শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষা নিয়ে সমাজে অনেক কথোপকথন রয়েছে। যেমন শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড, শিক্ষার উদ্দেশ্য চরিত্র গঠন, শিক্ষা আলোকিত মানুষ তৈরি করে ইত্যাদি। কিন্তু সময়ের আবর্তে অতি আধুনিকতার কবলে পড়ে এই ধরনের প্রবাদ বাক্যগুলোর রূপান্তর ঘটেছে। তাই আক্ষেপ করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছিলেন, আমি নিষ্ফলা মাঠের কৃষকের মতো আমার সারা শিক্ষকতার জীবনে ফুল ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছি এবং এই ব্যর্থতার গ্লানি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে কিভাবে আলোকিত মানুষ তৈরি করা যায়। এই উদ্যোগের সাফল্য স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এশিয়ার নোবেল পুরস্কার বলে খ্যাত রেমন্ড ম্যাগসেসি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসারী ছিলাম এবং সেই আদলেই আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছিল। যার মুখ্য উদ্দেশ্য মানবীয় মূলধন তৈরি, যা নৈতিকতার আবর্তে মণ্ডিত। যারা শিক্ষা প্রদান করতেন অর্থাৎ শিক্ষক তারা ছিলেন নিজ নিজ বিষয়ে পণ্ডিত। সেটা স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় হোক না কেন। শিক্ষকের মর্যাদা কিংবা শিক্ষার্থীর মর্যাদা রক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট সতর্ক ছিল এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটি ছিল খুবই পবিত্র। অনেক শিক্ষক তাদের স্বল্প বেতনের টাকা দিয়ে গরিব ছাত্রদের টিউশন ফি দিত। যদিও তাদের পারিবারিক অবস্থা ছিল অসচ্ছল এবং অনেক শিক্ষক ছাত্রদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিতেন পড়াশোনার অগ্র্রগতির ব্যাপারে। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন, অনেকটা পরম আত্মীয়ের মতো।

মফস্বল ও শহরের শিক্ষার মধ্যে কোন গুণগত পার্থক্য ছিল না। বরং অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের স্কুলগুলো থেকে ছাত্ররা বোর্ডের পরীক্ষাগুলোয় মেধা তালিকায় সম্মানজনক স্থান করে নিত অহরহ। যেমন মাদারীপুরের কালকিনি থানার শশীকর হাইস্কুল থেকে ১৯৭০ সালে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন শ্রী অতুল চন্দ্র নাথ। পঞ্চাশের দশকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আখতার হামিদ খান তার স্বল্প বেতনের টাকা নিয়ে কখনও ঘরে ফিরতে পারতেন না কেবলমাত্র দারিদ্র্যপীড়িত ছাত্রদের পড়ার খরচ মেটাতে গিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শান্তিনিকেতন স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব বাংলায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন চাঁদা তোলার প্রত্যয়ে এবং ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে সেই আমলে এক শ’ পঁচিশ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-চিন্তা ছিল প্রকৃতিনির্ভর, যা ছিল নৈতিকতা পুনর্গঠনের বড় হাতিয়ার। এই প্রতিষ্ঠানে বিশ্বের নামী-দামী নেতা-নেত্রীদের সন্তানরা পড়াশোনা করতে আসত। যেমন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কন্যা শ্রীমতী ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী। পরবর্তীতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় এটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-চিন্তার প্রধান অনুশীলক ছিল এই বিদ্যাপীঠ।

এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুস সালাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সুবাদে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর তার শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং এর এক পর্যায়ে শিক্ষকের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেয়ার সময় বিষয়টি মিডিয়ার নজরে আসে। এর ঠিক পরের দিন কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রথম শ্রেণীর দৈনিক ‘আনন্দ বাজার পত্রিকা’র প্রথম পৃষ্ঠায় ‘শিক্ষকের সম্মান’ নামে খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক ভবতোষ দত্ত বলেছিলেন, মফস্বল থেকে আসা এক ছাত্রের মেধার গল্প যে এর আগে কলকাতা শহর দেখেনি এবং সেই ছাত্রের আদি নিবাস পূর্ব বাংলার মানিকগঞ্জে যিনি উনিশ শত আটানব্বই সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন কল্যাণকামী অর্থনীতে অবদানের জন্য, তিনি হলেন নোবেল বিজয়ী তিন বাঙালী মনীষীর একজন অধ্যাপক অমর্ত্য কুমার সেন। যার মাতুলালয় মুন্সীগঞ্জের টুঙ্গিবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে এবং ঠাকুর দাদা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহচর ক্ষীতি মোহন সেন।

এখন সময় অনেক বদলে গেছে। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান। তার থেকে বাংলাদেশের ৪৯ বছরে অনেক রূপান্তর ঘটেছে শিক্ষা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেকে বলেন, আগেকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল কাঁচা মাটির তৈরি, কিন্তু শিক্ষকগুলো ছিলেন পাকা মাটির তৈরি । কিন্তু বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে একেবারে উল্টোটি। অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাকা বাড়িতে, কিন্তু শিক্ষকরা কাঁচা মাটির ওপর দাঁড়িয়ে। শিক্ষা ও শিক্ষক নিয়ে এ ধরনের লোকাচারের ভিত্তিইবা কি তা নিবিড় বিশ্লেষণের দাবি রাখে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে আনুপাতিক হারে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা) এবং মানসম্মত শিক্ষকের সংখ্যা বাড়েনি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্বায়নের নীতিমালা। সেকাল আর একালের চিন্তায় অনেক বড় ধরনের ব্যবধান লক্ষণীয়। পূর্বেকার সময়ে শিক্ষানুরাগী জমিদাররা তাদের প্রজাদের কল্যাণে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন, যা নিজস্ব স্বকিয়তায় শিক্ষা বিস্তারের একটি ভিত্তি তৈরি করেছিল। পরবর্তীতে খ্রিস্টান কমিউনিটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রসারে এগিয়ে এসেছিল, যা এখনও উচ্চমান নিয়ে সুধী সমাজে পরিচিত। পাশাপাশি সরকারী শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের সীমিত সামর্থ্যরে পরিসরে শিক্ষাসেবা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, যা ব্রিটিশ শাসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাকিস্তানী শাসনে আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশী শাসনে আরও ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৪৮ বিশ্ববিদ্যালয়।

পাশাপাশি সরকারী কাঠামোতে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারী কলেজ ও সরকারী মহিলা কলেজসহ কোন কোন উপজেলা সদরে সরকারী কলেজ রয়েছে। এই সাধারণ শিক্ষার বাইরেও প্রায় প্রতিটি পুরাতন/নতুন জেলা সদরে একটি করে মেডিক্যাল কলেজ ও সারাদেশের প্রতিটি বিভাগে কারিগরি কলেজ রয়েছে। অপরদিকে বেসরকারী কাঠামোতে বর্তমানে ১০৭টি বিশ্ববিদ্যালয়, অগণিত কলেজ ও স্কুল রয়েছে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে, যারা সারাদেশের শিক্ষাসেবা মেটাতে সর্বদা ব্যস্ত। সরকার ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের যে সকল উপজেলায় সরকারী কলেজ ও স্কুল নেই সে সকল উপজেলায় একটি করে পর্যায়ক্রমে কলেজ ও স্কুলকে সরকারীকরণ করবে। এই সকল উদ্যোগের পরও শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মান নিয়ে প্রতিনিয়তই আলোচনা হয় বিভিন্ন মহলে। বিশেষত পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে গ্রেড বিস্ফোরণ নিয়ে অর্থাৎ শিক্ষা এখন ফলাফলমুখী, জ্ঞানমুখী নয়। এই সুযোগে বেশ কিছু কোচিং সেন্টার অবাধে শিক্ষা বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে এবং শিক্ষার্থীর অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের দিকে তাকিয়ে অবাধে অর্থ খরচ করছে।

