শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের বিতর্কিতদের শাখা বদল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের বিতর্কিতদের শাখা বদল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

টানা দশ বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে থাকা কতিপয় বিতর্কিত ও ঘুষখোরের শাখা বদল করা হয়েছে। সদ্যসাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দপ্তরে থেকে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। তারা সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে ডোবানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মর্মে শিক্ষাখাতের সবার মুখে মুখে রটেছে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছেন সাবেক মন্ত্রীর দপ্তরের কয়েকজন। বরখাস্তও হয়েছিলেন একজন।  

জানা যায়, মন্ত্রীর দপ্তরে থাকা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও), এপিওসহ ১২ জনকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। ৪ মার্চ ১২ জনকে একযোগে মন্ত্রীর দপ্তর থেকে বদলি করা হয়। জানুয়ারি মাসে নতুন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর  মন্ত্রণালয়ে এটাই বড় রদবদল। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সময় দীর্ঘ সময় ধরে থাকা এই পিও, এপিওদের বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদে যুক্ত স্কুল-কলেজ থেকে ঘুষ খাওয়া, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বদলি, ভর্তি, জিপিএ পরিবর্তন, প্রশ্নফাঁস, চাকরি দেয়ার নামে ঘুষ নেয়া ও ডিআইএর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একযোগে সবাইকে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা  দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দপ্তর বদল করা হয়েছে। এটা অভ্যন্তরীণ ডেস্ক পরিবর্তন। এতে কিছু সুফল পাবেন নতুন মন্ত্রী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শামসুল আলম স্বাক্ষরিত আদেশে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবায়েত হোসাইনকে অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), মন্ত্রীর একান্ত সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মুছিবুল হাসানকে যুগ্ম প্রধানের দপ্তরে, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফকর উদ্দিন তালুকদারকে মন্ত্রীর দপ্তরে, যুগ্ম প্রধানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. শাহ্‌ আলম সিরাজকে মন্ত্রীর একান্ত সচিবের দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। একই কর্মকর্তার স্বাক্ষরে অন্য এক আদেশে মন্ত্রীর দপ্তরের অফিস সহায়ক সজীব চাকমাকে সমন্বয় শাখায়, মো. জলিলুর রহমানকে আইন-১ শাখায়, অফিস সহায়ক মো. আবু হানিফকে বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখায়, অফিস সহায়ক মো. মোকতার হোসেনকে অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-১) শাখায় এবং মন্ত্রীর দপ্তরের সংযুক্ত প্লেইন পেপার কপিয়ার ও ঘুষের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া মোহাম্মদ আলীকে সেবা শাখায় বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. নাহিদুজ্জামানকে প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখা থেকে মন্ত্রীর দপ্তরে, অফিস সহায়ক মো. আবু সায়েমকে  অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-১) শাখা থেকে মন্ত্রীর দপ্তরে, বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখার অফিস সহায়ক শেখ মুক্তার মাহমুদকে মন্ত্রীর দপ্তরে, সমন্বয় শাখার কাজী আনিসুজ্জামান ও আইন-১ শাখার অফিস সহায়ক মো. নুরুজ্জামানকে মন্ত্রীর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে।   

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে রাজধানী একটি স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সেটি খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব ও উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনসহ কয়েকজন। দুইজনকে নগদ টাকা স্কুলের কাগজপত্র উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তদবিরে বাকিরা পার পেয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে তুমুল সমালোচনা ঝড় ওঠার পর দুইজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। দুদকের মামলায় মোতালেব ও নাসির এখন জেলে। মোতালেব ও নাসিরের সাথে নিবিড় যোগাযোগ ছিলো শিবিরপন্থি দুইজন শিক্ষা সাংবাদিকের। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফেসবুক-ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে অপপ্রচার করা একজন ভবঘুরের সাথেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো মোতালেব ও নাসিরের। কারিগরি শাখার একজন উপসচিবও ছিলেন নাহিদকে ডোবানোর অন্যতম ভূমিকায়।  এই সিন্ডিকেটের সাথে শিবিরপন্থি সাংবাদিকদের সাথেও ছিলো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। 

জানা যায়, মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দপ্তরের পিওদের রদবদল করা হলেও মন্ত্রীর দপ্তরের অন্যরা বহাল তবিয়তে থেকে যান। নতুন মন্ত্রী আসার পর শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। যদিও নতুন মন্ত্রী আসার পর এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা হয়। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সরিয়ে দেয়া হলো।   

অপরদিকে নুরুল ইসলাম নাহিদকে ডোবানোর কাজে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালনকারী মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তিনি একই পদে টিকে থাকতে বাগেরহাট অঞ্চলের একজন সাংসদকে দিয়ে নতুন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তরে তদবির করিয়েছেন বলে জানা যায়। নিজ পদে টিকে থাকতে এই বিতর্কিত অতিরিক্ত সচিব ছাত্রলীগের সাবেক একজন সভাপতিকে দিয়েও তদবির করিয়েছেন।  শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলি করে টাকা কামানোর অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতির বিরুদ্ধে। 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068109035491943