ছাত্রজীবনে পড়াশোনার খরচ মিটানোর জন্য প্রয়োজন মাফিক অর্থ উপার্জন শিক্ষার্থীর পথ চলাকে সুগম করে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলে। কুমিল্লা জেলার শ্রীকাইল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও কলকাতার বেঙ্গল কমিউনিটি ঔষধ কোম্পানির মালিক, স্বর্গীয় ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্তের কথা আমরা অনেকেই জানি। তিনি শ্রীকাইল প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময়ে পিতার সঙ্গে মাঠে কৃষি কাজ করতেন। কুমিল্লা জেলা স্কুলে পড়াকালীন চকবাজারে শাক-সব্জির দোকান চালাতেন, আর মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন খিদিরপুর ডকইয়ার্ডে কুলির কাজ করে খাওয়া ও পড়ালেখার খরচ চালাতেন। ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্ত দারিদ্র্যের সঙ্গে কঠোর সংগ্রাম করেছেন বটে, মৃত্যুর পূর্বে তাঁর সমগ্র জীবনের অর্জিত সম্পত্তি দেশ ও দশের জন্য ট্রাস্ট গঠন করে দান করে রেখে গেছেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের পর উচ্চশিক্ষার জন্য বাড়ি থেকে অনেককেই দূরে যেতে হয়। বিপদের সময়ে শিক্ষার্থীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্যই আজকের এই লেখার উদ্যোগ। ইউরোপ, আমেরিকায় এমনকি এশিয়ার অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচ পিতামাতাকে দিতে হয় না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণের ফাঁকে ফাঁকে বা ছুটিতে কলকারখানায়, ফার্মে, রেস্তোরায় ও মাঠে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। বিশেষত আমেরিকায় ফসল ফলানো ও কাটার জন্য ৪ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। আমাদের দেশেও পর্যায়ক্রমে সে ধরনের প্রথা শুরু হওয়া দরকার। সুতরাং প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই নিজে স্বাবলম্বী হয়ে জাতিকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার মানসিকতা পোষন করা দরকার, কারণ তারাই জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী।
শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জন করে অস্বচ্ছল অভিভাবকদের উপর থেকে কিছুটা চাপ কমিয়ে আনতে পারে। প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনার সময় আয় করার কথা ভাবতে হয় না। মাধ্যমিক স্তরে অনেকেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার উদ্দ্যেশ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে থাকেন। উচ্চ-মাধ্যমিক স্তর হলো পড়াশোনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সংক্ষিপ্ত সময়। এই অবস্থায় এসে কিছু করতে চাইলেও সময়-সুযোগ ও যোগ্যতার অভাবে তা হয়ে ওঠে না। মূলত উচ্চশিক্ষাস্তরে অধ্যয়নকালের সময়টাই হলো কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে আয় শুরু করার উত্তম সময়।
উচ্চশিক্ষাস্তরে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সতীর্থ ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, ছোট-খাটো শখ মিটানো, ম্যাগাজিন বা বইপত্র কেনা, বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া, কোথাও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা দেয়া বা গ্রুপ ওয়ার্ক করা, স্মার্ট ফোন, গেমিং সফটওয়্যার, হাল-ফ্যাশানের পোশাক ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। এ প্রয়োজনগুলো তাদের চলার পথকে স্মার্ট করে তোলে। এই জন্য অল্প সময় ব্যয় করে গঠনমূলক কাজ করে কিছু টাকা যদি উপার্জন করা যায় তাতে মন্দ কী?
