শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে লাঞ্ছনার খবর পাওয়া গেছে। মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে গিয়ে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসারের মধ্যকার অশুভ আচরণের জেরে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ২৫ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এমএ মান্নানের বিভাগীয় কক্ষে ৩০-৪০ জন কর্মকর্তা শোডাউন দিয়ে প্রবেশ করেন। কর্মকর্তারা তাকে গালাগাল করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং টেবিলে রাখা ফাইনাল পরীক্ষার মূল্যায়নপত্র এলোমেলো করেন।
শনিবার শিক্ষক এমএ মান্নান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে তার বাচ্চার চিকিৎসা নিতে গেলে মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এ ঘটনার জেরে পরদিন কর্মকর্তারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন-কাউন্সিল অ্যাফেয়ার্স শাখার ডেপ–টি রেজিস্ট্রার অলিউল আলম টুয়েল, ভিসি দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার দুলাল মিয়া, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইলিয়াছুর রহমান এবং আওলাদ হোসেন, সিড টেকনোলজি বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইব্রাহিম খলিল খান এবং একই বিভাগের সেকশন অফিসার হিমাংশু মন্ডল, সহকারী রেজিস্ট্রার প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার জান্নাতুল হাসান, এস্টেট শাখার সেকশন অফিসার গৌতম চন্দ্র রায়, বহিরাঙ্গন শাখার উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার রাজীব চন্দ্র বসাক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামরুল হোসেন, কৃষি অর্থনীতি বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুল হামিদ, অর্থ ও হিসাব শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুল হান্নান, একই শাখার সেকশন অফিসার শহিদুজ্জামান শাওন এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাজমুল আহসান বেগ, শারীরিক শিক্ষা শাখার সেকশন অফিসার নির্মল চন্দ্র দে এবং উপ-পরিচালক নূর-ই-আলম মামুন, স্টোর শাখার সহকারী স্টোর অফিসার আবুল কালাম আজাদ, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সেকশন অফিসার মাহমুদুল হাসান ও সেকশন অফিসার রেজওয়ান জিহাদ।
শেখ কামাল অনুষদ ভবনে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী কিছু শিক্ষার্থী বলেন, সেদিন ৩০-৪০ জন কর্মকর্তা শোডাউন নিয়ে অনুষদে প্রবেশ করেন এবং মান্নান স্যারের চেম্বারে যান। পরে চেম্বার থেকে অনেক জোরে জোরে আওয়াজ আসছিল। সহকারী অধ্যাপক মান্নান বলেন, সোমবার আমার পরীক্ষা শেষে ডিপার্টমেন্টে আসতেই ৩০-৪০ জন অফিসার এসে মারমুখী হন। পরীক্ষা নেওয়ার ফাইনাল খাতাসহ আমার রুমের আসবাবপত্র ওলটপালট করেন এবং গালাগাল করেন। এ সময় আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে তারা আমার মোবাইল কেড়ে নেন এবং যাওয়ার সময় সেটি ছুড়ে মারেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক বিচার পাওয়ার জন্যে ইতোমধ্যেই আমার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।
মেডিকেল সেন্টারের অফিসার ডা. খন্দকার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মান্নান স্যার এবং আমার মধ্যে ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত। এর কারণ ও ব্যাখ্যা দিতে আমি অপারগ। শনিবার আমার কার্যদিবস না থাকলেও উপাচার্য মহোদয়ের অনুরোধে আমি উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। এদিন মান্নান সাহেব এবং রাহাত নামের তার এক শিক্ষার্থী আমাকে স্টুপিড বলে সম্বোধন করেন এবং দুজনেই উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা শুরু করেন। তখন আমি তাদের আর কিছু বলার সুযোগ পাইনি। সোমবার কর্মকর্তারা শিক্ষকের রুমে গিয়ে হেনস্তা করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শহিদুল ইসলাম জানান, কর্মকর্তারা ৫-১০ জন আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাদের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে নিষেধ করেছি। পরে কি হয়েছে জানি না। সোমবার রেজিস্ট্রার আমাকে অভিযোগপত্র দিতে বললে আমি ওইদিন বিকালে একটি অভিযোগপত্র রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম এ কথা অস্বীকার করে বলেন, তার অভিযোগপত্র আমি পেয়েছি। কিন্তু এমন কিছু জমা দেওয়ার জন্য আমি তাকে বলিনি।
অভিযুক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইলিয়াসুর রহমান বলেন, আমি এ ঘটনা সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। কাউন্সিল অ্যাফেয়ার্স শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার অলিউল আলম টুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হারুনুর রশীদ বলেন, এ রকম একটি বিষয় কখনোই প্রত্যাশিত না। তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলা কঠিন। উপাচার্য স্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর তদন্ত হলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।