প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফলাফলে দেখা গেছে যে, বিভিন্ন বিভাগে কোটা পূরণ হয়নি। অর্থাৎ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও এই পরিস্থিতি অনেককে হতাশা করেছে। এই ধরনের ফলাফল পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নিতান্তই কম নয় এবং সরকারী পর্যায়েও একটি অঘোষিত নীতি রয়েছে পাসের হার বাড়ানো। সেখানে মানের প্রশ্নটি অবহেলিত। আবার এই প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে মনে হয় শিক্ষার্থীর চেয়ে অভিভাকরাই বেশি উদ্বিগ্ন। বিশেষত সন্তানদের ফলাফল নিয়ে। আবার সিলেবাস নিয়ে কিংবা পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে সরকারী পর্যায়ে। এর ফলশ্রুতিতে অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা এই ধরনের পরিবর্তনগুলোয় Oriented নন। ফলে তারা অনেক ক্ষেত্রে বিরক্ত হয়ে অন্ধকারে সাঁতরাচ্ছেন। আবার বর্তমান সময়ে শিক্ষা পেশা হিসেবে মেধাবীদের বিবেচনায় অনেক পেছনে পড়ে গেছে সত্যি, তারপরও বেতন বহির্ভূত আয় বর্তমানে শিক্ষকদেরও কম নয়।

কথা ছিল সরকারী খাতে শিক্ষা ব্যবস্থা হলো একটি মেধাধর্মী কাজ আর বেসরকারী খাতে শিক্ষা হলো পণ্য (commodity), যা অধিক অর্থ ব্যয়ে উপার্জন করতে হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় ক্ষেত্রে শিক্ষা পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। যেখানে বেপারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক। এই বাণিজ্যে ছাত্র বই ছেড়ে ইন্টারনেটনির্ভর হয়েছে, যা অনেকাংশে নির্ভুল নয়। যদি অল্প কষ্ট করে একটি পাঠ্যসূচী আয়ত্ত করা যায় এবং নিজেদের মধ্যে অবাধে বিতরণ করা হয় তা হলে গ্রন্থাগারে বসে সময় কাটানোর প্রয়োজন কি? এতে করে সীমিত সংখ্যক পড়াশোনা করে যদি বেশি মাত্রার সুবিধা পাওয়া যায় তবে কে কষ্ট করে রাত জাগবে! ছাত্র নং অধ্যয় নং তপ- এই সনাতন ধারণাটি নিয়ে আমরা বড় হয়েছিলাম। বলেছিলাম সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি, রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে, শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম মনে করে এই অধ্যয়ন নিয়ে তারা যে সময় ব্যয় করবে তার চেয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও গেম খেলা কিংবা ল্যাপটপে বসে সিনেমা দেখা অনেক শ্রেয়। এখন প্রশ্ন হলো এই অবস্থায় অভিভাকের ভূমিকা কি? তারা যদি তাদের পোষ্য শিক্ষার্থীর প্রতি যতœবান না হয় তা হলে বিপর্যয় অনিবার্য এবং বাস্তবে তাই ঘটছে। ঘরে অভিভাবক ও বাইরে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক দ্বারা শাসিত হবে এই ধারণাটি চিরাচরিত ছিল ছাত্রদের জন্য। কিন্তু এখন না আছে ঘরের শাসন, না আছে শ্রেণীকক্ষের শাসন। যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা ছিটকে পড়ছে বিপথে।

