুলো ফেলে রেখেই চলে গেলেন জাতিগড়ার কারিগররা।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা যায় ফুলগুলো।
সারাদেশে জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকের টাইম স্কেল ফেরত দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র নিয়ে জারি করা রিট খারিজ করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
রায় নিজেদের পক্ষে আসবে ভেবে আদালতে এসেছিলেন শিক্ষকরা।
গত ১৩ জানুয়ারি সারাদেশে জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ হাজার শিক্ষকের টাইম স্কেলের রিট মামলা তিন সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে প্রাথমিক শিক্ষক সমাবেশে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত এক লাখ চার হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতির আদেশে পরিপত্র ও গেজেট প্রকাশ করা হয়। সেই পরিপত্র ও গেজেটের পর জাতীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সরকারের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে আসছিলেন।
কিন্তু গত বছর ১২ অগাস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের টাইম স্কেল ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পরিপত্র স্থগিত করে রুল জারি করেন। রুলে শিক্ষকের টাইম স্কেল ফেরত দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
১৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পরে স্থগিতাদেশ তুলে নিতে শিক্ষকরা আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগ ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে রিট মামলাটি তিন সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন।