শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে কথা হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অভিযোগ উঠেছে—একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে একই ঠিকাদার বারবার কাজ পাচ্ছে। অনেকে কার্যাদেশ পাওয়ার পর কাজ শুরু করে না। শুরু করলেও কিছুদিন পর ফেলে রাখে। বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ধরনের ল্যাব স্থাপন করা হলেও তার অনেকগুলোই ঠিকমতো ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে সংসদীয় কমিটিতে। ব্যবহার না করে এসব কম্পিউটার চাদরে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে বলেও সংসদীয় কমিটির আলোচনায় উঠে এসেছে।
কিছু ক্ষেত্রে অফিসের কম্পিউটার সভাপতি বা প্রধান শিক্ষক তাদের বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে। অবশ্য বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও ঢালাওভাবে অভিযোগ করা ঠিক হবে না। আমরা মনিটরিং জোরদার করছি। যেসব সমস্যা আছে তা ঠিক হয়ে যাবে। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।কমিটির একাধিক সদস্য আইসিটি ল্যাব পড়ে থাকা ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব করে দেয়া হয়। কিন্তু তার অনেকগুলোই শুরু থেকে চাদর বা টাওয়েল দিয়ে মুড়িয়ে রাখা রয়েছে। এগুলো চালু করা হয় না। আবার কিছু কম্পিউটার গভর্নিং বডির সভাপতি তার বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন। শিক্ষকদেরও কেউ কেউ কিছু কম্পিউটার বাসায় নিয়ে গিয়েছেন। কিছু পড়ে আছে। কাগজে-কলমে আইসিটি ল্যাব দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আইসিটি দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী নেই। সরজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা আইসিটি সম্পর্কে বলতে পারে কিন্তু হাতে-কলমে কিছু জানে না। মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো যথাযথ তদারকি করছে না বলেও তারা অভিযোগ করেন।
এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বৈঠকে বলেন, কাগজে-কলমে যতটা হওয়ার কথা আমাদের এখানে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সেটা হয় না। এক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। মোটেও হচ্ছে না সেটা ঠিক নয়। আমরা মনিটরিং জোরদার করছি। পর্যায়ক্রমে সব ঠিক হয়ে যাবে।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাবের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কতজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তার তথ্যও দেয়া হয়েছে। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় এগুলোয় সঠিকভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয় এসেছে। বলা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে ল্যাব আছে কিন্তু প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। সেজন্য সেটা ব্যবহার হচ্ছে না। আলোচনায় এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে, ল্যাব চালুর পর থেকেই সেটা চাদরে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে, কোনো ব্যবহার হচ্ছে না। সেটার বিষয়ে তদারকি করতে বলা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তসহ চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী দ্বিমত পোষণ করে বলেন, যেসব ক্ষেত্রে অনিয়মের তথ্য আসছে, ইউজিসি তা তদন্ত করছে। তদন্তে অনিয়ম পেলে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হবে।