পড়ালেখার পাশাপাশি প্রয়োজন মতো টাকা আয়ের সনাতন ধ্যান-ধারণা ছিল টিউশনি। টিউশনি যে শুধু টাকা আয়ের জন্যই করতে হবে তা নয়, বরং এ কাজটি জীবনে এনে দেয় আনন্দ, বিচিত্র অভিজ্ঞতা যা ভালো চাকরি পাওয়ার ও নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য খুবই প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থী যদি পড়ালেখার পাশাপাশি যৎসামান্য উপার্জনের লক্ষ্যে টিউশনি করে, সেটাকে আমি অনৈতিক মনে করি না। ইদানিং টিউশনির বিকল্প হিসেবে বেশ কিছু জনপ্রিয় সম্ভাবনার ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। এগুলো ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার অনুষঙ্গ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আজ আমরা দেখব কী কী উপায়ে একজন শিক্ষার্থী প্রয়োজন মাফিক অর্থ উপার্জন করতে পারে।
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশাববিদ্যালয়, পলিটেকনিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকারী অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটে গেম খেলে বা মুভি দেখে সময় পার করছেন। তারা এই করোনাকালে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু গঠনমূলক কাজ করে আমাদের সমাজ ও দেশকে অনেকটাই অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে পারে। একজন শিক্ষার্থী কীভাবে ইন্টারনেট থেকে টাকা উপার্জন করে নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন মিটাতে পারেন নিন্মে তা আলোচনা করা হলো-
(ক) ফ্রিল্যান্সিং : বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবচাইতে আলোচিত শব্দ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং, যার অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে ঘরে বসে আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ফ্রিল্যান্সিং। দেশের মোট লোকসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশই তরুণ, এর মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার। যেহেতু পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না, সেহেতু বর্তমান সময়ে বিকল্প ক্যারিয়ার হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক জরিপমতে, বাংলাদেশে এখনই ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। সংখ্যাটা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিভাগ নেই। ধরে নেয়া যাক, আপনি আঁকতে ভালোবাসেন, তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা ফটোগ্রাফি শিখুন; গণিতে ভালো হয়ে থাকলে প্রোগ্রামিং কিংবা ওয়েব ডিজাইনিং শিখুন। তবে যা শিখবেন বেসিক লেভেলে না শিখে পেশাদার হওয়ার জন্য শিখবেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে আমেরিকাসহ যে কোনো দেশের যে কারো কাজ করে দেয়া যায়। হাজার হাজার কাজ আছে, অ্যাপস-এ গেলেই এ সম্পর্কে জানা যায়। যে ব্যক্তি যে কাজে বেশি দক্ষ সে সেই কাজই পাবেন। যেমন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, এমনকি কোনো বড় কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে দিতে পারেন ইত্যাদি।
আমি মনে করি ফ্রিল্যান্সিং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মহৎ জব। কেননা এখানে নেই কোনো বাঁধাধরা সময়, নেই কোনো ইনভেস্ট করার বাধ্যবাধকতা, যতটুকু সময় দিয়ে কাজ করবেন সে অনুযায়ী সম্মানি পাবেন। যেহেতু বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে হয় তাই ভালো ইংরেজি জানা দরকার। ফ্রিল্যান্সিং-এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই, ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করলেই হলো। ফ্রিল্যান্স সাইটগুলির মধ্যে Up-Work, Odesk, Freelance, Fiber, Guru ইত্যাদি এ রকম অসংখ্য সাইট রয়েছে।
(খ) ব্লগিং বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং : অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যত ধরনের কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও সুন্দর এবং আজীবন টাকা আয়ের মাধ্যম হল ব্লগিং। ব্লগিং থেকে আয় হতে কিছুটা সময় লাগে, একবার আয় শুরু হলে আর অন্য কোনো কাজ নাও করতে হতে পারে। আপনার যদি লেখালেখির অভ্যাস থাকে তাহলে যে কোনো বিষয় নিয়ে ব্লগে লিখতে পারেন। ব্লগ হচ্ছে মূলত ওয়েব ডাইরি, এই ওয়েব ডাইরির মধ্যে বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটি ব্লগ তৈরি করা যায়। গুগল ব্লগারে কিংবা ওয়ার্ডপ্রেসে বিনা মূল্যে একটি ব্লগ তৈরি করে যে বিষয়ে আপনার পরিপূর্ণ জ্ঞান আছে, সে বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন। প্রতিদিন নিত্য নতুন আর্টিকেল লিখুন, বিষয়টি যদি ইউনিক এবং বস্তুনিষ্ঠ হয় তাহলে ভিজিটর অবশ্যই আপনার ব্লগে আসবে। যদি আপনার ব্লগটিকে ভালো মানের প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে পারেন এবং আপনার ব্লগে যদি প্রচুর পরিমানে ভিজিটর আসতে থাকে তাহলে এডসেন্স থেকে আপনি দীর্ঘ দিন যাবৎ টাকা উপার্জন করে যেতে পারবেন।
