শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেশে দেশে বিপদ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেশে দেশে বিপদ

বিভাষ বাড়ৈ |

বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনার ছোবলের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে সরকার দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হুট করে শিক্ষাঙ্গন খোলার পথে হাঁটছে না। তবে হঠাৎই কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি তুলেছেন। অথচ পৃথিবীজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। অধিকাংশ দেশেই খুলছে না প্রতিষ্ঠান, আবার আক্রান্ত কিছুটা কমলেই যারা খুলছে তাদের প্রতিটি দেশেই বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ। এমনকি করোনা প্রায় শূন্যে আসার পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে বিপদের মুখে আবার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিটি দেশ। সারাবিশে^ করোনা মোকাবেলায় মডেল হিসেবে বিবেচিত ভারতের কেরালা থেকে শুরু করে ব্রিটেনসহ কোথাও ভাল নয় শিক্ষাঙ্গন খোলার পরিণতি।

বিশ^ব্যাপী করোনার গতি প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে দেশ ও বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনে রাখতে হবে করোনা আক্রান্তের হার আপাত দৃষ্টিতে কিছুটা কমের দিকে এলেও এখনও কেউ ঝুঁকিমুক্ত নয়।

কেবল তাই নয়, একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, যেসব দেশ শিক্ষার ক্ষতির কথা চিন্তা করে হুট করেই শিক্ষাঙ্গন খুলেছে তাদের প্রত্যেককেই আবার তা বন্ধ করতে হচ্ছে আক্রান্ত নতুন করে বেড়ে যাওয়ার কারণে। পৃথিবীর সবচেয়ে কম জনবহুল ও উন্নত দেশও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পরিস্থিতি এখনও সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্ক হতে হবে বাংলাদেশকেই। কারণ এখানে প্রাথমিক থেকে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা উন্নত প্রতিটি দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

কেবল তাই নয়, এখানে শিক্ষাঙ্গন খুলে কোটি কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের ঝুঁকিমুক্ত রাখা একেবারেই অসম্ভব। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা করোনায় শিক্ষার ক্ষতির কথা বললেও একই সঙ্গে অধিকাংশই বলছেন, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যারাই শিক্ষাঙ্গন খোলার কথা বলছেন তারাও স্বীকার করছেন এখনও পরিস্থিতি নিরাপদ নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতিতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো জনবহুল কোন দেশেই বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা উচিত নয় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গবেষকরা বলছেন, গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা এটাই প্রমাণ করে যে ‘সংক্রমণ হার ঝুঁকিমুক্ত না হলে কোন দেশের জন্যই শিক্ষাঙ্গন চালু করা ঝুঁকিমুক্ত নয়’।

খোলার পরিণতি ভাল নয় কোন দেশেরই ॥ করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শিক্ষা সচল রাখতে গিয়ে সর্বশেষ ধাক্কা খেয়েছে ব্রিটেন। বাংলাদেশে করোনার কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করে পরীক্ষার্থীদের অষ্টমের সমাপনী ও মাধ্যমিকের ফল মূল্যায়নে বিভিন্ন মহল সমালোচনায় মুখর। অথচ বিশ^ব্যাপী করোনার কারণে গত সেশনেই ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের পরীক্ষা না নিয়ে আগের ফল মূল্যায়ন করে দেয়া হয়েছে চূড়ান্ত ফল। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষা আগে-এমন চিন্তা থেকে বিশ^ব্যাপী ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে নতুন সেশনেও। ঘোষণা দেয়া হয়েছে গত সপ্তাহেই। আগামী মে-জুনে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

