শিক্ষকরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ব্রিটেনের ইনডিপেনডেন্ট লেবার পার্টির স্রষ্টা জেমস কেয়ার হার্ডি। তিনি সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ জর্জ অরওয়েলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। বন্ধু জেমস কেয়ার হার্ডির পরামর্শে জর্জ অরওয়েল ইনডিপেনডেন্ট লেবার পার্টির সদস্য হলেন। কিন্তু কিছুদিন পর খেয়াল করলেন, দলীয় সদস্য হিসেবে তার স্বাধীন মত ও মন্তব্য প্রকাশের স্বাধীনতা খর্বিত হচ্ছে। তাই তিনি বন্ধু জেমস কেয়ার হার্ডির সঙ্গে আলোচনা করেই ইনডিপেনডেন্ট লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করলেন। পরে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করলেন। আমরা জানি, জর্জ অরওয়েল রাজনীতিবিদের চেয়ে লেখক হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছিলেন। তার লেখায় সব সময় স্বাধীন মতামত ছিল। সোমবার (২৭ নভেম্বর) দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, আমি মনে করি- বাংলাদেশের কোনো শিক্ষক তার রাজনৈতিক মত ও মন্তব্য অবশ্যই প্রকাশ করবেন এবং তা স্বাধীনভাবে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হবেন না। রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেই তার রাজনৈতিক মত ও মন্তব্য স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবেন না। দলীয় মত ও মন্তব্যকে তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আছে রাজনৈতিকভাবে দলাদলি। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশকে নানাভাবে বিব্রত করছে। তাই আমি মনে করি, রাজনীতি ও শিক্ষকতা একসঙ্গে চলে না। অথবা আমার মনে হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সব সময় রাজনীতিমুক্ত থাকবেন। শিক্ষক রাজনৈতিক দলের সদস্য হলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে তার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

শিক্ষকরা দেশ ও জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করবেন। তা করতে গিয়ে দেশ এবং জাতির যত সংকটময় মুহূর্ত আসবে- এর সবকিছুতেই চিন্তা, মত ও মন্তব্য স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। শিক্ষকদের শ্রদ্ধা ও গুরুত্ব দিতে হবে দেশের সব রাজনীতিবিদের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেটিই করেছিলেন। ১৯৭২ সালে ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন- এই যে যারা অধ্যক্ষ হয়েছেন ও ভিসি হয়েছেন, তারা কেউ আমার ভাই-ব্রাদার নন। সবাইকে তার যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখে আমি নিয়োগ দিয়েছি। শিক্ষা খাতে কোনো রাজনীতি না হওয়াই বাঞ্চনীয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ঘটনার কথা আমি জানি, তিনি কীভাবে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন সাহিত্যিক অধ্যাপক আবুল ফজল।

তাকে আমি মনে করি, তিনি যথাযথ অধ্যাপক। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ। এ তিনজনই ছিলেন অত্যন্ত মেধা ও মননে যশস্বী অধ্যাপক। এ তিনজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুরোধ করে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছেন।

আমরা জানি, এই তিনজন কেমন উপাচার্য ছিলেন। যেমন- আমার নিজের চোখে দেখা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তরুণ প্রভাষক হিসেবে জয়েন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিচ্ছে। তাদের দাবি, অটোপ্রমোশন দিতে হবে। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উত্তর দিয়েছিলেন, You can have auto promotion only over my dead bod। এর প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের টেলিফোন লাইন কেটে দেয়। উপাচার্য মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী ডায়াবেটিকসহ উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু এসে শিক্ষার্থীদের বকাবকি করলেন। স্যারের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন। এই দৃশ্য আমার চোখে দেখা। শিক্ষকদের কী সম্মান করলেন! তার পর ছাত্রদের সরিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী স্যারকে তার গাড়িতে তুলতে চাইলেন। তিনি বললেন, Mr. Prime Minister, that’s your car. I can walk down my home। এই বলে তিনি কয়েক ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হতবাক হয়ে থাকলেন। এই দৃশ্য আমি কোনোদিন ভুলব না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের কী সম্মান করতেন! ওই সম্মান এখন বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল ফজল ও অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ- তারা কেউ কোনোদিন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক মত ও মন্তব্য ছিল। তাই আমি মনে করি, কোনো শিক্ষক কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না। কারণ তারা দেশ ও জনগণের।

লেখক: ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি)

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030219554901123