(গ) লেখালেখি করা : আপনি যদি একজন ভালো লেখক হন তাহলে ভালো মানের আর্টিকেল একটি সাইটে লিখতে পারেন। লেখার মান যদি ভালো হয় তাহলে ফ্রিলান্সিংয়ে আপনার লেখার মূল্য অর্থাৎ টাকা উপার্জনের পরিমান দিন দিন বাড়তে থাকবে। এখান থেকে অনেকে মাসে লাখ টাকাও উপার্জন করে থাকে। ইন্টারনেটে সবকিছুই আসলে কনটেন্ট-নির্ভর। ইন্টারনেটে যা কিছু পড়ার রয়েছে, তা কেউ না কেউ লিখেছেন। অর্থাৎ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পার্টটাইম কিংবা ফুলটাইম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রয়েছে। ধরে নেয়া যাক, আপনি অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, এ বিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান আছে। আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লিখতে পারেন। অনলাইন ছাড়াও নানা পত্রপত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিনে লিখতে পারেন। দৈনিক পত্রিকায় পেশাদার কলাম লেখকদের জন্য সম্মানি রয়েছে। বাংলাদেশের বাইরেও নানা পত্রিকায় লিখতে পারেন। আপনি যদি গ্রন্থ ও দস্তাবেজ অনুবাদ করতে পারেন তাহলে আপনি অনুবাদক হিসেবে পার্টটাইম কাজ হতে পারেন। এ জন্য অনেক উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু ভাষার সঠিক ব্যবহার।
(ঘ) প্রশ্ন এবং উত্তর প্রদান : আপনি যদি কোনো বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন, যেমন- গণিত, ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান ইত্যাদি। তাহলে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ইন্টারনেটে অন্যের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন। যদি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারেন, তাহলে ইন্টারনেটে অনেক সাইট আছে যেগুলো আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। তখন ঐ কোম্পানি থেকে আপনি সম্মানি পেতে পারেন।
(ঙ) ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট : বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রোমোশনের কাজে নিয়োজিত। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের মাধ্যমে শিখাও যায়, আবার আয়ও করা যায়। আমরা অনেকেই অনেক ধরনের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে থাকি। যেমন- ফুড ফেস্টিভাল, কর্পোরেট ইভেন্ট, পহেলা বৈশাখের ইভেন্ট। এমন আরো অনেক কিছু, যা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করে পরিচালনা করাই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলোর কাজ।
(চ) ইউটিউবিং : অনলাইন থেকে টাকা উপার্জনের সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ইউটিউবিং। ইউটিউবে একটা চ্যানেল খুলে সেখানে পছন্দ মতো মজাদার ও শিক্ষণীয় ভিডিও আপলোড করে টাকা আয় করা যায়। বিশ্বের জনপ্রিয় ১০ ওয়েবসাইটের মধ্যে ইউটিউব একটি। এই জন্য ভালো মানের ভিডিও ইউটিউব-এ আপলোড করতে হবে, ইদানিং লক্ষ করা গেছে যারা ইউটিউবিং করছেন তারা অনেকেই অশিক্ষিত, ফলে ইউটিউবের মান নিম্মমুখী। শিক্ষিত ও মার্জিত মনের লোকদের দ্বারা ইউটিউবিং হলে এইক্ষেত্রে আপনি আপনি সাফল্য লাভ করতে পারবেন। সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য অথবা যে বিষয় আপনি অভিজ্ঞ সে বিষয়ে বিভিন্ন টিউটরিয়াল তৈরি করেও কাজটি করতে পারেন। নিয়মিত মূল্যবান ও রুচিসম্মত কনটেন্ট বানাতে থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চ্যানেলটি মনিটাইজ হয়ে যাবে।
(ছ) ফেসবুক : শুধু হাই-হ্যালো করবার জন্য ফেসবুক নয়। আপনি চাইলে ফেসবুকের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। ব্যবসার জন্য একটি ফেসবুক পেইজ তৈরি করে তাতে গ্রাহক সংগ্রহ করুন এবং তাদের কাছে প্রোডাক্ট তুলে ধরুন। এছাড়া ফেসবুকে বড় গ্রুপ তৈরি করেও বিভিন্নভাবে অর্থ আয় করা যায়।