করোনা পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাজ্য সরকার নিজ দেশের পরীক্ষা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত ব্রিটিশ কারিকুলামের উল্লেখিত সেশনের পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষকরা এবার এসাইনমেন্ট, রচনা এবং কোর্স চলাকালীন নেয়া পরীক্ষার ফলের সমন্বয় করে গ্রেড প্রদান করবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, মহামারীর কারণে কোন শিশুর পিছিয়ে পড়া উচিত নয়। এ কারণেই সরকার একটি ন্যায্য ও সহনশীল পদ্ধতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ফলাফল নির্ধারণ করবে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার পরবর্তী ধাপে পৌঁছে যেতে পারবে। করোনার কারণে শিক্ষাঙ্গন সচলের পথে না গিয়ে গত বছরের সামার সেশনের পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছিল। এক্ষেত্রেও করা হয়েছিলে আগের পরীক্ষার ফলে মূল্যায়ন।

সারাবিশে^ করোনা মোকাবেলায় মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা। করোনা মোকাবেলায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে সারাবিশে^ পরিচিত এখন ‘কেরালা মডেল’। কিন্তু সেই কেরালাও আক্রান্ত কমছে এই চিন্তা থেকে শিক্ষাঙ্গন খুলে নতুন করে বিপদে পড়েছে। কেরালায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই শিক্ষার্থীদের নেয়া শুরু হয়েছিল ক্লাসে। কিন্তু স্কুল খোলার পরই দুটি সরকারী স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্কুল দুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কেবল দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়াদের ক্লাস খোলা হয়েছে। তারপরেও রাজ্যের মালাপ্পুরাম জেলায় পাশাপাশি দুটি স্কুলের দশম শ্রেণীর ১৮৯ জন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে স্কুলে ৭০ জন শিক্ষক ও কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। মারানচেরিতে একটি সরকারী স্কুলের ১৫০ শিক্ষার্থী ও ৩৪ জন শিক্ষক এবং পুন্নানি এলাকার ভ্যান্নেরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৯ শিক্ষার্থী এবং ৩৬ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। জানা গেছে, প্রথমে এখানে একজন শিক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার পরই সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্কুলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর করোনা টেস্ট করা হয়েছিল। তার পরেও কিভাবে একসঙ্গে এত শিক্ষক-শিক্ষার্থী কীভাবে আক্রান্ত হলেন এখন পর্যন্ত তার কোন কূলকিনারা করতে পারছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

এখানেই শেষ নয়, স্কুল খোলার পর নতুন করে করোনার ছোবলে পড়েছে মহারাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরাও। খোলার পর রাজ্যের এক স্কুল হোস্টেলের ২২৯ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে ওই হোস্টেলের চার শিক্ষকও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের ওয়াসিম জেলার দেগাঁওয়ের একটি আদিবাসীদের জন্য নির্মিত ভাবনা স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে পাঁচজন শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনা লক্ষণ পাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষা করে এবং ৩০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরে স্কুলের ক্লাস পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৩২৭ শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ২২৯ জনেরই করোনা শনাক্ত হয়।

আক্রান্ত একটু কম হওয়ায় নানা স্বাস্থ্য বিধি মেনে কিছুদিন আগে কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ। তবে স্কুল খুলেই মহাবিপদে পড়ে প্রদেশটি। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ক্লাসে আসছে না। তাতেই ৫৭৫ জন শিক্ষার্থী এবং ৮২২ জন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত একটু কমেছে-এই ভরসায় বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় অঞ্চল উড়িষ্যায় কিছু স্কুল খোলা হয়েছিল নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে। নয় মাস স্কুল বন্ধ ছিল এখানে। সঙ্কট কাটাতে তাই গজপতি জেলার একটি স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছিল দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর। তবে খোলার পরই আক্রান্ত হতে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল খোলে কোলকাতায়। সেখানেও স্কুল খোলার পরেই বিপত্তি। ইতোমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে কসবা চিত্তরঞ্জন হাই স্কুলের এক শিক্ষক। একই সঙ্গে আরও অন্তত ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর করোনার লক্ষ্য দেখা দেয়ায় দ্রুত স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

