শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
সমন্বিত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ। অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও সম্পন্ন করে উপযোগী সুশিক্ষিত, আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সরকার পর্যায়ক্রমে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ বাস্তবায়ন করছে। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও গুণগত মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করে নতুন প্রজন্মকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশে^র সাথে সংগতিপূর্ণ শিক্ষা, জ্ঞান, প্রযুক্তিগত দক্ষতায় গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সরকার ইতোমধ্যে যে সকল উদ্যোগ গ্রহন করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিন্মে তুলে ধরা হলো।
 
শিক্ষার মানোন্নয়নসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা - জবাবদিহিতা ও শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা আইন প্রণয়ন, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধকল্পে সফল উদ্যোগ গ্রহন করেছে। বিভিন্ন ধরণের বৃত্তি, উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তি বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষায় ঝরেপড়া হ্রাস ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ঝরেপড়া রোধে বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে দুপুরে টিফিন প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
 
প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিকস্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও পরিমার্জন এবং নতুন শিক্ষাক্রম মোতাবেক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন ও পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলপ্রকাশ করা হচ্ছে। যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক প্রনীত হচ্ছে। নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে। কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্তিসহ নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় চারু ও কারুকলা এবং ওঈঞ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
 
শিক্ষাকে মানসম্মত, সর্বব্যাপী ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, এবতেদায়ী, মাধ্যমিক, দাখিল ও এসএসসি স্তরে  প্রায় ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, সাদরি, ত্রিপুরা ও গারো) শিক্ষার্থীর মাঝে নিজ নিজ মাতৃভাষায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। 
 
এমডিজি এর লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বাংলাদেশ পুরোপুরি সফলতা অর্জন করেছে। সকল শিশুদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণের ফলে প্রায় ৯৯% শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ১০০% শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা এবং ঝরেপড়া বন্ধ করে সকলকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখার সক্রিয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বাংলাদেশ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রী সমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সাক্ষরতার হার বর্তমানে ৭৪% ছাড়িয়ে গেছে। 
 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টি-মিডিয়া ক্লাস মনিটরিং এর উদ্দেশ্যে অন-লাইন এ ড্যাশ-বোর্ড চালু করা হয়েছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহশিক্ষা-কার্যক্রমের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত এবং পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী, শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বস্ব ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছর জাতীয় ‘শিক্ষা সপ্তাহ’  কর্মসূচি পালন করে আসছে।
 
শিক্ষর্থীদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার লক্ষ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ পঠন ও সংরক্ষণার্থে বিতরণ করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘জনবল কাঠমো’ ও ‘এমপিও নীতিমালা ২০১৮’ জারী করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ‘মেমোরি অব্ দ্য ওর্য়াল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
 
সকল ধর্ম বইয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ নামকরণ করা হয়েছে। মুখস্থ ও নোট-বই ও গাইড নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে মূল শিক্ষাক্রমকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য পাঠদান পদ্ধতিতে বৈচিত্র ও নতুনত্ব আনায়নসহ উচ্চ মাধ্যমিকস্তর পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। 
 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাবৃদ্ধি, ঝরেপড়া রোধ, শিক্ষার প্রসার, বাল্যবিবাহ রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সমতা বিধানের লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় উপবৃত্তি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপবৃত্তির টাকা অনলাইনে প্রদান করছে।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মেধাবৃত্তির আওতায় প্রাথমিক হতে ¯œাতকোত্তর শ্রেণি পর্যন্ত মেধা ও সাধারণ বৃত্তি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, উপজাতীয় উপবৃত্তি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক উপবৃত্তি এবং পেশামূলক উপবৃত্তি বিষয়ক তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন মেয়াদে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়। ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ হতে ¯œাতকস্তরে উপবৃত্তি বিতরণ করা হচ্ছে। এ ট্রাস্টের আওতায় দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য এবং দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদেরকে অনুদান দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর আওতায় মাধ্যমিক পর্যায়ে আইসিটি’র ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সকল জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি লানিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার সকলস্তরকে সম্পৃক্ত করে আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
 
সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক, অবকাঠামো ও ভূমিসহ যাবতীয় তথ্য অনলাইনে সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণে তথ্যভান্ডার বিনির্মান করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত সকল সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য আপডেট ও সংরক্ষণ, গ্রেডেশন করা, বদলি-পদায়নসহ যাবতীয় কাজ অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি কলেজ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জেলা শিক্ষা অফিস এবং আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বদলি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সকল অফিসে অনলাইনের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। মাউশির ইএমআইএস সেল কর্তৃক প্রস্তÍতকৃত ফরমেট অনুসরণ করা হচ্ছে ফলে শহর থেকে গ্রামের বিদ্যালয় পর্যন্ত সকল অংশীজনদের অনলাইন সার্ভিস সেবা প্রদানের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্লাসরুম ও উপযুক্ত শিক্ষণ-শিখন পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম অধিকতর কার্যকর ও আনন্দময় করতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে  সকল শিক্ষার্থীর জন্য কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেজন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি কলেজে আইসিটি শিক্ষকের পদসৃষ্টি এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এ পদগুলোর পুরণ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সব ক্রয় কার্যক্রম ইজিপি’র মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ ও তার অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থাসমূহে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চলছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে সকল ধরণের শিখন-শিখানো সামগ্রী ও পাঠ্যপুস্তক আপলোড করা হচ্ছে। 
 
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকস্তরের পাঠ্যপুস্তকের বাংলা ভার্সন, ইংরেজি ভার্সন আপলোড করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষাস্তরের পাঠ্যপুস্তক আকর্ষণীয় ও সহজ ব্যবহারযোগ্য করে ই-বুক এ কনভার্ট করে ওয়েবসাইডে আপলোড করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনসহ বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগে ঘঞজঈঅ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঘঞজঈঅ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক  নিবন্ধন সনদ প্রদান করছে এবং শূণ্যপদের বিপরীতে যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচন করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করছে। 
 
তথ্য বাতায়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে ওয়েবসাইট চালু, ডিআইএ মোবাইল অ্যাপস, পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথসহ সংযোগ, ল্যান ও ওয়াই-ফাই জোন স্থাপন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কাঠামো প্রণয়ন এবং সিটিজেন চার্টার দাপ্তরিকক্ষেত্রসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালু করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ডিজিটাল হাজিরা, ই-ফাইলিং চালু, দাপ্তরিক কাজে ইউনিকোড ব্যবহার, দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্পর্কিত কার্যক্রম যেমন: ইলেক্ট্রনিক উপস্থিতি, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণশুনানী গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নীচে এনে পিয়ার ইন্সপেকশন চালুর জন্য একটি সফটওয়ার প্রস্তত করা হচ্ছে। 
 
সেসিপ-প্রোগ্রামের আওতায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক সুপারভিশন এবং বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে কাজ করার জন্য আঞ্চলিক পরিচালক, উপপরিচালক ও সহকারি পরিচালকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি স্কুলের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীদের পিডিএস এর জন্য সফটওয়ার তৈরি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীদের তথ্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।     
                       
পিছিয়ে পড়া  শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে রুটিনের বাইরে নিয়মিত নিরাময়মূলক ক্লাস আয়োজন করা হচ্ছে। জেলায় উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে মাসিক হারে প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষাকে আকর্ষনীয় করার লক্ষ্যে হাতে-কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা বিষয়ে বিজ্ঞান শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সরকারি বিদ্যালয়বিহীন উপজেলা সদরে অবস্থিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। অটিস্টিকসহ সকল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত আরও ৩০ মিনিট এবং বিশেষ ব্যবস্থায় অভিভাবক-শিক্ষক-সাহায্যকারীর সহায়তায় পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। 
 
২০২০ সাল নাগাদ কারিগরি শিক্ষায় ২০ শতাংশ এনরোলমেন্টের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিপ্লোমা কোর্সে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঝউএ-৪ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ণ করা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের বাস্তবায়ন এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির মাধ্যমে অংশীজনের মধ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে ড়হষরহব গচঙ সার্ভিস  নিশ্চিত করা হয়েছে। উপজেলার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। 
 
শিক্ষার সকলস্তরে দায়িত্বপালনরত শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসনের সকল ক্যাটাগরীর সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকার কর্তৃক গৃহিত মহাপরিকল্পনাসমূহ যেমন-২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে উন্নিত হওয়া এবং ২১০০ সালে ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। এটা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ টেকসই ও গঠনমূলক বিনিয়োগ, আর যে দেশ ও জাতি সুশিক্ষিত সে দেশ ও জাতিই উন্নত এবং বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করে মানব সম্পদ গড়ার মধ্যদিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মানসম্মত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকলকে মনোযোগী হতে হবে।   
 
লেখক: প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, পরিচালক, নায়েম
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের - dainik shiksha অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের - dainik shiksha হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা - dainik shiksha মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো - dainik shiksha ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032789707183838