ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। টাকা ছাড়া তিনি এমপিওভুক্তি, করোনাকালীন সহায়তার জন্য নন-এমপিও শিক্ষকদের তালিকা তৈরি ও সরকারি বই দেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় শিক্ষকরা। এসব বিষয়ে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
যদিও শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কিছু শিক্ষক তার বিরুদ্ধে এ সব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ ছড়াচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসারকে দেয়া লিখিত অভিযোগে দাবী করা হয়েছে, নন এমপিও শিক্ষকদের করোনা প্রণোদনার ভাতা প্রকৃত শিক্ষকদের না দিয়ে ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দেয়া হয়েছে। শৈলকুপার ১৪ নং দুধসর ইউনিয়নের রাবেয়া খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সালমা খাতুন নামে এক ভুয়া শিক্ষকের নাম দেখিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান এবং ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাহিদুজ্জামান নাহিদ ওরফে নাজমুল আত্মসাৎ করেছেন। শৈলকুপার বেড়বাড়ি ও পুরাতন বাখরবা গ্রামের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা না থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান দুটি মাদরাসার নামে টাকা তুলে নিয়েছেন।
অভিযোগের আরও বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তালিকায় শৈলকুপায় ৬টি ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। এ সব মাদরাসা শিক্ষকদের করোনার প্রণোদনার টাকা প্রদান করা হবে বলে মোবাইল ফোন করে নিজ দপ্তরে ডেকে নিয়ে ঘুষ দাবি করেন শামীম খান। ঘুষ না দেয়ায় কাউকে টাকা দেয়া হয়নি। এই অফিস থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধার কথা শিক্ষকদের জানানো হয় না। শিক্ষকরা অন্য উপজেলা থেকে জেনে কাগজপত্র জমা দিলেও নানা ভুল ধরে ঘুষ দারি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে একজন নারীসহ তার দুজন দালাল রয়েছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট শিক্ষা অফিসার শামীম খানের দুর্নীতি নিয়ে তৎকালীণ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার মেলেনি।
একজন নারী শিক্ষক অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকারি বই নিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয় শামীম খানকে। তিনি ঘুষ দিয়ে সরকারি বই নিয়েছেন।
শৈলকুপার পুরাতন বাখরবা গ্রামের প্রধান শিক্ষক মুমিনুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, যে কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হলেই শিক্ষা অফিসার শামিম খানকে ম্যানেজ করতে বড় অংকের টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া তাকে এমপিওভুক্তি, শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড ও বেতন ছাড়ের ফাইলের জন্য টাকা দিতে হয়।
শৈলকুপার চরপরমান্দপুর মাদরাসার শিক্ষক হাফিজা খাতুন, বিষ্ণুপুর মাদরাসার শিক্ষক মিজানুর রহমান, রাবেয়া খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুমি খাতুন ও কামরুন নাহার অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, একই দপ্তরে ৬ বছর ধরে থাকার কারণে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
রাবেয়া খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুমি খাতুন অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রথম দফায় করোনার প্রণোদনা তালিকায় বাদ পড়লে শিক্ষা অফিসার ভুল হয়েছে বলে এড়িয়ে যান। দ্বিতীয় দফার তালিকাতেও তিনি বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
ননএমপিও শিক্ষক কামরুন নাহার অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বছরের পর বছর আমরা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছি। সরকার আমাদের প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করছে। কিন্তু সেই টাকার লোভও কর্মকর্তারা সামলাতে পারছে না। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ১৬টি দপ্তরে শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এতে কাজ না হলে শাস্তি ও বদলির দাবিতে শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার তাসলিমা খাতুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। নতুন যোগদান করার কারণে দপ্তরিক নানা কাজে বেশ চাপে আছি। তবে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, করোনার প্রণোদনার টাকা ব্যাংক থেকে আসে। এতে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তাদের নাম ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত উপজেলা কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাই আমার বিরুদ্ধে করা ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়।