অপরদিকে শিক্ষার মূল দর্শনের সঙ্গে পাঠদান সূচীর তেমন কোন মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তারপর আবার শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের অসহযোগিতা, বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে। যেমন বর্তমানে একটা রেওয়াজ হয়েছে, প্রাইভেট পড়ানো অর্থাৎ শিক্ষকরা বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাসে তেমন মনোযোগী থাকেন না এবং শিক্ষার্থীদের বাসায় প্রাইভেট কোচিং-এ বাধ্য করানো হয়। যারা এতে সাড়া দেয় তারা বিশেষ সুবিধা পায়। যেমন পরীক্ষার প্রশ্ন বলে দেয়া, বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া ইত্যাদি। আর এই প্রক্রিয়ায় যারা সাড়া না দেয় তাদের ভাগ্যে জোটে উল্টোটা। আর উচ্চশিক্ষার বিষয়টি আরও জটিল। শিক্ষকরা সময়মতো ক্লাসে আসেন না এবং এলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ক্লাস ত্যাগ করেন। যদি কোন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন তাতে শিক্ষক রাগান্বিত হন। শিক্ষার এই ঘাটতি পূরণে ছাত্রছাত্রীরা সমান্তরালভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসের পাশাপাশি প্রাইভেট কোচিং চালিয়ে যায়, যা অভিভাবকদের ঘাড়ে এক বাড়তি খরচের বোঝা। এই ধরনের অনুশীলন শিক্ষকদের নৈতিক ভিত্তির জায়গাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আর শিক্ষাকে করেছে বাণিজ্যিকীকরণ, যা উদার কিংবা বাজার অর্থনীতির কুফল।

শিক্ষা প্রশাসন বিশেষ করে সরকারী পর্যায়ে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। কারণ প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ কিংবা উপাচার্য কারও শিক্ষকদের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই এবং কে কখন ক্লাসে আসা-যাওয়া করেন, সঠিকভাবে ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে কিনা তার কোন পর্যবেক্ষণ নেই। এমন খবরও পাওয়া যায় প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষ কর্মস্থলে অবস্থান করেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা যে জ্ঞান নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিচ্ছে তা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ কিংবা নিজের দেশে চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে সহায়ক হবে না। এই বিপর্যয় জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মকে মেধাহীন করে তুলবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শিক্ষার রেটিং-এ বাংলাদেশ কোন স্থানই করে নিতে পারবে না। তাই এদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমরা একেবারেই মূর্খ লোকদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিচ্ছি। এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্রান্ত রাজনীতির আছর পড়েছে, যা নিয়ে জাতি উদ্বিগ্ন এবং এর একটি বড় কারণ সুস্থ রাজনীতি চর্চার অভাব। বেসরকারী কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ আর সরকারীগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে কোন কার্যকরী ছাত্র সংসদ নেই, যেখানে বসে শিাক্ষর্থীরা সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চায় নিমগ্ন থাকবে।

যা আমাদের ভবিষ্যত নেতা-নেত্রী তৈরির পথে অন্তরায়। আবার শিক্ষা প্রশাসনের অসঙ্গতি তুলে ধরার কোন ফোরাম নেই। দীর্ঘদিন যাবত চলা এই সকল ব্যবস্থা শিক্ষার প্রসারে সহায়ক তো নয়ই, বরং এইক্ষেত্রে আমাদের যে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য তা বিনাশকারী। এর একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান একদিনে সম্ভব নয় এবং বর্তমান সরকার শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও তার সুফল জাতি কি পাচ্ছে? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অতীব রাজনীতিকরণের ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রবেশ একেবারেই সীমিত হয়ে এসেছে। ফলে ‘ভাল শিক্ষক ছাড়া ভাল ছাত্র তৈরি হয় না’ এই প্রবাদটি এখন সনাতন (ড়নংড়ষবঃব)। ভাল শিক্ষক তৈরির একটি উত্তম পথ শিক্ষার সঙ্গে গবেষণাকে সম্পৃক্ত করা এবং শিক্ষক গবেষক তৈরি করা। বর্তমানে দেখা যায় অনেক শিক্ষক আছেন যারা বই লিখে ছাত্রদের মধ্যে বিক্রির ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের, ভুলে ভরা এবং অন্যের বই থেকে অনুকরণ করা, যা কাম্য নয়। ছাত্রদের লাইব্রেরীমুখী করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সব ধরনের আধুনিক সুবিধা সংযোগ করতে হবে। ছাত্র বৃত্তির প্রসার ঘটাতে হবে এবং শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে। তাহলেই সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।

লেখক : ড. মিহির কুমার রায়, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045089721679688