করোনার ছোবলের প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মতো প্রাথমিকের জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। প্রাথমিকে পর্যায়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এক্ষেত্রে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীকে দেয়া হবে অগ্রাধিকার। কর্মকর্তারা বলছেন, স্কুল খোলার পর ডিসেম্বর পর্যন্ত যতটুকু সিলেবাস পড়ানো সম্ভব সেই চিন্তা মাথায় রেখেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে সকল শ্রেণীতে অটো প্রমোশন দেয়া হয়েছে। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব হয়নি। জেএসসি-এসএসসির ফলের ভিত্তিতে বিশেষ মূল্যায়নের মাধ্যমে ফল দেয়া হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের। করোনা কারণে ইতোমধ্যেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সিদ্ধান্ত অনুসারে এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি প্রথম বারের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আগামী এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমাসের পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে এনসিটিবি। তবে সিলেবাসের পরিধি বড় হওয়ায় বিভিন্ন মহলের সমালোচনার প্রেক্ষাপটে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি দ্রুত সেই সিলেবাস আরও সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ দেন। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য সিলেবাস কমিয়ে আবার পুনর্বিন্যাস করা হয়।
এনসিটিবির তৈরি এই পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এনসিটিবির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সিলেবাস পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের এসএসসির ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসির ৮৪ কর্মদিবস শ্রেণীকক্ষে সরাসরি ক্লাস নেয়া হবে। ওই সময়টুকুতে যতটুকু পড়ানো হবে, পরীক্ষায় ততটুকুর ভিত্তিতেই প্রশ্ন হবে।
নেপের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ শাহ আলম বলেন, বছরের যে সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন থেকেই কিভাবে ক্লাস রুমে পাঠদান করানো হবে তার একটি রূপরেখা এনসিটিবিকে পাঠিয়েছি। রূপরেখাটি দেখে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করতে এনসিটিবিকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরও এ রকম একটি রূপরেখা আমরা করেছিলাম। যা করোনার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবারও সে রকম সিলেবাস হবে। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এ ধরনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে নেপ। ওই সিলেবাসে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নবেম্বর মাস ধরে সিলেবাস প্রকাশ করা হয়। যদিও গত বছর স্কুল খোলা সম্ভব হয়নি। ওই সময় ১ নবেম্বর থেকে ৩৯ দিনের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে নেপ। সংক্ষিপ্ত এ পাঠ পরিকল্পনা চলার কথা ছিল ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনার কারণে ১ নবেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলায় নেপ আবার নবেম্বর ডিসেম্বর মাসের জন্য ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে। যদি ১৫ নবেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয় তাহলে এ সিলেবাস বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে ওই সময় বলা হয়েছিল। অন্যথায় প্রাথমিকের প্রত্যেক শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব মূল্যায়নে পঞ্চম শ্রেণীর সনদ দেবে। পরবর্তীতে করোনার কারণে সেই পথেই যেতে হয়।
মাদ্রাসায় নিজ উদ্যোগে অনলাইন ক্লাস চালুর নির্দেশ : মাদ্রাসাগুলোতে নিজ নিজ উদ্যোগে অনলাইন ক্লাস চালু করার নির্দেশ দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। অধিদফতর থেকে সকল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সুপারকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সব জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসে এ নির্দেশনার বিষয়ে জানানো হয়েছে। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনার চলমান ছুটি কয়েক দফা বাড়ানোর পর আবারও আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।