(জ) স্মার্টফোনের অ্যাপস তৈরি : দক্ষতা কাজে লাগিয়ে স্মার্ট ফোনের অ্যাপস প্রস্তুতির কাজটি শুরু করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি iOS বা Android এর জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করে এটি অ্যাপস স্টোর বা গুগল পেজে বিক্রি করতে পারেন। অনেক প্রোগ্রামার যারা অ্যাপ্লিকেশন এবং গেম উন্নয়ন করে অর্থ উপার্জন করছে। আপনিও তাঁদের একজন হতে পারেন।
(ঝ) ই-কমার্স : ই-কমার্স বলতে আমরা স্বাভাবিকভাবে বুঝি অনলাইন থেকে কেনাকাটা। এক্ষেত্রে অনলাইনের যে কোনো একটি ওয়েবসাইট থেকে কিনতে হয় এবং সে ওয়েবসাইটের মালিক আপনাকে প্রোডাক্ট পৌঁছে দেয়। আপনি যদি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট বা একটি ই-কমার্স ব্যবসার মালিক হতে চান, আপনার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্টগুলো অনলাইনে ঘরে বসে বিক্রি করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি বিপুল লাভের পাশাপাশি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তাও বাড়াতে পারেন।
(ঞ) প্রোডাক্ট রিভিউয়ার : অনলাইন শপিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় প্রোডাক্ট রিভিউ সাইটগুলোর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। অ্যামাজন কিংবা ই-বের কোনো পণ্য কেনার আগে মানুষ সাধারণত অনলাইনে সেসব পণ্যের রিভিউ পড়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আপনি এসব খ্যাতনামা অনলাইন শপিং জায়ান্টের পণ্যের রিভিউ লিখে অর্থ আয় করতে পারেন। আপনার পর্যালোচনা পড়ে কোনো ক্রেতা অ্যামাজনের পণ্য কিনলে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কমিশন পাবেন। এক জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৮০ শতাংশ ভোক্তা প্রোডাক্ট রিভিউয়ারের মতামত পড়ে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
(ত) বিক্রয়.কম : ছাত্র অবস্থায় ব্যবসা করার জন্য বিক্রয়.কম হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার! হ্যা, বিক্রয়.কম এ একটি সেলার অ্যাকাউন্ট ওপেন করে আপনার পছন্দের আইটেম বিক্রি করতে পারেন। যখন কেউ অর্ডার করবে, তখন কোনো হোলসেল মার্কেটে গিয়ে আপনার প্রোডাক্ট ক্রয় করবেন। এক্ষেত্রে আপনার কোনো বড় ইনভেস্টমেন্টের দরকার হবে না।
(থ) ফটোগ্রাফি ও ভিডিও এডিটিং : আপনার যদি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফির দিকে মনোযোগ থাকে, তবে একটি DSLR ক্যামেরা ম্যানেজ করে ফটোশুট করতে পারেন। বিভিন্ন বিয়ে-বাড়িতে গিয়ে ফ্রি ছবি তুলতে পারেন, দেখবেন টাকা আয়ের পথ খুলে যাচ্ছে! ভিডিও এডিটিংয়ের ধারণাটি খুব বেশি পুরনো না হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। যারা টেন মিনিট স্কুলের, খান একাডেমির ভিডিওগুলো দেখে থাকেন তারা খেয়াল করবেন, প্রতিটি ভিডিও ভালোভাবে এডিট করা। এই এডিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বর্তমানে ভালো ভিডিও এডিটর পাওয়া যায় না, ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফিতে দক্ষ লোকের যথেষ্ট ডিমান্ড রয়েছে।
(দ) হাতের কাজ :কারো হাতের লেখা যদি সুন্দর হয়, বাংলা কিংবা ইংরেজি যে ভাষাই হোক, আপনি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ব্যাংক, বীমা, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে সনদপত্র লিখতে পারেন। নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে, যে সব জায়গায় প্রচুর লেখকের প্রয়োজন। তাই যারা লেখা-লেখিতে ভালো বা চিত্রাঙ্কণ অথবা কার্টুন তৈরিতে দক্ষ, তারা এই গুণটি কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন!
(ধ) টেলিভিশন : প্রতিনিয়তই নতুন নতুন টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের কাজ করেছে, আর একারণে তাদের প্রচুর জনবলের প্রয়োজন হচ্ছে। আপনিও চেষ্টা করলে এ ধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
(ন) ডাটা এন্ট্রি অপারেটর : বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ডাটা এন্ট্রি করার কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। ছাত্র অবস্থায় অবসরে এই কাজটি ঘরে বসে অনায়সে করা যেতে পারে। নিজে কোনো কোম্পানির হয়ে কিংবা যদি আপনার বন্ধু-বান্ধব থাকে তবে তাদের দিয়ে ডাটা এন্ট্রির কাজগুলি করিয়ে গ্রুপ পরিচালনা করতে পারেন।
লেখক: প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, পরিচালক, নায়েম, ঢাকা।