সংবিধান বহির্ভূতভাবে চলছে সিলেটের কওমি মাদরাসা বোর্ড - দৈনিকশিক্ষা

সংবিধান বহির্ভূতভাবে চলছে সিলেটের কওমি মাদরাসা বোর্ড

সিলেট প্রতিনিধি |

অভিযোগ উঠেছে, সংবিধান বহির্ভূতভাবে চলছে সিলেট অঞ্চলের কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ‘আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ’। শুধু তাই নয়, বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। বোর্ডের গেল নির্বাচনে ঘটেছে জাল-জালিয়াতির ঘটনাও।

৮০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ বোর্ডে আছে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। এ নিয়ে সিলেটের মাদরাসাগুলোর পক্ষে শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীসহ কয়েকজন শীর্ষ আলেম বোর্ডের সুনির্দিষ্ট নানা অনিয়ম তুলে ধরে গত ৯ মে মহাসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু চার মাসেও কোনো সুরাহা হয়নি। বরং জোর করে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

লিখিত অভিযোগে আরও স্বাক্ষর করেন কৌড়িয়া মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা মুহসিন আহমদ ও সোবহানীঘাট মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা আহমদ কবীর। ১০ পৃষ্ঠার অভিযোগের কপিটি প্রতিবেদকের হাতে পৌঁঁছেছে। তবে বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছিরের দাবি, সর্বশেষ মজলিসে আমেলার বৈঠকে এসব অভিযোগের সুরাহা হয়েছে। জানা গেছে, ১৯৪১ সালে গঠিত এ বোর্ডের অধীনে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার প্রায় ৭৯৫টি মাদরাসার অর্ধলক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছেন। কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে এ বোর্ডের সম্পর্ক থাকবে না- এমন বিধান রয়েছে পরিচালনার জন্য মুদ্রিত সংবিধানে। তবু বোর্ডের বর্তমান সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন বিএনপি জোট থেকে সম্প্রতি বের হওয়া রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একই দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল বছির।

বোর্ডের বিগত নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে শূরা গঠন ও অন্যান্য কার্যক্রমে নিজস্ব সংবিধান লঙ্ঘন ও অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তাদের পছন্দের মাওলানা ইউসুফ খাদিমানী, হাফিজ মাওলানা ফখরুজ্জামান ও মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরীকে বোর্ডে পুনর্বাসনে মরিয়া হয়ে ওঠেন। অথচ এ তিনজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়মের কথা অভিযোগে বলা হয়েছে। রামধা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ইউসুফ খাদিমানী বোর্ডের অডিটর হওয়ায় তিনি নিজে অডিট না করে নিজের স্বাক্ষর অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে জালিয়াতি করে অডিট করান। তার মাদরাসা র শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন জাক্কারকে দিয়ে সিলেট নগরীর বাদামবাগিছা মাদরাসা অডিট করান। বিভিন্ন মাদরাসা ও বোর্ডের অডিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। গেল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সাব-কমিটির সদস্য হয়েও তিনি এক প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজও করেন ও নির্বাচনের দিন জাল ভোটদানে সহযোগিতাও করেন।

মাওলানা ইউসুফ খাদিমানী এ বিষয়ে বলেন, সব অভিযোগের ব্যাপারে বোর্ডের মহাসচিবের কাছে লিখিত জবাব দিয়েছি। আপনারা মহাসচিবের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন।

বোর্ডের সংবিধান অনুযায়ী অন্য কোনো জাতীয় বোর্ডে কারও পরিচালনাধীন মাদরাসা ও তিনি অন্তর্ভুক্ত হলে তিনি এদারার শূরা, আমেলা এবং কর্মকর্তা হতে পারবেন না। অথচ শহরতলির বড়শালার জামিয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও সভাপতি হাফিজ মাওলানা ফখরুজ্জামান এদারার কর্মকর্তা হতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। কিন্তু এ মাদরাসা দীর্ঘদিন বেফাকের অন্তর্ভুক্ত। বোর্ডের রচনা কমিটির দায়িত্বে থাকাকালে রেজুলেশন পাশ কাটিয়ে নুরানী বই প্রণয়ন করেন। রচনায় ভুল হওয়ায় ছাপানোর পর ২১ টি বই বাতিল করা হয়। পরে সংশোধন করে আবার বই ছাপানোতে বোর্ডের প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। গেল শিক্ষা বছরের ক্যালেন্ডার ও সিলেবাস বারবার ভুল ছাপিয়ে বোর্ডের সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্রয়ে অনেক অর্থ নষ্ট করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

হাফিজ মাওলানা ফখরুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের কাছে জিজ্ঞেস করুন। অথবা বোর্ডের সভাপতি ও মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

গেল বছর সুনামগঞ্জের শাখাইতি মাদরাসার প্রতিনিধি হিসাবে মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী পদাধিকারবলে শূরা ও পরে আমেলার সদস্য হন। চলতি বছর এ সুযোগ না পেয়ে তিনি মুরাদপুর মাদরাসার সহকারী মুহতামিম পদ নিয়ে এদারায় আবেদন করেন ও কৌশলে দু’কমিটিতেই স্থান করে নেন। অথচ মুরাদপুর মাদরাসার শিক্ষক হাজিরা খাতা ও ক্লাস রুটিনে তার নাম নেই। এছাড়া বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ও তৈয়বুর রহমান মিলে সুনামগঞ্জের ৭টি অঞ্চলকে ওই কমিটি থেকে বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ আছে। মাওলানা তৈয়বুরও জমিয়তের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

মাওলানা তৈয়বুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মূলত নির্বাচনে পরাজিতরা এ ধরনের বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা উপজেলা থেকে বোর্ডের কমিটিতে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তিতে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ সম্পাদক তার ছেলে মাওলানা মিসবাহ উদ্দিনকে সংবিধান বহির্ভূতভাবে কমিটিতে স্থান দেন।

মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক জানান, আমরা তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। কোনো প্রতিকার পাইনি। বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আমরা চাই, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি সাংবিধানিকভাবে পরিচালিত হোক।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছির বলেন, সংবিধানে আছে বোর্ড রাজনীতিমুক্ত থাকবে। বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মরহুম আব্দুল করিম (রহ.) কৌড়িয়া আজীবন জমিয়তের সভাপতি ছিলেন। এতদিন পরে কেন এসব প্রশ্ন? মজলিশে শূরা গঠনে ১১ সদস্যের উপস্থিতিতে ১২৫ জনের কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগকারী মাওলানা আহমদ কবীরের ছোটভাই মাওলানা আহমদ ছগীরকে নিজের প্রস্তাবে সদস্য বানানো হলেও সেটি অভিযোগে নেই কেন প্রশ্ন রাখেন মহাসচিব।

বোর্ডের সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন দাবি করেন, এদারার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি করতে পারবেন না এরকম কোনো কিছু সংবিধানে নেই। কাউকে বোর্ডে পুনর্বাসন করা হয়নি বলেও দাবি তিনি।

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039331912994385