করোনার কঠিন ছোবলে উন্নয়নের নিয়ামক সূচকগুলো স্থবিরতার আবর্তে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে। মানুষের প্রতিদিনের যাপিত জীবনও অনিশ্চয়তার বেড়াজালে। কারণ করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণ রোধ করা অসম্ভবের পর্যায়ে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা ঠেকানোর উপায়কেও গণমানুষ না মানার যে অপসংস্কৃতি দেখিয়ে যাচ্ছে তাতে নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ আপাতত কাউকে স্বস্তি দিচ্ছে না। শিক্ষা কার্যক্রমও চরম দুঃসময় অতিক্রম করছে। শিক্ষা কার্যক্রমও তার স্বাভাবিক ও নিয়মমাফিক গতি ফিরে পাবে তাও ধারণা করা মুশকিল। চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। যা ছুটির আবর্তে পড়ে সেই ১৭ মার্চ থেকে। রোববার (১৬ আগস্ট) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯-এর প্রথম সংক্রমণ দেখা দেয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। চীন ভয়ঙ্কর আক্রান্ত উহানকে তার অন্যান্য নিরাপদ স্থান থেকে একেবারে অবরুদ্ধতার কঠিন জালে আটকে দেয়। পরবর্তীতে এই মহামারীটি পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও তার সর্বগ্রাসী থাবা বসাতে শুরু করে। তেমন দুঃসহ ক্রান্তিকাল অতিক্রমের কঠিন সময়ে বাংলাদেশও করোনা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে ব্যর্থ হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত করোনা সংক্রমণকে ঠেকাতে প্রাসঙ্গিক ওষুধ দুর্লভ হলে তা মূলত স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে যখন এই রোগ চিহ্নিত হয় ততদিনে এই কালব্যাধি থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে বিভিন্নরকম স্বাস্থ্যবিধিও সামনে চলে আসে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বহু স্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনাকে আটকাতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বারবার সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে। বাংলাদেশে প্রথম থেকেই যথেষ্ট সাবধানতায় রোগটিকে ঠেকানোর প্রাসঙ্গিক নিয়ম-কানুনকে সেভাবে তোয়াক্কা করা হয়নি। সঙ্গত কারণে সংক্রমণের উর্ধগতিকেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। এ বছরের শুরুতে মাত্র এসএসসি পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা বোর্ড কার্যক্রমের আওতায় সমাপনী পর্ব শেষ করতে পেরেছে। মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে অন্য পরীক্ষা শুরুই হতে পারেনি। তার ওপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হলে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান থেকে আরম্ভ করে প্রাসঙ্গিক পরীক্ষাগুলোও আটকে যায়। ছুটি যখন দীর্ঘস্থায়ী সময়ের কবলে তখন নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হয় অনলাইনভিত্তিক ক্লাস নেয়ার, যা সংসদ টিভির মাধ্যমে তার কার্যক্রম শুরু করে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদান প্রক্রিয়া চালু করা হলে সবক্ষেত্রে তা অবারিতও হতে পারেনি। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির সমস্যায় পড়লে অনেকেই এ কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়। গ্রামেগঞ্জে টিভি থাকলেও সংসদ টিভি দেখা যায়নি তথ্য প্রযুক্তির নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের অভাবের কারণে। আবার কেউ কেউ মনোযোগী হতেও ব্যর্থ হয় এই নতুন পাঠক্রমে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে যায়।
আগস্ট মাস শেষ হতে চলল। বছরের আর মাত্র চার মাস বাকি। সেপ্টেম্বরে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয় তাহলে ৭০ কার্যদিবসে ক্লাস নেয়া হতে পারে। সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে ৫০ দিন ক্লাস করার সুযোগ থাকে। পরবর্তীতে অসম্ভবের পর্যায়ে গেলে সে সময় আরও কমে যাবার আশঙ্কা। সঙ্গত কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পুরো শিক্ষা কার্যক্রম। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরী। তার ওপর প্রতিদিনই করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। স্বল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি আদৌ মানতে পারবে কিনা তেমন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সামনে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা। সেখানেও শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার কবলে। অসম্ভবের সর্বশেষ পর্যায়ে অটো প্রমোশনেরও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে কোনকিছুই এখনও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা মুশকিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় সুরাহার পথও চিহ্নিত করা যাবে। বর্তমান ক্লাসের অসম্পূর্ণ পাঠ পরবর্তী শ্রেণীতে কিছুটা হলেও পূরণ করার কথা ভাবছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাও সময়ের অপেক্ষায়। যৌক্তিক এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচীতে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতায় বিবেচনায় রাখতে হবে, যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসম্মত উত্তরণ সর্বাধিক গুরুত্ব পায়।