শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে ভুয়া খবরে বিরক্ত সরকার - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে ভুয়া খবরে বিরক্ত সরকার

এনামুল হক প্রিন্স |

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নামে একটি ভুয়া নির্দেশনা ছড়ানো হয়েছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। আর ওই ভুয়া নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এবং বাংলাদেশি সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাক, মানবজমিন ও সময়ের আলো। এসব প্রতিবেদনের ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

গতকাল সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভুল প্রতিবেদনের কড়া প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক মূল্যায়ন পদ্ধতি বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় যে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে সে ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টগোচর হয়েছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করলে, অধিদপ্তর জানায়, এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে উক্ত বিষয়ে কোনো নিদের্শনা দেয়া হয়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে, প্রাথমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিশুদের সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়ে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। সংবাদ প্রকাশের আগে প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করলেই প্রকৃত তথ্য জানতে পারতেন। মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করে আগামীতে যে কোনো সংবাদ প্রকাশের আগে প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক মূল্যায়ন পদ্ধতি’ বিষয়ে স্বাক্ষরবিহীন একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়ায় সম্প্রচার করা হচ্ছে যা অনভিপ্রেত ও অসত্য। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এখনো পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। উপযুক্ত সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে। এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর রাতে ভুয়া ওই নির্দেশনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কর্মরত নজরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক। ভুয়া সেই নির্দেশনাটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শিক্ষকরা তা ছড়িয়ে দিতে থাকেন বিভিন্ন গ্রুপে।  

ভুয়া সেই নির্দেশনায় দাবি করা হয়, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের বোর্ডে প্রশ্নপত্র লিখে মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। কোনো শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অধিক হলে সেক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র হাতে লিখে ফটোকপি করা যেতে পারে। প্রশ্নপত্র ফটোকপির প্রয়োজন হলে বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক খাত থেকে ব্যয় করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন গ্রহণ করা যাবে না। চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাদা কাগজ বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য পূর্বেই শিক্ষার্থীকে অবহিত করতে হবে। মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো মূল্যায়ন ফি গ্রহণ করা যাবে না। ভুয়া সেই নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি ও অপারেশন উইংয়ের পরিচালক মনিষ চাকমার নাম থাকলেও তাতে কোনো স্বাক্ষর ছিলো না।

পরদিন ১৪ নভেম্বর সকালে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি ও অপারেশন উইংয়ের পরিচালক মনিষ চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই নির্দেশনাটি ভুয়া। কে বা কারা ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এ ধরনের নির্দেশনা জারি হয়নি। যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে সে নির্দেশনা সঠিক নয়। 

বিষয়টি নিয়ে ১৪ নভেম্বরই দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম  ‘শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে অধিদপ্তরের প্যাডে ভুয়া নির্দেশনা’  শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা ছিলো, ‘শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্যাডে যে নির্দেশনাটি শিক্ষকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছেন তা ভুয়া ও অসত্য বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো একটি নির্দেশনা  মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হলেও অধিদপ্তর থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। মূল্যায়নের বিষয়ে নির্দেশনার জন্য ড্রাফট করা হচ্ছে। তবে, কোনো একজন শিক্ষক ওই ড্রাফটের একটি খণ্ডিত অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছেন।’

কিন্তু ভুয়া সেই নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে গত ১৬ নভেম্বর ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে অর্থের অভাব! প্রশ্ন ব্ল্যাক বোর্ডে, উত্তরপত্রের কাগজ শিক্ষার্থীর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম ‘সময়ের আলো’। প্রতিবেদক নাম এম মামুন হোসেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রিত একটি মেসেঞ্জোর গ্রুপে সেই প্রতিবেদনটি ১৬ নভেম্বর সকাল দশটা ৫৯ মিনিটে শেয়ার করেছেন মামুন হোসেন। প্রতিক্রিয়ায় জনসংযোগ কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘আমি পড়লাম। আমাদের মন্ত্রণালয়ের পেইজ এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করছি।’ 

 এর পরের দিন ১৭ নভেম্বর জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘ডয়েচে ভেলে’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘প্রশ্ন ব্ল্যাকবোর্ডে, বাড়ি থেকে উত্তর লেখার খাতা’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে প্রতিবেদক হারুন উর রশীদ স্বপন লেখেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের টাকায় টান পড়েছে। এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় তাই তাদের ছাপানো প্রশ্ন না দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেয়া হবে।’ 

একই দিনে দৈনিক ইত্তেফাক ‘প্রশ্ন ব্ল্যাকবোর্ডে, বাড়ি থেকে উত্তর লেখার খাতা’ শিরোনামে একই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত ১৮ নভেম্বর দৈনিক মানবজমিন ‘প্রশ্ন, খাতা না দেয়ার সিদ্ধান্তে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 
এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে অধিদপ্তরে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছিলো। সে নির্দেশনায় বলা হয়েছিলো, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির খুদে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ে বার্ষিক বা তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরে। আর ক্লাস টেস্ট থেকে ৪০ নম্বর যুক্ত হবে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মোট ১০০ নম্বরের পাঁচটি বিষয়ে বার্ষিক মূল্যায়ন হবে। এসব ক্লাসটেস্টে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জ্ঞানের প্রয়োগ, শোনা, বলা, পড়া ও লেখার দক্ষতার পরিমাপ হবে। দেশের ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই দিনে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। যা নিয়ে ‘প্রাথমিকে বার্ষিক পরীক্ষা ৬০ নম্বরে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকম।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034468173980713