নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অনলাইন আবেদন গ্রহণ আগামীকাল রোববার (৩১ অক্টোবর) শেষ হচ্ছে। দুই বছর পর নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুসার এমপিওভুক্তির আবেদন করতে না পেরে সারাদেশের এক বিভাগ থাকা ডিগ্রি কলেজগুলোর শিক্ষকরা হতাশ। তারা বলছেন, নতুন করে আবার কবে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারবেন তা তারা জানেন না। সরকারি বেতন-ভাতা পাওয়ার আগেই দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবন শেষ হবে বলেও আশঙ্কা করছেন এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা।
গত ১০ অক্টোবর থেকে এমপিওভুক্তির আবেদন শুরু হয়। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো আগামীকাল ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এমপিওভুক্তির আবেদন করার সুযোগ পাবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইট (www.shed.gov.bd), কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইট (www.tmed.gov.bd), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.dshe.gov.bd), মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.dme.gov.bd), কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.techedu.gov.bd) এবং বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ওয়েবসাইটে (www.banbeis.gov.bd) অনলাইন এমপিও অ্যাপ্লিকেশন (Online MPO Application) শিরোনামে প্রদর্শিত লিংকয়ের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে।
তবে, দীর্ঘদিন এমপিওর আশায় থাকা অনেক ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্তির আবেদনই করতে পারেন নি। কারণ, নতুন এমপিও নীতিমালা অনুসারে তাদের আবেদন করার যোগ্যতা নেই। এমপিওভুক্তির আবেদন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ডিগ্রি স্তরের কলেজের শিক্ষকরা। এখন শেষ মুহুর্তে শিক্ষকরা হতাশ।
শিক্ষকরা বলছেন, নতুন নীতিমালায় ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্তির শর্ত হিসেবে দুইটি বিভাগ থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক ননএমপিও ডিগ্রি কলেজে একটি বিভাগ চালু থাকায় সে কলেজগুলো এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারেনি। দীর্ঘদিন বিনা-বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীরা। নীতিমালা শিথিল করে তারা আবার এমপিওভুক্তি আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা ২০২১ বলা হয়েছে, কলেজের স্নাতক পাস স্তর এমপিও ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুইটি বিভাগ চালু থাকতে হবে। অথচ আগের নীতিমালায় এ রকম নিয়ম ছিল না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলছেন, শুরু থেকেই বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিনটি বিভাগের মধ্যে যেকোনো একটি বিভাগ চালু থাকলেই এমপিও করার নিয়ম ছিল। গত ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দেও ডিগ্রি পর্যায় এমপিওর আবেদনের ক্ষেত্রে এ রকম বিধি ছিল না। কিন্তু নতুন এমপিও নীতিমালায় এ রকম নিয়ম জুড়ে দেয়াতে বিপাকে পড়েছে দেশের এক বিভাগধারী স্নাতক (পাস) কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী।
শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই এসব উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ থেকে ডিগ্রি শাখার খোলার ক্ষেত্রে পাঠদান স্বীকৃতি, অধিভুক্তি ও অধিভুক্তি নবায়ন করা হয়। অনলাইনে এমপিওভুক্তি আবেদন ফরমে দুইটি বিভাগ উল্লেখ থাকায় বিপাকে পড়ছেন তারা। শিক্ষকরা এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দুষছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক লিটন সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, নীতিমালায় জটিলতার কারণে এমপিও আবেদন অনলাইনে করা যাচ্ছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভাগ খুলতে হলে এইচএসসি পর্যায়ে প্রতি বিভাগে কমপক্ষে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ও তিনটি সন্তোষজনক চূড়ান্ত ফল থাকতে হয়। ফলে এখন যারা বিভাগ খোলার আবেদন করবেন তারা কমপক্ষে ৩ বছরের আগে বিভাগ খোলার অনুমতি পাবেন না। জটিল নীতিমালার কারণে গুটিকয়েক কলেজ ছাড়া দেশের সিংহভাগ এক বিভাগধারী ডিগ্রি কলেজই এমপিওভুক্ত হতে পারবে না। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা চরম দুর্দশার শিকার হবে।
মোস্তাক আহমেদ নামে এক ডিগ্রি পর্যায়ের প্রভাষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এমপিও নীতিমালা -২০২১" এর পাদটিকায় বলা হয়েছে স্নাতক (পাস) স্তর এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুইটি বিভাগ থাকতে হবে। অথচ ইতোপূর্বে কখনোই এমন কোনো নিয়ম ছিল না। শুরু থেকেই বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মধ্যে যেকোনো একটা বিভাগ থাকলেই ডিগ্রি স্তর এমপিওভুক্ত করার নিয়ম চালু ছিল। এমনকি সর্বশেষ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দেও অসংখ্য ডিগ্রি কলেজ শুধু একটা বিভাগ নিয়েই এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে নতুন এই নিয়ম জুড়ে দেওয়াটা শুধু অমানবিক ও বেদনাদায়কই নয়, তা অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। তাছাড়া যেখানে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আমাদেরকে একটা বিভাগ খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং অধিভুক্তি নবায়ন করা হয়েছে, সেখানে এমপিওভুক্তির আবেদন ফরমে 'দুইটি বিভাগ' চাওয়া কতোটা যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের বেসরকারি ডিগ্রি কলেজগুলোর মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ কলেজেই শুধু একটা বিভাগ চালু আছে। এ অবস্থায় গুটিকয়েক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সিংহভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারেনি।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন এমপিও নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালা সংশোধন কমিটিতে ননএমপিও শিক্ষক নেতারা ছিলেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
