বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেন তিনি। নিয়মিত অফিস করেন না। নিজের সুবিধামতো সময়ে করেন মাসিক সমন্বয় সভা। সে সভায় কোনো ন্যায্য দাবির কথা বললে ধমক দেন শিক্ষকদের। অকথ্য ভাষায় গালি দিতেও ছাড়েন না। এমনকি গত শিক্ষক দিবসে কোনো শিক্ষককে অংশগ্রহণের নির্দেশনাও দেননি। তার নাম লায়লা পারভীন বানু। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার শিক্ষা অফিসার তিনি। তার অনিয়মে অতিষ্ট সাড়ে তিনশ’ শিক্ষক কুমিল্লা ২ আসনের (হোমনা-তিতাস) সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তাদের অভিযোগের একটি কপি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, লায়লা পারভীন বানু বিদ্যালয়ের স্লিপ ও রুটিন মেরামত থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত থেকে ২ হাজার টাকা ও নিড বেইজড প্লেয়িং অ্যাকসেসোরিজ থেকে ২ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে নানা অযুহাতে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শিক্ষকদের বকেয়া বেতন ভাতা, চিকিৎসাজনিত বকেয়া বিল ঘুষ না দিলে পাস করেন না। শিক্ষকরা উচ্চতর পড়ালেখা করার জন্য পরীক্ষার অনুমতি নিতে চাইলে ২ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এমনকি কিছু শিক্ষকের ১৩তম গ্রেডের বকেয়া বেতন ভাতা দেননি। তিনি বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনেই পাঠদানকারী শিক্ষককে বিভিন্ন অযুহাত দাঁড় করিয়ে অপমান করেন। প্রধান শিক্ষকদের পরিদর্শন বই ও টাকা নিয়ে অফিসে ডেকে পাঠান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজের সুবিধামতো মাসের শেষের দিকে মাসিক সমন্বয় সভা করেন তিনি। সে সভায় কোনো ন্যায্য দাবির কথা বলতে চাইলে ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন। শিক্ষকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। গালিগালাজ করেন। গত ১০ অক্টোবরের মাসিক সমন্বয় সভায় শিক্ষা অফিসার মন্তব্য করেন, অষ্টম শ্রেণি পাস শিক্ষকদের সরকারিকরণ করে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
শিক্ষকদের দাবি, ঢাকা থেকে এসে লায়লা পারভীন বানু নিয়মিত অফিস করেন না। তাই শিক্ষকরা সময়মতো অফিসিয়াল কাজ করতে পারেন না।
শিক্ষকদের অভিযোগ, ওই শিক্ষা কর্মকর্তা রান্না করার সময় পান না। মিড-ডে মিলের কথা বলে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে দুপুরের খাবার খান। বিভাগীয় মামলার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক আছে বলে প্রায়ই শিক্ষকদের ভয় দেখান। চোর, বাটপার ও মিথ্যাবাদী বলে সম্বোধন করেন।
জানা গেছে, ওই উপজেলা শিক্ষা অফিসার গত ২৭ অক্টোবর জাতীয় শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কোনো শিক্ষককে নির্দেশনা দেননি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছাড়াই তাই জাতীয় শিক্ষক দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
বাতাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আক্তার হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা ৩৫৬ জন শিক্ষক সংসদ সদস্যের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছি। তিনি বিষয়টি নিয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছেও অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।
সাহবৃদ্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউল আলম দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, এখনও সংসদ সদস্য অফিসিয়ালি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তবে তিনি সচিবকে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লায়লা পারভীন বানু দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি কোনো অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। স্কুলের বরাদ্দের টাকা যার যার অ্যাকাউন্টে চলে যায়। তিনি সেই টাকা ঠিকমতো উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না সেটা মনিটরিং করেন। করোনার পর স্কুলের শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় তিনি ওইসব শিক্ষার্থীর বাড়ি গিয়ে বুঝাতে আহ্বান করেছেন। সে কারণে ওই শিক্ষকরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারে।
কিছুক্ষণ পরই এ প্রতিবেদককে ফিরতি কল দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা দাবি করেন, তার ভাই একটি শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত। তারপর বলেন, ‘আপনারা কি রিপোর্ট করেন, তা আমি দেখবো।’