শিক্ষাগ্রহণ ও বিদ্যা আহরণ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাগ্রহণ ও বিদ্যা আহরণ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জীবন এবং শিক্ষা সমভিব্যাহারী। তার রকমফের যা-ই হোক না কেন। উদীয়মান সভ্যতার আলো-আঁধারির কালে শিক্ষা যেমন ছিল, আজও আছে এবং থাকবে হয়তো অনন্তকাল। শিক্ষার ছোট-বড়র তারতম্য নির্ধারণ মূঢ় মানুষের বাহ্যিক বিভাজন মাত্র। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

 

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, তাই বলে শিক্ষাকে জীবন বিমুখ করতে চাওয়া বোধ করি জীবনাভিসারীর কাজ নয়। আমরা নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে শিক্ষার তরি ভেড়াতে চাই। ভাবি না সেই শিক্ষা দিয়ে মানবসমাজ কতখানি উপকৃত হবে। আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষা এবং বিদ্যাকে আমরা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ভাবি, তবে গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে শিক্ষা এবং বিদ্যা পৃথক বিষয়। শিক্ষা মানুষের জীবনের প্রাথমিক অনুভবের বিষয়, আর বিদ্যা অনুভবের শিকড় খোঁজা। মূলত এ দুয়ে বিভেদ নেই। আছে সূচনা এবং অগ্রসরের পরিসংখ্যান। প্রদোষকাল কী ছিল তা ভাবার অবকাশের চেয়ে আগামী দিনগুলো কেমন যাবে—তা ভাবাই বোধ করি শ্রেয়। তাই জীবনের সূচনা থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয় বা নেওয়ার জন্য সক্রিয়। ব্যতিক্রম বোধ করি আমরাই। দেখে আসছি, ভাবছি না।

না হলে এত ভাঙাগড়া ঘটবে কেন! ঘটছে, আমরা যা শিখেছি, তাকেই ভাবছি সেরার সেরা। বিড়ম্বনা এখানেই। নতুন পথে ধাবিত না হয়ে, যা আছে তাই নিয়ে টিকে থাকা হয়তো যায়, কিন্তু অগ্রসর হওয়া কঠিন। অগ্রসর হওয়া হলো নবজীবনের লক্ষণ। পেছন ফেরা যাবে না। তা নয়, তবে সেখান থেকে উন্নত দিনের জন্য মাল-মসলা সংগ্রহ করা। অর্থাৎ কী করলে পরিণতি কী হয়েছে, তা অবগত হওয়া। অথচ সেদিকে আমাদের দৃষ্টি নেই, আছে আপাত কিছু করে দেখানোর কারিশমা আর আত্মশ্লাঘায় ফুরফুরে হওয়া।

প্রাচীন এবং আধুনিক শিক্ষায় তেমন চাক্ষুষ বিরোধ নেই। উভয় শিক্ষায় শ্রম আছে। কালের বিবর্তনে হয়তো শ্রমের উনিশ-বিশ হতে পারে। তবে শ্রম সর্বত্রই আছে। আছে বলেই দৃষ্টিশক্তি না থাকলে শিক্ষা যে পূর্ণ হয় না, তা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন কম। শিক্ষা হলো কায়মনোবাক্যের অর্জন। একটির অভাব অবশ্যই পূর্ণ শিক্ষাকে অপূর্ণ রাখে।

শিক্ষার কোন বিষয়টি কিভাবে অর্জন করতে হবে, তা সর্বদা শিক্ষণীয় না-ও হতে পারে। কিছু বিষয় আছে, যা ঠেকে শেখে। কে শেখাল তার হদিস খোঁজা বৃথা। আর কোন কাজটি পরে, তার একটি পরিমাপ করে নিয়েই মানুষ সামনের পানে এগিয়ে যায়।

কোন কাজটি করলে আমাদের জীবন পরিশুদ্ধতার দোরগড়ায় পৌঁছতে পারে, তা আমরা সবাই বুঝি না। আর বুঝলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের বুঝতে অক্ষম রাখে। মেধা এবং পরিপূরক পয়সাকড়ি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। সব মানুষ মেধাহীনভাবে জন্মায় না। সুযোগ এবং মেধা ব্যক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমরা অনেক মেধাহীন সুযোগ পেয়ে বড়াই দেখাই। তার পরিণতি যে শূন্য, তা নতুন করে প্রমাণের প্রয়োজন নেই। অনেকেই নামডাকের বিদেশপড়ুয়া, সাধারণের মতো মেধাবী নয়, অথচ তারাই বিদেশের দোহাই দিয়ে প্রধান থেকে যজ্ঞ নষ্ট করে। তার বহু নজির আছে। কে জানে, এই মেধা যাচাইয়ের হাতেখড়ি কিভাবে অর্জন করা যায়। আমাদের সর্বনাশের মূল কারণ যে এখানেই, আমরা তা খতিয়ে দেখি না।

বিদ্যা বলি আর শিক্ষা—তা অর্জনের মূল চাবিকাঠি মেধা। এই মেধা পূরণের অন্যতম হাতিয়ার ‘টাকা’। তাই বলে টাকাই সব নয়। ভেতরের শক্তি ছাড়া মেধা পূরণ হয় না। আমাদের ভেতরের শক্তি খর্ব হয়ে গেছে নানা কারণে। আমরা এখন বাইরের খোলস নিয়ে মত্ত। এই মত্ততার পরিণাম নতুন করে জানিয়ে দিতে হয় না। আমাদের যা আছে, তা নিয়েই আন্তরিকভাবে অগ্রসর হলে টানাপড়েন কমে আসবে।

আমাদের অসুবিধা হলো, জাতি হিসেবে আমরা অবিমিশ্র নই। নানা রক্তের সংকরে আমরা মিশ্র। একে এক করা কঠিন। তবে সেই কঠিনের মাঝে থেকে বের করে আনতে হবে জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষণীয় বিষয়ে স্বাধীনতা, তাহলে আমরা মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। পরাধীন থেকে নিজেকে প্রকাশ করা কত কঠিন, তা বাস্তবে না পড়লে বোঝানো সহজ নয়। আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষার প্রতি আগ্রহী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-নির্বিশেষে মানুষকে একটি সম্প্রদায় হিসেবে মেনে নিয়ে সবার মৌলিক স্বাধীনতার মূল্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হলো মানব অগ্রগতির পুরোধা। কাজেই আমরা বাস্তব জ্ঞান দিয়ে সত্যকে মেনে নিয়ে বিদ্যা আহরণে সচেষ্ট হলে আমাদের শ্রম ব্যর্থ হবে না। কারণ, মানতেই হবে শিক্ষা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেখেশুনে আহরণ করা যায়। বিদ্যার সঙ্গে আছে ভাষা এবং মানুষের বহুকালের চর্চার ফল। তা আহরণের জন্য শ্রম প্রয়োজন। নিরবচ্ছিন্ন শ্রম দিয়েই আমরা বিদ্যা আহরণ করতে পারি। আর শিক্ষা চোখ খুললেই পাওয়া যায়। এতে পার্থক্য যেটুকু তা-ই বাইরের, অন্তরাত্মার নয়। অন্তর-বাইরের ব্যবধান ঘুচিয়ে বিদ্যা আহরণে ব্রতী হলে মানুষের অগ্রগতি কখনো ধূলিসাৎ হয় না।

 লেখক : গোলাম কবির, সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032801628112793