নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত না দেওয়ায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদুক। দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বাদী হয়ে বুধবার মামলাটি করেন।
এজাহারে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ৬৯ হাজার ২৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়া সত্ত্বে ও পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা ফেরত দেননি তিনি। রেজাউল করিম রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খয়েরহাট এলাকার মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রেজাউল করিম বিলমাড়িয়া মহাবিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। বিলমাড়িয়া মহাবিদ্যালয়ের ২০২০ ও ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা ফরম পূরণ করেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর কারণে সশরীরে পরীক্ষা বাতিল করা হয়। পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে মোতাবেক বিলমাড়িয়া মহাবিদ্যালয়ের ২০২০ সালের পরীক্ষার্থীদের ২৭ হাজার ৯৭৫ টাকা এবং ২০২১ সালের পরীক্ষার্থীদের ৪১ হাজার ৪৮ টাকা (সর্বমোট ৬৯ হাজার ২৩ টাকা) ফেরত দেয় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এই টাকা তৎকালীণ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের নামে চেক প্রদান করে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই টাকা তিনি ব্যাংক থেকে তুললেও পরীক্ষার্থীদের ফেরত দেননি।
এদিকে, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী টাকা ফেরত পেতে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কয়েকজন পরীক্ষার্থী রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২০ ও ২০২১ সালের ফরম পূরণের ৬৯ হাজার ২৩ টাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা জানিজানি হলে ম্যানেজিং কমিটি রেজাউল করিমকে টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ফেরত দিতে চাপ দেয়। কিন্তু তিনি সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এমন পরিস্থিতে পরিচালনা কমিটির সদস্যরা অধ্যক্ষের কক্ষে গত ৫ জানুয়ারি ডেকে এনে তার কাছে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা ফেরত দিতে বলেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। গত ৬ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষেও পদ থেকে অব্যাহতি পেয়ে একই কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে ফিরে যান রেজাউল করিম।
এরপর পরীক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মাইনুল ইসলাম নাটোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের সঙ্গে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তের রেজুলেশন, ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক দাখিলকৃত বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর দরখাস্ত, জাতীয় পরিচয়পত্রের ছায়ালিপি, ব্যাংক এবং বোর্ড থেকে দেওয়া স্টেটমেন্ট সংযুক্ত করা হয়। অভিযোগটি আমলে নিয়ে আদালতে স্পেশাল মামলা (নং ১/২০২২) হিসেবে রেজিস্ট্রিভুক্ত করা হয়।
অভিযোগটি তফসিলভুক্ত হওয়ায় আদালত গত ১৮ জানুয়ারি দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পাঠান। পরবর্তীতে মামলা গ্রহণের সিদ্ধান্তের জন্য দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয় গত ২৫ জানুয়ারি প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। গত ২৩ মার্চ মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয় দুদক।
দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, পরীক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্তে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে।