শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের পরস্পরের আপন হতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের পরস্পরের আপন হতে হবে

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রত্যেক মানুষের জীবনে চাওয়া, পাওয়া, ক্ষোভ, দুঃখ ও বেদনা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝেও তা বিদ্যমান। আজকাল বেশিরভাগ মানুষ সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা ব্যক্ত করে থাকেন। তবে সোশাল মিডিয়ায় কাউকে কটাক্ষ বা কারো সম্মানহানি করে কিছু বলা হলে সেটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বিশেষ করে রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লেখা মারাত্মক অপরাধ। মতামত প্রকাশ করতে গিযে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা কাম্য নয়।

বিদ্যালয়ে সাধারণত শিক্ষকের অনুপুস্থিতির ফলে শিশুরা দৌড়াদৌড়ি, হৈ-চৈ, চিৎকার করে থাকে। এর মাধ্যমে শিশু তার মনের ভাব প্রকাশ ও খেলার তৃপ্তি অনুভব করে থাকে। আমরা শিক্ষকরা সাধারণত তাদের কণ্ঠরোধ করার লক্ষ্যে বেত হাতে উত্তেজিত মানসিকতা নিয়ে শিশুর মাঝে অনেকটা দানবের মত উপস্থিত হই। শিশু মনের অভিব্যাক্তি বা খেলাকে আমরা বেশিরভাগ শিক্ষকেরা দুষ্টামি হিসেবে  চিহ্নিত করে থাকি। এ খেলা বা মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা কোনো অবস্থাতে অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে না। অনুরূপভাবে কারো মনে আঘাত পেয়ে থাকলে সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কিছু না লিখে তাদের চাওয়া, পাওয়া, অধিকার, সুখ-দুঃখ সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। এ অপরাধে শাস্তি দেয়া হলে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হরণের পর্যায়ে পড়বে বলে আমি মনে করি।

শিশুর কণ্ঠরোধ না করে তাদের চাওয়া-পাওয়াকে সম্মান দেখিয়ে শিশুর খেলাধূলায় আদর, সোহাগ ভালবাসার মাধ্যমে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। শিক্ষককে তাঁর অন্তরের অনুভূতি দিয়ে ভাবতে হবে, এরা তো আমাদের শিশু বা সন্তান। তাদের চাওয়া, পাওয়া, ভালবাসা, দুঃখ ও বেদনার সাথী তো আমরা একমাত্র শিক্ষকরাই। অনুরূপভাবে ভাবতে হবে কর্মকর্তারা প্রাথমিকে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে, প্রাথমিকের শিক্ষকরা তো আমাদেরই শিক্ষক। এ কর্মকর্তাদের গভীর অনুভূতি দিয়ে ভাবতে হবে, এরা তো আমাদের জাতি গড়া তথা সমাজ পরিবর্তনের মুল ব্যক্তি, সকল শিক্ষিত নাগরিকের গুরু। শিক্ষকদের যেমন ভাবনায় আসতে হবে, সকল শিশু আমাদের সন্তানতুল্য। তদ্রুপ সংশ্লিষ্টদের ভাবনায় আনতে হবে এরা তো আমাদেরই শিক্ষক। তা হলে বয়ে আসবে শিক্ষার সুবাতাস। শিশুর হৃদয় টেনে নেবেন শিক্ষক আর শিক্ষককে অন্তরের অনুভূতি দিয়ে টেনে নেবেন সংশ্লিষ্টরা। তখনই কর্মকর্তাদের ভাবনায় আসবে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে শিক্ষকের মর্যাদা, বেতনভাতা সর্বশীর্ষে। অথচ আমাদের শিক্ষকদের কেন আমাদের চেয়ে কম ?

তখনই সংশ্লিষ্টদের মনের মাঝে নানা ভাবনা উঁকি দেবে, যেমন একই যোগ্যতা নিয়ে ছোট ছোট শিশুদের কঠিন পাঠদান কর্মযজ্ঞটি করেন আমাদের প্রাথমিক শিক্ষকরা। তবে কেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষকদের চেয়ে কম বেতন  ও মর্যাদা পাবেন?
ভাবনায় আসবে, সকল সরকারি কর্মচারীর মতো তাঁরা কেন ৩ বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাচ্ছে না? কেন তাদের দীর্ঘসময় টাইমস্কেল বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ? আমাদের পদোন্নতি বছর বছর হলেও শিক্ষকদের পদোন্নতি কেন একযুগ ধরে বন্ধ? প্রাথমিকের শিক্ষকদের এত ছাত্র থাকতে কেন প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে যেতে হলো? কেন প্রাথমিকের সাথে অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা, কিন্ডারগার্টেনের সময়সূচির বৈষম্য? কেন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রমজানে শনিবার বন্ধ থাকলেও সরকারি প্রাথমিকে দেয়া হলো না? কেন  বৃহস্পতিবার সময়সূচি পূর্বের তুলনায় রমজান মাসে ৩০ মিনিট বেশি? এভাবে সংশ্লিষ্টদের আমার শিক্ষক ভাবনায় মাঝে আরো অনেক কেন প্রশ্ন বেরিয়ে আসবে।

বঙ্গবন্ধু তাঁর শিক্ষককে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে বললেন, ‘তোরা দেখে যা আমার শিক্ষককে। শিক্ষকদের আপন করে ভাবতে হবে। মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে পবিত্র মাহে রমজান ২০ এপ্রিল বিদ্যালয় ছুটির পর দোয়ার অনুষ্ঠান আয়োজন করুন।

সৃষ্টিকর্তা যাতে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ওপর অশেষ রহমত নাজিল করেন। আল্লাহর সর্বশক্তিমান। তাঁর রহমতই একমাত্র ভরসা। জয় বাংলা। প্রভুত্বমূলক মনোভাব শিক্ষক কর্মকর্তার মাঝ থেকে দূর হোক।  

লেখক : সভাপতি  বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ
 

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011957883834839