শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট অফিসারের অবৈধ সম্পদ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট অফিসারের অবৈধ সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আতঙ্ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিট অফিসার গোলাম মুত্তুর্জা ও তার স্ত্রী নাজমিন মুন আক্তারের অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক)।

এ কারণে গত ডিসেম্বরে ওই কর্মকর্তাকে সম্পদের নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি সম্পদের হিসাব দাখিল করেন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা। 

দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া ৭১ লাখ ও শ্যালকের কাছ থেকে পাওয়া ৩০ লাখ টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দুদকের।

যে কারণে গত ৮ মার্চ অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেনকে কমিশন থেকে এ বিষয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুদক থেকে পাওয়া এক চিঠি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, অডিট অফিসার গোলাম মুত্তুর্জা ও তার স্ত্রীর দাখিলকৃত প্রতিবেদনে শেয়ার মার্কেটে ব্যবসার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছিল কি না তা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৭১ লাখ ৮ হাজার ২০০ টাকা ও শ্যালকের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণের বিষয়টি বৈধ ডকুমেন্ট দ্বারা সমর্থিত কি না তা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

এজন্য সরেজমিনে পরিদর্শন ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে প্রতিবেদন পেশ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। 

উল্রেখ্য, ডিআইর পরিচালক, উপপরিচালক, পরিদর্শক ও সহকারি পরিদর্শকসহ সব পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদায়ন দেয়া হয়। আর অডিট অফিসার পদে অডিট অফিস থেকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন দেয়া হয়। তবে,  এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন বা তদন্তে গেলে সবাই নিজেদের ‘মন্ত্রণালয়ের অডিটর’ পরিচয় দেন।   

এদিকে, দীর্ঘ বন্ধের পর স্কুল-কলেজ খুলেছে এটা খুবই খুশীর খবর হলেও একইসঙ্গে অডিট আতঙ্ক বাড়ছে সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে। ভয়ে তারা অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করেন না। অতীতে ঘুষের প্রমাণসহ অনেক অভিযোগ জমা দিয়েছেন কিন্তু কোনো ফল হয়নি। উল্টো ঘুষের পরিমাণ বেড়েছে। হয়রানি বেড়েছে। শিক্ষকরা আর তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ জমা দিতে চান না। কয়েকবছর আগে দুদকের হাতে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে মোস্তাফিজুর রহমান নামের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। কোনো উল্লেখযোগ্য শাস্তি এখনও হয়নি তার। অভিযোগকারী শিক্ষকরা হয়রানির মুখে রয়েছেন।   

জানা যায়, গত প্রায় দুই বছর ধরে লকডাউন ও সীমিত পরিসরে স্কুল-কলেজ খোলা থাকাবস্থায় একরকম বন্ধই ছিলো মিনিস্ট্রি অডিট নামে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিট, পরিদর্শন ও তদন্ত। গত সপ্তাহ থেকে অডিট ও তদন্ত শুরু হয়েছে। ডিআইএ আলাদা অধিদপ্তর হলেও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা এখানে পদায়ন পেলেই পরিচয় দেন ‘মিনিস্ট্রির অডিটর’ হিসেবে। বেসরকারি শিক্ষকদের কাছে অডিটর পরিচয় দিলে ঘুষের পরিমাণ বেশি হয়।

তথ্য-প্রমাণসহ মন্ত্রণালয় ও ডিআইএর পরিচালকের কাছে অভিযোগ জমা দিলে বলা হয় সব অনলাইন হয়ে গেছে। অনলাইনে অডিটের নাম করে উপরিমহলের কর্মকর্তাদের এই মর্মে বোঝানো হয় যে, “এখন আর ঘুষ খাওয়ার সুযোগ নেই।” সবাইকে কড়া ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছে ঘুষ না খাওয়ার জন্য। 

শিক্ষা ক্যাডার থেকে ডিআইতে পদায়ন পাওয়া আবদুল্লাহ আল মামুন, উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও পরিদর্শক আজিজুর রহমান ও মো. সোহেলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। 

ডিআইএ নামের এই প্রতিষ্ঠানেই এক লাইভ অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, “ঘুষ খান, সহনীয় মাত্রায় খান।” মন্ত্রীর এই ভিডিও প্রতিবেদনটি তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি টিভিতে একবার প্রচার হলেও পরবর্তীতে শিবিরপন্থী আরেক রিপোর্টার দায়িত্ব নিয়ে প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলে। তবে, দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ পুরো প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়।   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে ডিআইএতে কর্মরত ২৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ঘুষের অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। অপর একটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের শ্যালক সোহেল নামের এই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি! কারণ, অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন আরেক সাবেক ছাত্রদল নেতা যিনি বর্তমানে তার সহকর্মী।   
 
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো বলেছিলেন, “পরিদর্শনে গিয়ে কেউ কেউ টাকা চেয়েছে, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। … খাম রেডি হয়ে থাকে, অনেকে শুধু সেই খাম আনতে যায়, এখনও এটা হচ্ছে অস্বীকার করি না।
“যারা ঘুষ খান, ইজ্জত থাকতে চলে যান। যারা ভালো কাজ করবেন, তাদের পুরস্কার দেব।”

ওই দিন ডিআইএ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেছিলেন, “আপনারা (ডিআইএ) যাদের (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে) পাঠাচ্ছেন, তারা গিয়ে টাকা চাচ্ছেন।

এখন ২০২২ চলছে। কোনো পরিবর্তন নেই। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কোনো কোনো কর্মকর্তা এই দপ্তরে ১২/১৩ বছর ধরেও আছেন। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলিসহ যে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু সেই মন্ত্রণালয় রহস্যজনকভাবে এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। ডিআইএতে নিয়মিত যাতায়াত করছেন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পিও, অফিস সহকারীসহ বড় বড় কর্তাদের আশেপাশে থাকা কর্মচারীরা। লিখিত অভিযোগ জমা হলে সেগুলো বড় কর্তাদের টেবিলে না উঠে বরং অভিযু্ক্ত কর্মকর্তার হাতেই চলে যায়।  

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00341796875