শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

আষাঢ়ের রোদ-বৃষ্টি খেলার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এই রোদ তো একটু পরেই বৃষ্টি। স্কুল খোলার দিনক্ষণ নির্ধারণ এবং কোভিডের প্রকোপ বৃদ্ধি তেমনি একটি রোদ-বৃষ্টি খেলাই মনে হচ্ছে। যখন স্কুল খোলার কথা বলা হচ্ছে, তখনই কোভিডের প্রকোপ বাড়ছে। ফলে বারবারই স্কুল খোলার বিষয়টি ভেস্তে যাচ্ছে। আর এই রোদ-বৃষ্টি খেলায় কোমলমতি সোনামণিদের হৃদয় ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তগুলো ক্রমেই তাদের কাছে ফাঁপা বেলুনের মতো অর্থহীন হয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার (২২ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়মের খেলা কত দিন চলবে, তা কারও এ মুহূর্তে জানা নেই। টিকাই একমাত্র ভরসা। কিন্তু শিশুর জন্য একদিকে টিকার প্রচলন এখন যেমন হয়নি, অন্যদিকে টিকা প্রাপ্তির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। আর দেশে টিকা তৈরির কার্যকর চিন্তা তো এখন শুরুই হয়নি। তাহলে কি এই রোদ-বৃষ্টি খেলায় রোদ পরাজিত হতে যাচ্ছে? আর তাই যদি হয়, তবে দেশ এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে যাচ্ছে, যে পরিণতির মাশুল জাতিকে আগামী দশকে দিতে হবে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়ের নীতিনির্ধারকদের একটু নড়েচড়ে বসা দরকার। কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়ে চিন্তা করা দরকার।

টিকার বর্তমান বাস্তবতায় চাইলেও আঠারো বছরের বেশি সব মানুষকে আগামী তিন বছরের মধ্যে টিকার আওতায় আনা যাচ্ছে না। আর শিশুদের টিকার আওতায় আনা তো সুদূরপরাহত। উল্লেখ্য, চীন তিন বা তদূর্ধ্ব শিশুর জন্য টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে এবং ফাইজারসহ আরও কিছু টিকার শিশুদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। তাতে কি আমাদের দেশের শিশুদের আশ্বস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ আছে? এসব টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল হলে এবং বাণিজ্যিকভাবে বাজারে এলে আমাদের মোট টিকা লাগবে প্রায় ৩০ কোটি ডোজের বেশি, যা আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাহলে কি আগামী তিন বছর আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখব? এ বাস্তবতা যখন বুঝতেই পারছি, তখন আমরা কি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব? নাকি বিষয়টি নিয়ে ভেবে কোনো উপায় বের করার চেষ্টা করব? কোনো উদ্ভাবনী পদ্ধতি বের করতে হলেও তো দু-এক মাস সময় লাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এ বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা আমাদের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আছে বলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি।

কোভিড বৈশ্বিক মহামারি হলেও তা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। তা ছাড়া কোভিডের প্রকোপও বিভিন্ন দেশে অনেকটা ভিন্ন হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে বাংলাদেশে এর প্রকোপ ভারত, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ব্রাজিলের মতো হয়নি। কেউ হয়তো যুক্তি দেখাতে পারেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এর একটি কারণ। যদিও তার সপক্ষে গবেষণাভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ রেখে করোনা মোকাবিলার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের লাভ-ক্ষতির বিচারে ক্ষতির অঙ্কটা সহস্রগুণ বেশি হবে, তা যুক্তিশীল কোনো মানুষের অজানা নয়।

প্রতিটি দেশের বেঁচে থাকার নিজস্ব কৌশল আছে। ঘন জনসংখ্যার এই দেশে উন্নত মানবসম্পদই আমাদের একমাত্র ভরসা। ফসলি জমিতে যত্রতত্র বাড়িঘর নির্মাণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগরায়ণের তোপে কৃষিজমি বিপন্ন হতে চলেছে। এই অবস্থার পরিবর্তনে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামী ৫০ বছরে আবাদি জমি শূন্যের কোঠায় পৌঁছার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে দেশ স্থায়ীভাবে চরম খাদ্যঝুঁকিতে পড়বে। শিল্পায়নের ওপর জোর থাকলেও উদ্যোক্তা হওয়ার এবং উদ্যোক্তাকে আকৃষ্ট করার সংস্কৃতি আমরা এখন তৈরি করতে পারিনি। আর পদে পদে বাধা, চাঁদাবাজি এবং অহেতুক হয়রানি তো আছেই। 

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

তাই বিশ্বব্যাংকের ব্যবসাবান্ধব সূচকে সম্প্রতি আট ধাপ উন্নতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৬৮তম অবস্থানে আছে। তবু আমাদের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন অব্যাহত রাখতে হবে। আর কৃষিজীবী, উদ্যোক্তা কিংবা চাকরিজীবী—যা–ই হই না কেন, দক্ষতার তো কোনো বিকল্প নেই। এমনিতেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে। মানব উন্নয়ন সূচকে সম্প্রতি দুই ধাপ উন্নতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৩৩তম। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর বন্ধ থাকলে দক্ষ জনবল তৈরি হবে কীভাবে?

চারদিকে নষ্ট ছাত্ররাজনীতি, মাদক, অশ্লীলতা, ধ্বংসাত্মক ভিডিও গেমে আসক্তি, কিশোর গ্যাংসহ শিশু এবং যুবসমাজ নষ্ট হওয়ার সব উপকরণের ছড়াছড়ি। 

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

আমরা যারা স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের অভিভাবক, তারা তো এ সবকিছুর ভয়াবহতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তবে যাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়ছে কিংবা লেখাপড়ার বৈতরণি পার করেছে, তাদের কথা হয়তো ভিন্ন। এসব বাধার মধ্যেও সাধারণ মানুষের সন্তানদের তো লেখাপড়াটুকুই একমাত্র সম্বল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘকাল বন্ধ থাকায় আজ সেই সম্বলও হাতছাড়া। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

লেখক : ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক।

মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! - dainik shiksha শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ - dainik shiksha ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067830085754395