করোনার মধ্যেই প্রথমে গত বছর জুলাইয়ে কিছু স্কুল খুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই স্কুল খোলার অনুমতি দিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। তবে প্রথম দু-সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিতর্কে পড়ে তখনকার ট্রাম্প প্রশাসন। এক পর্যায়ে ওইসব স্কুল আবার বন্ধ করতে হয়।

তবে আমেরিকান এ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গত জুলাইয়ের ওই দু-সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা কম বলে যে দাবি করা হয় বিভিন্ন সময় আমেরিকান এ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের রিপোর্ট অনুসারে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়।

করোনা না সামলেই গেল বছরের শেষের দিকে স্কুল খুলেছিল জিম্বাবুইয়ে। তবে খোলার পরই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শ’ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। মতাবেলাল্যান্ড নর্থে সীমান্তবর্তী জন তলাচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের এ ঘটনা ঘটে। পরে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ রেখে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল ইতালিতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুল কার্যক্রম শুরু করে দেশটি। তবে পরবর্তীতে সরকারী হিসেবেই দেখা যায়, স্কুল খোলার আগে ও পরে মিলিয়ে অন্তত ১৩ হাজার স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ফ্রান্সে স্কুল খোলার পরই ৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ফ্রান্সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে। দীর্ঘ বন্ধের পর আবার যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছু কিছু খোলা হয় তখনই বাঁধে বিপত্তি। ফ্রান্সে একদিকে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি অন্যদিকে একেকটি শ্রেণীতে হাতেগোনা শিক্ষার্থী নিশ্চিত করা হলেও আক্রান্ত হওয়া বন্ধ থাকেনি। খোলার আগে সিদ্ধান্ত হয়, কিছু দোকানপাট, প্রি-স্কুল এবং এলিমেন্টারি স্কুল খোলা হবে। সে ক্ষেত্রে ঠিক করা হয় কোন ক্লাসে প্রি-স্কুল স্তরে ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকবে না এবং অন্য স্কুলের ক্লাসে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না। এমন কার্যকর পদক্ষেপেও রক্ষা হয়নি।

দীর্ঘ বন্ধের পর গেল বছরের শেষ দিকে খোলা হয়েছিল ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার স্কুল। তবে খোলার পরপরই রাজধানী ভিয়েনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় চার শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন সরকারী দফতরই বলেছিল, ‘খোলার পরই আক্রান্ত হয়নি রাজধানী ভিয়েনায় এমন স্কুল কমই আছে’।

স্পেনেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে খোলা হয়েছিল স্কুল। খোলার এক সপ্তাহের মাথায়ই অর্ধ শতাধিক স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী ইসাবেল সেলা স্প্যানিশ জানান, ৫৩টি স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর কিছু কিছু স্কুল নতুন করে বন্ধ করা হয়। আবার কিছু কিছু স্কুল তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নির্দিষ্ট শ্রেণীকক্ষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠায়।

ঠিক এমন অবস্থায় তাহলে করণীয় কি? বাংলাদেশের মতো জনবহুল শিক্ষাঙ্গনের দেশেই বা কি করণীয়? কি বলছেন দেশী ও বিদেশী গবেষকরা। এসব বিষয়ে বিশে^ এখনও কোন সুনির্দিষ্ট ও চূড়ান্ত কোন গবেষণার রিপোর্ট না এলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গবেষকরা সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের গবেষকরা একমত, আর তা হচ্ছে- সংক্রমণ হার বেশি থাকা অবস্থায় কোন দেশের জন্যই শিক্ষাঙ্গন চালু করা ঝুঁকিমুক্ত নয়। মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সফলতার পর যখন নতুন সংক্রমণ হার স্থিরভাবে পড়তির দিকে অবস্থান করবে, কেবলমাত্র তখনই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হতে পারে, বয়স অনুসারে কোন দেশে কোন শ্রেণীর শিক্ষার্থী কি পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছেন সেই সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত। এর ভিত্তিতে ইউরোপের অনুসরণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এবং সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনেই সীমিত আকারে ক্লাস শুরুর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি বিদ্যালয় কেন্দ্রিক সংক্রমণ শনাক্তে নিয়মিত করোনা পরীক্ষা চালাতে হবে। গবেষকরা আরও বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতিতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো জনবহুল কোন দেশই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরো চালুর কথা ভাবা উচিতও নয়। বাংলাদেশে স্কুল চালু করার মতো পরিস্থিতি কবে হবে, তা নির্ভর করবে পুরো করোনা পরিস্থিতি দুর্বল হয়ে আসার ওপর।

তাহলে বাংলাদেশ কি সঠিক পথেই আছে ॥ করোনা নিয়ে এমন প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন জরিপ ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিব পথেই আছে সরকারের পদক্ষেপ। বিভিন্ন জরিপেও দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা এখনও শিক্ষাঙ্গন খোলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করছেন।

শিক্ষায় ক্ষতি হচ্ছে বলে স্বীকার করলেও এখনও শিক্ষাঙ্গন খুললে কোটি কোটি শিক্ষার্থীকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তাই এখন কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষাঙ্গনের বাইরের কিছু লোকের দাবির প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে নয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।

তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাইরের ব্যক্তিরাও যারা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বললেন তারাও খোলাকে ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে স্বীকারও করছেন। সম্প্রতি এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অবশেষে স্কুল খুলছে: আমরা কতখানি প্রস্তুত?’ শীর্ষক সংলাপে প্রকাশিত অনলাইন জরিপে দেখা যায়, মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সাধারণ মতামত দিলেও তারা মনে করেন, স্কুল খুলে দিলে সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না।

খোলার দাবির আগে বাস্তবতা ভাবার সুপারিশ ॥ যারা শিক্ষাঙ্গন খোলা নিয়ে হঠাৎই হইচই শুরু করেছেন তাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনের বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ। তারা ভেবে চিন্তে আগানোর পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, খোলার পূর্বে আমাদের সবার একবার আমাদের দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়া উচিত। কারণ আমাদের দেশে কেবল পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত করে যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।

প্রতিষ্ঠান খুললেও এর সঙ্গে যাতায়াত করতে হয় আরও প্রায় সমানসংখ্যক অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট মানুষকে। যা বিশে^র অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি।

জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক ও শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শেখ একমরামুল কবির বলছিলেন, ‘খোলার পূর্বে আমাদের সবার দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। এরপর আছে শ্রেণী কক্ষের শিক্ষার্থীর সংখ্যা। আমাদের ক্লাস রুমগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উন্নত সকল দেশের তুলনায়ই কয়েকগুণ বেশি। এক প্রকার গাদাগাদি করে বসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করেন। এক একটি বেঞ্চে তিন, চার বা পাঁচজন করে বসতে হয়। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে এক একটি শিক্ষাঙ্গন। লাখ লাখ শিক্ষার্থী অভিভাবক যাতায়াত করেন। এমন অবস্থার মধ্যে আসলে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয় না। তাই সরকার ভেবে চিন্তেই কাজ করছে। অন্যথায় হুট করে কিছু করতে গেছে মহা সঙ্কটে পড়তে হবে। যেখানে উন্নত দেশগুলোই স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীসহ সবাইকে আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে শিক্ষার্থী এবং দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য। খোলা হলে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় তাদের পরিবারও করোনার ঝুঁকিতে থাকবেন কারণ তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করলে তারাও ঝুঁকিতে পড়বেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আশপাশের দেশগুলো নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে কাজেই করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসার আগে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয় তাহলে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে তখন দেশ নতুন করে সঙ্কটে পড়বে। শোনা যাচ্ছে ভারতে করোনার নতুন একটা ধরন শনাক্ত হয়েছে কাজেই পরিস্থিতি কোন্দিকে যায় সেটা বলা কঠিন। সবকিছু মিলে এখন আমরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি তাই এই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে।

সূত্র: জনকন্ঠ। 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035159587860107